Advertisement
E-Paper

হামলার ভয়ে নামলই না বামেরা

ধর্মঘট সমর্থনকারী ও প্রতিরোধকারীদের মিছিল ও পাল্টা মিছিলে বুধবার পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তবে বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের দিনও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া বড় কোনও গোলমাল হয়নি। পথেঘাটে ধর্মঘটের সমর্থক সিপিএম ও বিজেপির তেমন মিছিল দেখা না গেলেও কিছু জায়গায় ধর্মঘট প্রতিরোধকারী তৃণমূলের বাইকবাহিনীর টহল দেখা গেল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০২:২৭
বন্‌ধের বিরোধিতায় তৃণমূলের বাইকবাহিনী আদ্রায়। —নিজস্ব চিত্র।

বন্‌ধের বিরোধিতায় তৃণমূলের বাইকবাহিনী আদ্রায়। —নিজস্ব চিত্র।

ধর্মঘট সমর্থনকারী ও প্রতিরোধকারীদের মিছিল ও পাল্টা মিছিলে বুধবার পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তবে বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের দিনও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া বড় কোনও গোলমাল হয়নি। পথেঘাটে ধর্মঘটের সমর্থক সিপিএম ও বিজেপির তেমন মিছিল দেখা না গেলেও কিছু জায়গায় ধর্মঘট প্রতিরোধকারী তৃণমূলের বাইকবাহিনীর টহল দেখা গেল। যদিও এতকিছুর পরেও এ দিন জেলার রাস্তায় বেসরকারি বাস নামাতে পারেনি শাসকদল ও জেলা প্রশাসন। তার জেরে নিতান্ত প্রয়োজনে যাঁরা বাইরে বেড়িয়েছিলেন, সেই আমজনতাকে বাস না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হল।

বুধবার কাশীপুর, মানবাজার সহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্মঘট সমর্থনকারী সিপিএম ও প্রতিরোধকারী তৃণমূল দু’পক্ষই মিছিল ও পাল্টা মিছিল বের করে। এ নিয়ে কিছু এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশও এ দিন কিছু ঘটার আশঙ্কা সজাগ ছিল। কিন্তু পুরুলি্য়া-বোকারো সড়কে পুরুলিয়া মফস্সল থানার মাগুড়িয়া এবং পুরুলিয়া-মানবাজার রাস্তায় কেন্দা থানা এলাকার গোবিন্দপুরে ধর্মঘটের সমর্থনকারীদের অবরোধকে কেন্দ্র করে সামান্য গোলমাল ছাড়া বিশেষ কিছু ঘটেনি। দু’জায়গাতেই পুলিশ অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। গোবিন্দপুরে ধর্মঘটীদের হটাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি বাধে। পুলিশকে নিগ্রহও করা হয় বলে অভিযোগ। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিন সকালে মানবাজারের ইন্দকুঁড়ি মোড়ে টাটানগরগামী কয়েকটি ট্রাক রাস্তায় আটকে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সেখানে তৃণমূল কর্মীরা যান। দু’পক্ষের স্লোগানে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে পুলিশ গিয়ে আটকে থাকা লরিগুলি বের করে দেয়। সাঁওতালডি থানার ইছর নদীঘাটে ফেরি পরিষেবা বন্ধ করার জন্য এ দিন সকালে ধর্মঘটী সিটুর কর্মী-সমর্থকেরা সেখানে অবস্থান শুরু করেন। পুলিশ গিয়ে তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। কয়েকজনকে আটকও করা হয়। যদিও জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘কোথাও তেমন কোনও অঘটন ঘটেনি। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

আদ্রায় সকালের দিকে তৃণমূলের বাইক বাহিনী ধর্মঘটের বিরোধিতায় মিছিল করে। আদ্রা নর্থ এলাকায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ের কাছাকাছি একটি রিকশায় মাইক বাঁধা ছিল। সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা ধর্মঘট সমর্থন করার আহ্বান জানিয়ে মিছিল করার জন্যই রিকশায় মাইক বেঁধেছিলেন। কিন্তু তাঁরা আসার আগেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা সেই রিকশা নিয়ে নিজেরাই ধর্মঘট প্রতিরোধের প্রচারে বেরিয়ে পড়েন। এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘মানুষ তো সকাল থেকেই পথে নেমেছেন। তা দেখেও ধর্মঘটের জন্য আহ্বান জানোনোর মানে কী?’’ এ দিন বলরামপুরেও সকালের দিকে ধর্মঘট প্রতিরোধকারী তৃণমূলের বাইকবাহিনী মিছিল করে। তাদের দীর্ঘ মিছিল বলরামপুর এলাকা পরিক্রমা করে। এখানেও ধর্মঘটের সমর্থকদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি।

ধর্মঘটের কবলে পড়েনি ট্রেন চলাচল। এ দিন সকাল থেকেই ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। পুরুলিয়া শহরের অফিস-কাছারি চললেও রাস্তায় লোক চলাচল কম ছিল। শহরে এই ধর্মঘটকে ঘিরে স্বাভাবিক জনজীবনে কোনও প্রভাব পড়েনি। সকাল থেকেই দোকানপাট খোলা ছিল। এ দিন সকালে ধর্মঘটের প্রতিরোধী তৃণমূলকে রাস্তায় নামতে দেখা গেলেও ধর্মঘটীদের কোনও মিছিল চোখে পড়েনি। রঘুনাথপুর মহকুমার আদ্রা, রঘুনাথপুর, চেলিয়ামা, সাঁওতালডিহি, নিতুড়িয়া, অন্যদিকে জঙ্গলমহলের বলরামপুর, বরাবাজার, ঝালদা, কোটশিলা, জয়পুরে স্বাভাবিকই ছিল জনজীবন। বেসরকারি বাস না চলার জন্যই এই জায়গাগুলিতে খানিকটা প্রভাব পড়ে। মানবাজার, বান্দোয়ান ও বোরোতে ধর্মঘটের কিছুটা প্রভাব পড়ে। তবে সরকারি বাস চললেও বেসরকারি বাস না থাকায় যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। সকালে পুরুলিয়া শহরের রাঘবপুর মোড়ে বাসের অপেক্ষায় থাকা এক শিক্ষিকা মধুমিতা পাল বললেন, ‘‘বাসের দেখা নেই। প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছি।’’ হুড়ার লালপুর মোড়ে সকাল থেকেই বাসের অপেক্ষায় ছিলেন পুরুলিয়া মফস্সল থানার চিরুমার্চা গ্রামের বাসিন্দা যশোদা মাহাতো ও সুমিত্রা মাহাতো। তাঁরা দু’জনেই পুঞ্চা থানার দেলাং গ্রামে এক আত্মীয়ের বিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় থেকে তাঁরা বলেন, ‘‘কোনও মতে একটি অটো করে এই মোড়ে এসেছি। সকাল থেকে বাস নেই। কী ভাবে যে বাড়ি ফিরব ভেবে পাচ্ছি না।’’ লালপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে হুড়া থানা এলাকার বড়গ্রাম গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গলা সহিস জানান, তিনি পুরুলিয়া হয়ে রামনগর যাবেন। কিন্তু সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অথচ বাসের দেখা নেই। আড়শা থেকে এসেছিলেন বিনোদ কুমার। পুরুলিয়া শহরের বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন পরিচিতদের অপেক্ষায়। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে। এখানে আমার কয়েকজন আত্মীয়ের আসার কথা। কিন্তু বাস নেই বলে তাঁরা আসতে পারেননি। খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছি।’’ বিপাকে রিকশাচালকেরাও। পুরুলিয়া শহরের রিকশাচালক দিলীপ সহিস বলেন, ‘‘বাস চলেনি বলে লোকজনও কম। তাই সওয়ারিও কম পেলাম। দিনটা নষ্ট হল।’’ জেলা বাসমালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘জেলার ৪৭টি রুটেই এ দিন বেসরকারি বাস পথে নামেনি। আমরা বাস চালানোর অনুরোধ জানালেও বাসের ক্ষতির আশঙ্কায় কেউ বাস নামাতে চাননি।’’

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলার সরকারি অফিসগুলি ৯৬.৪ শতাংশ হাজিরা ছিল।’’ সকালের দিকে জেলাশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে হাজিরা সংক্রান্ত বিষয়ের খোঁজখবর নেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। অফিসে আসতে কর্মীদের কোনও অসুবিধে হয়েছে কি না তাও জিজ্ঞেস করেন মন্ত্রী। পরে জেলাশাসকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করে বেরিয়ে যান তিনি। পরে তিনি শুধু বলেন, ‘‘উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছিলাম।’’ এ দিন সকালে জেলা শিক্ষা দফতরে হাজিরা খাতা পরিদর্শনে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোও। তাঁরা দু’জনেই দাবি করেন, ‘‘সর্বত্রই জনজীবন স্বাভাবিক ছিল।’’

বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘সাঁতুড়ি, আনাড়া, কাঁটাডি, গোলকুণ্ডা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় তাঁরা সকালের দিকে অবরোধ করেন। মানবাজার, ঝালদা, সাঁতুড়ি, আনাড়া, কোটশিলা, বান্দোয়ানে ভাল সাড়া মিলেছে।’’ সিপিএমের পুরুলিয়া শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক কৌশিক মজুমদারের দাবি, ‘‘বুধবার বিকেলে ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার চালানোর সময় আমাদের এক কর্মীকে জয়নগরে মারধর করা হয়। এ দিন আমাদের কাছে খবর ছিল ওরা মিছিলে পাল্টা হামলা করবে তাই পথে নামা হয়নি।’’

purulia BJP Trinamool transport strike Kashipur Balarampur Jhalda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy