Advertisement
০৬ মে ২০২৪

তেড়ে আসছে ষাঁড়, আতঙ্ক আনাড়ার রেল-বাজারে

বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কেউ খাবার না দিয়ে গায়ে জল ঢেলে দিলেই শিং উঁচিয়ে তাঁর দিকে তে়ড়ে যাচ্ছে সেই যাঁড়। জোরালো গুঁতোয় জখমের তালিকাও বাড়ছে ক্রমশ। এখনও পর্যন্ত কমবেশি দশ জন গুঁতোয় আহত হয়েছেন।

মূর্তিমান: এই ষাঁড়ের উপদ্রবেই তটস্থ আনাড়া। নিজস্ব চিত্র

মূর্তিমান: এই ষাঁড়ের উপদ্রবেই তটস্থ আনাড়া। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আনাড়া শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

তাগড়াই চেহারা। গদাইলস্কর চাল। দূর দেখে তাকে দেখলেই তটস্থ লোকজন। সকাল ও বিকালে আনাড়া বাজারে হাজির হয়ে ‘তোলা’ নিয়ে যাচ্ছে সে।

এত দিন এ ভাবেই চলছিল। মানিয়ে নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু সম্প্রতি কেউ কেউ তার মর্জি মতো চলতে না চাওয়ায় মেজাজ হারিয়ে মারধর শুরু করেছে। আনাড়া রেল বাজার বাস্তবিকই এই গুন্ডা ষাঁড়ের উৎপাতে অস্থির।

আনাড়া রেলওয়ে মার্কেটে মাস তিনেক আগে এই ষাঁড়টি প্রথম দেখা যায়। সকাল ও বিকালে বাজারে ঢুকে আনাজ বিক্রেতা বা অন্যান্য দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। লোকে খাবার এগিয়ে দিত। এ ভাবেই চলছিল। তাকে বাজারে ঢুকতে দেখলেই ব্যবসায়ীরা বুঝে যেতেন ‘তোলা’ দেওয়ার সময় এসেছে। দশাসই চেহারার ষাঁড়টি এত দিন সেই অর্থে উপদ্রব করত না। কিন্তু সম্প্রতি তার আচরণ বদলে গিয়েছে। তবে সে জন্য তাকে দোষ দিতে নারাজ অনেকে।

বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কেউ খাবার না দিয়ে গায়ে জল ঢেলে দিলেই শিং উঁচিয়ে তাঁর দিকে তে়ড়ে যাচ্ছে সেই যাঁড়। জোরালো গুঁতোয় জখমের তালিকাও বাড়ছে ক্রমশ। এখনও পর্যন্ত কমবেশি দশ জন গুঁতোয় আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের আবার হাত ভেঙেছে। এক দিন বাজারে ষাঁড়টি দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক লটারি বিক্রেতা। যাঁড়ের পিঠে এক ঘা মেরে তিনি রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করতেই বিপত্তি। শিং উঁচিয়ে তেড়ে গুঁতিয়ে হাত ভেঙে দেয় ওই লটারি বিক্রেতার।

সম্প্রতি পুলিশের আনাড়া ফাঁড়ির মেসে গিয়ে একজনকে গুঁতো মেরে ঘায়েল করেছে সে। এক বিকালে ঘুরতে ঘুরতে ষাঁড়টি আনাড়া ফাঁড়ির সংলগ্ন পুলিশের মেসে গিয়ে ঢোকে। সেখানে ছিল তিন জন এনভিএফ ও পুলিশের এক গাড়ির চালক। গায়ে জল ঢেলে পিঠে চাপড় মেরে মেস থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। সেই চালককে গুঁতিয়ে তাঁকে অল্পবিস্তর জখম করে যাঁড়টি।

দিন দিন যা হচ্ছে, তাতে ওই ষাঁড়ের উপদ্রবে কার্যত ঘুম ছোটার অবস্থা আনাড়া বাজারের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের। শাসকদলের আনাড়া অঞ্চলের সভাপতি সজল দেওঘরিয়ার কথায়, ‘‘এমনিতে যাঁড়টা কারও ক্ষতি করছে না। কিন্তু কেউ তাকে উত্ত্যক্ত করলেই গোঁতাগুঁতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।”

আনাড়া রেল বাজারে প্রতি দিনই আনাজ বিক্রি করতে পাশের জোড়বেড়িয়া, ধোনজোড়, বাগতবাড়ি-সহ ছয়-সাতটি গ্রাম থেকে শতাধিক চাষি আসেন। তোলা আদায়ে ষাঁড়টির প্রথম লক্ষ্য ওই আনাজ বিক্রেতারাই। তাঁদের মধ্যে হারাধন বাউরি, মহেশ মাহাতো, কালীপদ বাউরি প্রভৃতি আনাজ বিক্রেতারা জানান, প্রথম প্রথম একটা-দু’টো আলু বা আনাজ দিলেই চলে যেত ষাঁড়টি। এখন অবশ্য তার চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।

তাঁরা বলেন, ‘‘আগে আনাজ দেওয়ার পরে দোকানের সামনে থেকে না নড়লে গায়ে জল ঢেলে দিলে চলে যেত। এখন সে সবের তোয়াক্কা করছে না। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। জোর করে সরিয়ে দিতে গেলে উল্টে বিপত্তি হচ্ছে। শিং উঁচিয়ে তেড়ে আসছে। কয়েকজনকে গুঁতিয়ে জখম করেছে।’’

বিক্রেতাদের মতোই আতঙ্কে ক্রেতারাও। ষাঁড়টি কখন কার অনিষ্ট করে, এই ভয়ে সতর্ক হয়ে লোকজন বাজারে ঢুকছেন। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘ষাঁড়টা আগে শান্তশিষ্টই ছিল। এখন দেখছি উপদ্রব শুরু করেছে। বাজারে সাবধানে যেতে হচ্ছে।”

অনেকে বলছেন, কিছু গোলমাল হলে পুলিশই মানুষজনের ভরসা। কিন্তু এই যাঁড় যে পুলিশের মেসে ঢুকেও ঝামেলা করছে!’’ বন দফতর জানিয়েছে, ওই যাঁড়ের উৎপাত নিয়ে তাঁদের কাছে কেউ লিখিত ভাবে জানাননি। কিন্তু জানালেও যাঁড়টিকেই বা তাঁরা কোথায় ছাড়বেন? — প্রশ্ন বন দফতরের এক আধিকারিকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE