Advertisement
E-Paper

সুবিধা কারা পাচ্ছেন না, খোঁজ শুরু

বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ামক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০২:২৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জেলার জঙ্গলমহলের গ্রামগুলির সহায়-সম্বলহীন কেউ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কি না সেই ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া শুরু করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। সূত্রের খবর, সোমবার প্রশাসনের কর্তারা বান্দোয়ান ব্লকের কিছু বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। এরই মধ্যে আবার কংগ্রেসের বিধায়ক নেপাল মাহাতো অভিযোগ তুলেছেন, জঙ্গলমহলের বেশ কিছু এলাকায় গ্রাহকদের বরাদ্দের চেয়ে কম চাল দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ামক।

ঝালদা ২ ব্লকের বামনিয়া-বেলাডি পঞ্চায়েতের লাগাম গ্রামের বৃদ্ধা বিমলা পান্ডের মৃত্যু হয় গত ৯ অগস্ট। খেতে না পাওয়া, গাফিলতি, নাকি রোগ— কীসে তাঁর মৃত্যু হল, সেই প্রশ্ন ঘুরছে। বৃদ্ধার ছেলে অভির পান্ডে জানান, সংসার চালাতে মা ও ছেলে ভিক্ষায় বেরোতেন। কখনও খাবারের দোকানে কাজ করে কিছু টাকা জুটত। ছিল না রেশন কার্ড। বিমলা বিধবা ভাতা বা বার্ধক্য ভাতা পেতেন না। এমনকী জঙ্গলমহলের বাসিন্দা ওই পরিবারের দু’টাকা কেজি চাল পাওয়ার কার্ডও ছিল না। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যকে একাধিকবার বলেও ওই চালের প্রাপক তালিকায় নাম নথিভুক্ত করাতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন অভির। তাঁর দাবি, ‘‘বৃষ্টি হচ্ছিল বলে ভিক্ষেয় বেরোতে পারিনি। শেষে না খেতে পেয়েই মা মারা গেল। পাঁচ-ছ’দিন শুধু জল খেয়েই কাটাতে হয়েছে।’’ তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, পেটের রোগে মৃত্যু হয়েছে এই বৃদ্ধার।

২০১১ সালে পালাবদলের পরে রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের জন্য দু’টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করে। সপ্তাহে মাথাপিছু দু’কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কেন সেই চালের প্রাপক তালিকায় নাম ছিল না বিমলা ও তাঁর ছেলের? প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ওই পরিবারটি ঝাড়খণ্ডে থাকত। পরে পুরুলিয়ায় এসেছে। যদিও অভিরের যে ভোটার কার্ড রয়েছে, সেটি ১৯৯৫ সালের। বিমলার ভোটার কার্ড ২০০৬-এর এপ্রিলের। তা হলে? প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, জঙ্গলমহলে দু’টাকা কেজি দরে চালের কার্ড প্রথম বার বিতরণের পরে বন্ধ রয়েছে। ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু হবে বলে ওই কার্ড আর দেওয়া হয়নি। নতুন প্রাপক তালিকায় ওই পরিবারটির নাম রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে নেপাল মাহাতো প্রশ্ন তুলেছেন, এখন যাঁরা তালিকার বাইরে রয়েছেন, তাঁদের কী হবে? ডিজিটাল কার্ড চালু না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কি রেশনের তালিকার বাইরেই থাকবেন? তিনি বলেন, ‘‘দায় এড়িয়ে লাভ নেই। এই রকমের যে সমস্ত পরিবার এখনও রেশনের তালিকার বাইরে রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা হোক। তাহলে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যাবে।’’ তিনি জানান, এই দাবি বিধানসভাতেও তুলবেন। প্রয়োজনে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল এলাকায় পাঠানোর দাবি জানাবেন।

জঙ্গলমহলের বেশ কিছু জায়গায় দু’টাকা কেজি দরের চাল গ্রাহকদের পরিমাণে কম দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন নেপাল। তিনি বলেন, ‘‘আমি লাগাম গ্রামেই গিয়েছিলাম পরিস্থিতি সরজমিন দেখতে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, চাল কম পাচ্ছেন।’’ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় কেজি পিছু দুশো গ্রাম করে চাল কম দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর। বিষয়টিও খাদ্য দফতরে জানাবেন বলে দাবি করেছেন নেপাল।

জেলা খাদ্য নিয়ামক বাপ্পাদিত্য চন্দ্র এই ব্যাপারে বলেন, ‘‘গ্রাহকদের চাল কম দেওয়ার কথা নয়। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’’ বিডিও (ঝালদা ২) দীপক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও রেশন ডিলার গ্রাহকদের বঞ্চিত করলে কোনও ভাবেই ছেড়ে দেওয়া হবে না।’’ জেলা খাদ্য নিয়ামক জানান, জেলার কোথাও সহায়-সম্বলহীন পরিবার রেশন ব্যবস্থার বাইরে রয়ে গিয়েছেন কি না সেটা খুঁজে বের করতে একটি সমীক্ষা করা হবে। সমীক্ষার পর তাঁদের কার্ড দেওয়া হবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। বাপ্পাদিত্য বলেন, ‘‘আগে সমীক্ষার রিপোর্টে কী উঠে আসে দেখা যাক।’’

Jangalmahal Food জঙ্গলমহল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy