Advertisement
E-Paper

স্কুলে ফেরাতে বাড়িতে পুলিশ

চতুর্থ শ্রেণির পরে আর স্কুলমুখো হয়নি সুমিত বাদ্যকর। খবর পেয়েই পুলিশ কর্মীরা দৌড়েছিলেন তার বাড়িতে। স্কুলের ইউনিফর্ম গায়ে চাপিয়েছিল সুমিত। তবে পুলিশ দেখে স্কুলে যাওয়ার মতো খুদে সে নয়। বাড়ি থেকে বেরিয়েই পুকুরে ঝাঁপ!

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:৫১
বিষ্ণুপুরের কৃত্তিবাস মুখার্জি হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে। সোমবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুরের কৃত্তিবাস মুখার্জি হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে। সোমবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

বাবা-মা নেই। অভাবের সংসার। দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে গিয়েছিল পূজা বাদ্যকর। মাধ্যমিকে আর বসা হয়নি। ইচ্ছেটা রয়েই গিয়েছিল মনে। একদিন গ্রামে পুলিশকর্মীদের পেয়ে সব জানায় পূজা। ফের পড়াশোনা শুরু করতে চায় সে। ব্যবস্থা হয়। টিউশন, বইপত্র— সব।

চতুর্থ শ্রেণির পরে আর স্কুলমুখো হয়নি সুমিত বাদ্যকর। খবর পেয়েই পুলিশ কর্মীরা দৌড়েছিলেন তার বাড়িতে। স্কুলের ইউনিফর্ম গায়ে চাপিয়েছিল সুমিত। তবে পুলিশ দেখে স্কুলে যাওয়ার মতো খুদে সে নয়। বাড়ি থেকে বেরিয়েই পুকুরে ঝাঁপ! জামা ভিজে, বই ভিজে সে একাকার কাণ্ড।

পুলিশও হাল ছাড়েনি। নিয়মিত কাউন্সেলিং করিয়ে খুদেকে পাকাপোক্ত ভাবে স্কুলে পাঠানোর বন্দোবস্ত হয়েছে।

পূজা আর সুমিত মেজিয়ার ভাড়া এলাকার বাসিন্দা। উচ্চশিক্ষিকার পথে তাদের কাঁধে হাত রেখেছে বাঁকুড়া পুলিশ। প্রকল্পের নাম ‘প্রত্যার্পণ’।

মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া ছাত্রছাত্রীদের ফের স্কুলমুখো করতে এই প্রকল্প নিয়েছে বাঁকুড়া পুলিশ। সম্প্রতি পরীক্ষামূলক ভাবে প্রত্যার্পণ প্রকল্প চালু হয়েছে মেজিয়া থানায়। মেজিয়া থানার ওসি মানস চট্টোপাধ্যায় জানান, পূজা আর সুমিতদের মতো থানা এলাকা থেকে ২৬ জন ছেলেমেয়েকে চিহ্নিত করে ফের স্কুলে পাঠানো হয়েছে।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, শীঘ্রই জেলার অন্য থানাগুলিতেও ধাপে ধাপে চালু হবে প্রত্যার্পন প্রকল্প। বেলিয়াতোড়, সোনামুখী থানায় ইতিমধ্যেই সমীক্ষার শুরু হয়ে গিয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘শিক্ষার হার বাড়লে এক দিকে যেমন সমাজ এগিয়ে যাবে, তেমনই নতুন প্রজন্মের মধ্যে অপরাধপ্রবণতাও কমবে। মূলত এই দুই লক্ষ্য সামনে রেখেই প্রকল্পটি চালু করেছি আমরা।”

বাঁকুড়া পুলিশের এই ধরণের উদ্যোগ এই প্রথম নয়। গত বছর পুজোর সময়ে নিঃসঙ্গ প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াদের জন্য ‘উজ্জীবন’ প্রকল্প শুরু করেছিল জেলা পুলিশ। একা থাকা বয়ষ্ক মানুষজনের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন পুলিশকর্মীরা। ইতিমধ্যেই জেলার অধিকাংশ থানায় ওই প্রকল্প চালু হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন থানায় চালু হয়েছে নিখরচার কোচিং সেন্টার। প্রকল্পের নাম ‘সোপান’। জেলার বিভিন্ন থানায় মহিলাদের জন্য বিশেষ পাঠাগারও খোলা হচ্ছে। এই সবের পাশাপাশি রয়েছে রুটিন করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন। প্রতি মাসে। জেলার সব ক’টি থানায়।

পুলিশের নতুন প্রকল্প প্রত্যার্পণ নজর কেড়েছে জেলা প্রশাসনেরও। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া পড়ুয়াদের ফেরাতে প্রশাসনিক ভাবেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশেরও একটা নিজস্ব জনসংযোগ রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এতে কাজে অনেক গতি আসবে।”

initiative poor students বাঁকুড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy