Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ফিরতে চাই, ৩৬ হাজার আবেদনপত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ভিন্‌ রাজ্যের কাজ ছেড়ে ঘরে ফিরতে চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার শ্রমিক আবেদন জমা দিলেন পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে। লিখিত আবেদনে তাঁরা জানিয়েছেন, অভাবের তাড়নায় বাইরে কাজ করছেন।

পুরুলিয়া জেলাশাসকের অফিসে এমনই লাইন পড়েছিল।

পুরুলিয়া জেলাশাসকের অফিসে এমনই লাইন পড়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৭
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ভিন্‌ রাজ্যের কাজ ছেড়ে ঘরে ফিরতে চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার শ্রমিক আবেদন জমা দিলেন পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে। লিখিত আবেদনে তাঁরা জানিয়েছেন, অভাবের তাড়নায় বাইরে কাজ করছেন। ঘরে ফিরে এলে সরকার তাঁদের স্বাবলম্বী হতে আর্থিক সহায়তা দেবে এবং একশো দিনের প্রকল্পে কাজের সুনিশ্চয়তা দেবে বলে কয়েক মাস আগে ঘোষণা করায় তাঁরা উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বেশ কিছু দিন আগে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রায় ৩৬ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। শ্রম দফতরের কাছে তা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সেই অনুয়ায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’

রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে কয়েক মাস আগে নৃশংস ভাবে খুন হন মালদহের যুবক আফরাজুল খান। তারপরে অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যেও কাজ করতে গিয়ে এ রাজ্যের কিছু যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী গত ১২ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার কোটশিলা থানার বাটরি ময়দানের প্রশাসনিক সভা থেকে ঘোষণা করেন, ‘‘যাঁরা অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছেন, তাঁরা যদি কোনও রকম সমস্যা বুঝে ফিরে আসতে চান, আমরা তাঁদের পাশে থাকব।’’ তিনি জানিয়ে যান, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের কাছে নাম লেখালে তাঁরা এককালীন ৫০ হাজার টাকা পাবেন। তাঁদের ১০০ দিনের কাজ সুনিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে ২০০ দিনের কাজ দেওয়া হবে।

বছর দেড়েক আগে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের জেরে কাজ হারিয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের সাহায্যে ‘সমর্থন’ প্রকল্প চালু করে রাজ্য সরকার। তাতেও ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরে মকর পরবে বাড়ি এসেছিলেন ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পুরুলিয়ার বহু শ্রমিক। তাঁদের অনেকেই এ বার পাকাপাকি ভাবে বাড়ি ফিরতে চেয়ে ‘সমর্থন’ প্রকল্পের সুবিধা পেতে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জমা দেন। ভিড় সামাল দিতে জেলাশাসকের দফতরে আলাদা ‘ডেস্ক’ খোলা হয়। সেখানেই লাইন দিয়ে আবেদনপত্র জমা দেন শ্রমিকেরা।

আড়শার সটরা গ্রামের বাসিন্দা কাজল গঙ্গোপাধ্যায় বেঙ্গালুরুতে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। ওদের জন্য সব সময় খুব চিন্তা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে তাই মকর পরবে বাড়িতে গিয়ে সমর্থন প্রকল্পের জন্য আবেদন করে এসেছি। সরকারি সাহায্য পেলে নিজেই কিছু ব্যবসা করার ইচ্ছে রয়েছে।’’

গুজরাতের জামনগরে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করা পুরুলিয়া শহরের রেনি রোডের বাসিন্দা শক্তিপদ রাজোয়াড় বলেন, ‘‘আমি নিজে সে দিন বাটরি ময়দানের সভায় ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণায় আমরা খুশি। সহায়তা পেলে এখানেই কোনও দোকান করব বা টোটো কিনব।’’

পুরুলিয়া ২ ব্লকের নড়রা গ্রামের আলি হোসেন কাজ করেন ওডিশার ভদ্রকে, বেলরাম গ্রামের আশাদুল আনসারি কাজ করেন হায়দরাবাদে, আড়শার কৌরাং গ্রামের বেলু মাহাতো মধ্যপ্রদেশের ভিলাইতে কর্মরত। তাঁরা সকলেই ঘরে এসে সরকারি সাহায্য নিয়ে রোজগার করতে চান বলে জানিয়েছেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিয়েছেন যেখানে কাজ করেন সেখানকার কাজের প্রমাণপত্র, স্থানীয় পঞ্চায়েতের আবাসিক শংসাপত্র এবং একশো দিনের প্রকল্পের জবকার্ডের প্রতিলিপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Workers Labours District Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE