Advertisement
E-Paper

হাসপাতালে নিখোঁজ রোগী, মিলল দেহ

মৃত ব্যক্তির হাতে স্যালাইনের চ্যানেল দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরাই তদন্তকারীদের বলেন, হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়া কোনও রোগী হতে পারেন মৃত ব্যক্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০০:০১

রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল রামপুরহাট হাসপাতালের এক রোগীর। পুলিশ জানিয়েছে, তপন লেট (৪০) নামে ওই রোগীকে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রামপুরহাট থানার শোঁওসা গ্রামের বাসিন্দা ওই রোগীর শনিবার সকালেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি (ইউএসজি) হওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার মাঝ রাত থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান হাসপাতালের দোতলায় মেডিসিন বিভাগের শয্যা থেকে। এ দিন সকালে স্থানীয় বাটাইল মোড় সংলগ্ন মাঠের মধ্যে নির্মীয়মাণ একটি বাড়ির মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা একটি ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে রামপুরহাট জেলা হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘একটি জামা দিয়ে ফাঁস দেওয়া ছিল। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যার ঘটনা মনে হলেও ময়নাতদন্তের পরেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’’ একই সঙ্গে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর আত্মীয়েরা। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও তৈরি করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির হাতে স্যালাইনের চ্যানেল দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরাই তদন্তকারীদের বলেন, হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়া কোনও রোগী হতে পারেন মৃত ব্যক্তি। এদিকে শুক্রবার রাতে রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হওয়ার পরে ওই রোগীর আত্মীয়েরা কাছাকাছি অঞ্চলে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়। পুলিশ তপনবাবুর পরিবারের লোকেদের ওই নির্মীয়মাণ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেহটি শনাক্ত করায়। মৃত ব্যক্তির ভাইপো বাঁকারায় লেটের অভিযোগ, ‘‘প্রস্রাবে জ্বালা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কাকা। ইউএসজি করানোর কথা ছিল শনিবার সকালে। শুক্রবার রাতে কাকার শয্যার পাশে বসেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত একটা নাগাদ দেখি কাকা নেই। নার্সদের বললাম। নিরাপত্তা কর্মীদের বললাম। কেউ কিছু বলতে পারল না। কি করে হাসপাতাল থেকে একজন রোগী বেরিয়ে গেলেন আর কেউ টের পেল না, আশ্চর্যের।’’ রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে সাত জন পুলিশকর্মী-সহ ২৪ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকা সত্ত্বেও কিভাবে রোগী হাসপাতালের বাইরে চলে গেলেন তার সদুত্তর দিতে পারেননি কেউ। হাসপাতালে শুক্রবার রাতে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীদের দাবি, ‘‘কোনও রোগী যদি হাতের স্যালাইন চ্যনেল ঢাকা দিয়ে চলে যায় তাহলে আমরা কি করব?’’

হাসপাতাল সূত্রেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলা হয়, প্রয়োজনীয় ওষুধ, ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে স্যালাইন চালু করা হয় রোগীর। তাঁর ইউএসজির রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত একটায় জানা যায় রোগী তাঁর শয্যা থেকে নিখোঁজ। প্রথমে হাসপাতাল চত্বর খুঁজে দেখা হয়। সকালেই খাতায় কলমে রোগীকে নট ফাউন্ড দেখিয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। বেলা ১১টা নাগাদ ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়। হাসপাতালের আধিকারিকেরা জানান, পুলিশ কর্মীরা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন ভবন-সহ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এবং হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগ, সংক্রামক বিভাগগুলিতে নজর রাখেন। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ২৪ জন বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী টহল দেন। শুক্রবার রাতেও হাসপাতালের দুটি গেটে পাঁচজন বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। তাঁদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কেমন করে একজন রোগী হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাসপাতালের আধিকারিক (এমএসভিপি) সুজয় মিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের গাফিলতি না থাকলে একজন চিকিৎসাধীন রোগী কী ভাবে হাসপাতালের বাইরে চলে যাবেন? ঘটনার তদন্তে হাসপাতালের ডেপুটি সুপারকে চেয়ারপার্সন করে পাঁচ জনের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’’ আগামী বুধবার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নিরাপত্তা কর্মী-সহ নার্সিং সুপারিন্টেডেন্ট এবং অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন তিনি।

Crime Hospital Police Dead Body
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy