Advertisement
E-Paper

রাইপুর সরাতে চেয়ে এ বার পড়ল পোস্টার

ঘোষিত ঝাড়গ্রাম জেলায় বাঁকুড়ার রাইপুর ব্লককে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূলেরও বিভিন্নস্তরে সমর্থন ও প্রতিবাদ শোনা যাচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৬:৫৫
বুধবার সকালে এই পোস্টার উস্কে দিয়েছে বিতর্ক।

বুধবার সকালে এই পোস্টার উস্কে দিয়েছে বিতর্ক।

ঘোষিত ঝাড়গ্রাম জেলায় বাঁকুড়ার রাইপুর ব্লককে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূলেরও বিভিন্নস্তরে সমর্থন ও প্রতিবাদ শোনা যাচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন করে সেই বিতর্ককে উস্কে দিয়ে এ বার পোস্টার পড়ল।

বুধবার সকালে রাইপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় ‘জনগণ’ নামাঙ্কিত ছাপানো পোস্টারে দাবি করা হয়েছে, রাইপুরকে ঝাড়গ্রামের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কোনও পোস্টারে লেখা— ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের ঝাড়গ্রাম জেলায় আমরা অন্তর্ভুক্ত হতে চাই’। আবার কোনও পোস্টারে, ‘রাইপুর ব্লকবাসী আমরা ঝাড়গ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত হতে চাই’।

সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত ভাবে রাইপুর ব্লককে সরকারের ঘোষিত জেলা ঝাড়গ্রামে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে এলাকার মানুষের সাক্ষরসম্বলিত একটি দাবিপত্র তুলে দেন শাসকদলের একাংশ। আর এই দাবির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শাসকদলের অন্দরেও দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির তরফে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তারপরেও রাইপুর ব্লককে ঝাড়গ্রাম জেলায় অন্তর্ভুক্তির দাবি যে রয়েই গিয়েছে এ দিনের পোস্টারে তারই জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে।

ভৌগোলিক কারণে রাইপুর ব্লককে ঝাড়গ্রামে অন্তর্ভুক্তির দাবি উঠেছে। এই ব্লকের মেলেড়া, ঢেকো, বক্সি, গোজদা, চামটাবাদ, খয়েরবুনি, ধর্মপুর, লাগদা, মৌলাশোল, ফুলকুসমা, মণ্ডলকুলি-সহ বেশ কিছু গ্রাম পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা লাগোয়া। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ঝাড়গ্রাম কিছুটা হলেও কাছে। তুলনায় বাঁকুড়া সদরের দূরত্ব বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই ওই এলাকার মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে ঝাড়গ্রামের উপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু রাইপুরেরই অন্যান্য অংশের কাছে বাঁকুড়া তুলনায় কাছে। তাঁদের মতে, ঝাড়গ্রামের তুলনায় বাঁকুড়ায় ওই সব পরিষেবার মান অনেক উন্নত। তাই এই অন্তর্ভুক্তির দাবিকে ঘিরে যেমন এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ দ্বিধাবিভক্ত, তেমনই বিভাজন দেখা গিয়েছে শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যেও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে রাইপুর হাসপাতাল মোড়ে, মটগোদা, সোনাগাড়া, ঢেকো, ফুলকুসমা, দুন্দার এলাকায় দেওয়ালে সাদা কাগজের উপর কালো কালিতে ছাপানো পোস্টার দেখা যায়। কে বা কারা জনগণের নাম দিয়ে এই পোস্টার দিয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি।

তবে এই পোস্টার নিয়েও তৃণমূল নেতৃত্বকে দু’ভাগে দেখা গিয়েছে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রীর কাছে সম্প্রতি যাঁরা এই অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁদের অন্যতম রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি তথা মেলেড়া পঞ্চায়েত প্রধান রাজকুমার সিংহ। তিনি এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘কারা পোস্টার সাঁটিয়েছে জানি না। আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাই জনগণের তরফে আমাদের কাছে কোনও দাবি এলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এলাকার মানুষের দাবি সম্বলিত আবেদনপত্র সেই সূত্রেই উপরমহলে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো নেবেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ তিনি পাশে পেয়েছেন রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূলের কার্যকারী সভাপতি পরিমল মাহাতোকে। তাঁর মতে, শুধু দূরত্ব নয়। ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক এবং জনজাতিগত ভাবে জঙ্গলমহলের অন্যতম ব্লক রাইপুরের সঙ্গে ঝাড়গ্রামের অনেক মিল রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘নতুন জেলায় যে ক’টি ব্লক এখন অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে সেগুলি সবই অনুন্নত এবং একসময়কার মাওবাদী উপদ্রুত। ওই জেলায় রাইপুর ব্লককে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। সেই কারণেই আমি ব্যক্তিগত ভাবে নতুন জেলায় রাইপুরকে অন্তর্ভুক্তির দাবিকে সমর্থন করছি।”

তৃণমূলের রাইপুর ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো বলছেন, “নানা মতের মানুষ রয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেদিকে থাকার পক্ষে রায় দেবেন আমি সেদিকেই। তবে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে নতুন জেলায় অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব কোথাও জানানো হয়নি। ব্যক্তিগত ভাবে কে কী বলছেন বা দাবি করছেন সেটা একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত।”

এই দাবির অন্যমেরুতে তৃণমূলের কিছু নেতার মতোই বিরোধীরাও রয়েছেন। সিপিএমের রাইপুর জোনাল সম্পাদক রুবেন টুডু বলেন, “এলাকার মানুষ জানেন রাইপুর ব্লককে ঝাড়গ্রাম জেলায় ঢোকানোর চেষ্টা কারা করছেন। এই পোস্টার দেওয়ার নেপথ্যে কারা রয়েছেন। তবে আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আমরা এই অন্তর্ভুক্তির তীব্র বিরোধী।”

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নতুন জেলায় রাইপুর ব্লককে অন্তর্ভুক্তির দাবি উঠলেও তা বিশ বাঁও জলে। মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনও সম্মতির ইঙ্গিত দেননি। —নিজস্ব চিত্র

Raipur block Jhargram district
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy