Advertisement
E-Paper

ডাক্তারকে ধরে রাখতে বিক্ষোভ

ডাক্তারবাবুর বদলি আটকাতে বুধবার দল বেঁধে চার-পাঁচটা গ্রামের বাসিন্দারা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন খাতড়ার আড়কামায় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দিনভর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘেরাও করে রাখা হয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ স্বাস্থ্য কর্মীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ক’দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, নতুন আসা ডাক্তারবাবুকে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের দাবি, কয়েক মাস আগে ওই ডাক্তারবাবু আসার পর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে হুটহাট রোগীদের বড় হাসপাতালে স্থানান্তর করা কমে গিয়েছে। তাই ওই ডাক্তারবাবুর বদলি আটকাতে বুধবার দল বেঁধে চার-পাঁচটা গ্রামের বাসিন্দারা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন খাতড়ার আড়কামায় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দিনভর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘেরাও করে রাখা হয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ স্বাস্থ্য কর্মীদের।

ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের গোড়ায় খাতড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে যোগ দেন তাপস মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে আসেন সুমন ষন্নিগ্রহী। সদ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর সাময়িক ভাবে সুমনকে সিমলাপাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। সে খবর এলাকায় জানাজানি হতেই ক্ষোভ ছড়ায়। এ দিন তা প্রবল অসন্তোষের চেহারা নেয়। সকাল থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে আড়কামা, গোপীসাগর, সমলা, বেনা, চাকা-সহ বিভিন্ন গ্রামের বেশ কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

বাঁকুড়া জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “সিমলাপালে চিকিৎসক কম রয়েছে বলেই সুমনকে কিছু দিনের জন্য সেখানে পাঠানো হচ্ছে। এটা মোটেও পাকাপাকি বদলি নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এ নিয়ে ভুল বার্তা গিয়েছে।”

যদিও তা মানতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের দাবি, সুমন আন্তরিক ভাবে রোগীদের চিকিৎসা করেন। তিনি ছোটখাটো সমস্যায় অন্য হাসপাতালে রোগীদের স্থানান্তরও করেন না। সে কারণে তাঁর উপরে এলাকার মানুষজনের ভরসা তৈরি হয়েছে। গত কয়েক মাসে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নয়নও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে সুমনকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসায় তা মানতে পারছেন না বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এক বার বদলি করা হলে, পরে যে তাঁকে ফেরানো হবে, সে নিশ্চয়তা কোথায়?

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অংশুমান পতি, সঞ্জয় পতি, অশোক পতিরা বলেন, “আগে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছোটখাটো অসুখ নিয়ে চিকিৎসার জন্য এলেও খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেওয়া হত। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সুমন ভাল করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। হাসপাতালেরও উন্নতি হয়েছে।” তাঁদের আশঙ্কা, সুমন চলে গেলে পরিস্থিতি আগের মতোই হয়ে যাবে। তাই তাঁর বদলির নির্দেশ তাঁরা মানবেন না।

ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে এখানে চার জন চিকিৎসক রয়েছেন। কয়েক মাস আগেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শয্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ করা হয়েছে। খাতড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “সকাল থেকেই ঘেরাও হয়ে রয়েছি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি সুমনকে কিছু দিনের জন্য সিমলাপালে পাঠানো হচ্ছে। পরে উনি ফিরে আসবেন। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই আন্দোলন বন্ধ করছেন না।” বিকেল পর্যন্ত মুক্ত হননি তাঁরা।

সিমলাপালের ভূতশহরের ছেলে সুমন এসএসকেএম থেকে এমবিবিএস করেছেন। তাঁর প্রথম কাজে যোগ দেওয়া খাতড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রই।

তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি গ্রামের ছেলে। তাই গ্রামের মানুষের আর্থিক সমস্যা ভাল করেই বুঝি। তাই বাড়ির কাছে রেখেই তাঁদের যতটা সম্ভব চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি।’’ তাঁকে আটকাতে গ্রামবাসীদের এই বিক্ষোভ দেখে সুমনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অল্প ক’দিনে এত মানুষের ভালবাসা পেয়ে ভাল লাগছে। তবে ঘেরাও বিক্ষোভ করে সবাইকে আটকে রাখাও ঠিক নয়। গ্রামবাসীদের বোঝাচ্ছি।’’

আগে স্কুলে শিক্ষক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, এমনকি কৃষি আধিকারিকের বদলি রুখতে গ্রামবাসীদের এমনই বিক্ষোভ দেখেছে বাংলা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, ‘‘সরাসরি মানুষের কাছাকাছি কাজ করা আধিকারিক ও কর্মীরা আন্তরিক হলে, তাঁদের ধরে রাখার চেষ্টা সব সময়েই করেন বাসিন্দারা। সবাই সেই চেষ্টা করলে, সরকারি পরিষেবাও সবার কাছে পৌঁছবে।’’

Treatment Doctor Medical Centre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy