প্রতীকী ছবি।
মঙ্গলবার রাতে রামপুরহাটের দিকে থেকে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আসছিল বরযাত্রীদের বাসটি। ভোর রাতে সিউড়ি আবদারপুর লেভেল ক্রসিংয়ের ঠিক আগেই বাসটিকে থামাল পুলিশ। কিছু বোঝার আগেই যাত্রীরা দেখলেন, বাসচালকের দিকে জলের বোতল এগিয়ে দিলেন টহলদার পুলিশকর্মী। সুর অনুরোধের হলেও স্বর গম্ভীর— ‘‘চোখেমুখে ভাল করে জল দিন। একটু বসে ঘুম তাড়িয়ে তারপর যান।’’
শুধু ওই বাসচালক নন। ভোর রাতে গাড়ি চালান যাঁরা, গত কয়েক দিনে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। দুর্ঘটনা কমাতে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের নির্দেশে এমন অভিনব পথ নিয়েছে বীরভূমের পুলিশও।
সম্প্রতি পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে একটি বাসের ধাক্কা লাগে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। একটি কলেজের শিক্ষক-পড়ুয়াদের নিয়ে বাসটি পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি থেকে আসছিল। শিক্ষামূলক ভ্রমণে যাচ্ছিলেন তাঁরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, ভোরে সেই বাসের দুর্ঘটনার খবর জানার পরেই জেলায় জেলায় এমন নির্দেশিকা পাঠান ডিজি। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘উপরতলার নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
জেলা পুলিশের কর্তাদের অভিজ্ঞতা, রাতভর জাতীয় সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়ক ধরে পাথর-বালি বোঝাই অসংখ্য লরি, ডাম্পার সহ ভারি গাড়ি চলে। শীত এলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেলায় পিকনিক করতে আসা, বিয়ের গাড়ি বা পড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে যাওয়ার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু, রাতভর গাড়ি চালানোর ধকল নিতে পারেন না বহু চালকই। ভোরের দিকে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে। জেলা পুলিশের কর্তাদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা, ‘‘এই সময় চালকেরা
গাড়ির স্টিয়ারিং খালসির হাতে দিয়ে (যাঁর গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই) জিরিয়ে নেন। তাতে আশঙ্কা থাকে দুর্ঘটনার।’’ আরও একটি বিষয়, কুয়াশার জন্যেও অনেক সময়ে দৃশ্যমানতা কমে যায়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে তাতেও। সেই জন্য জেলা পুলিশকে সতর্ক হতে নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি।
ডিজি-র নির্দেশে বলা হয়েছে, পুলিশকে ‘নাকা’ (সড়কে ব্যারিকেড করে যানবাহন তল্লাশি) তৈরি করে গাড়ি এবং যাত্রীদের সতর্ক করতে হবে। রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের সদর দফতর থেকে স্টিকার, ৫০টি করে সোলার ব্লিংকার এবং গার্ডরেল নিয়ে গিয়ে তৈরি করতে হবে নাকা। প্রতিটি নাকায় এক জন অফিসার থাকবেন। তাঁদের নাম, ফোন নম্বর রাখতে হবে। প্রত্যেক জেলা পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারকে তিনি জানিয়েছেন, স্কুল ও কলেজের কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে এটা জানিয়ে দিতে হবে। ডিজির সেই নির্দেশ মেনেই জেলার বেশ কয়েক’টি নাকা পয়েন্ট গড়ে কাজ শুরু করেছে জেলা পুলিশ। সিউড়ির আবাদরপুরের কাছেও তেমনই ব্যবস্থা রয়েছে।
ঠিক কী করছে পুলিশ?
জেলা পুলিশ কর্তা ও রাতের নাকা পয়েন্টে থাকা কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা জানাচ্ছেন, ভোরের দিকে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। জল দেওয়া হচ্ছে গাড়ির চালককে। বলা হচ্ছে, চোখে মুখে জল ছিটিয়ে ঘুম ভাঙান। সঙ্গে কার হাতে সেই সময় স্টিয়ারিং ছিল, সেটাও দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে বাস বা বেশি যাত্রীবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রে নজরদারি যথেষ্ট কড়া। প্রয়োজনে কিছু সময় বসিয়ে রাখা হচ্ছে। যাতে ঘুম পুরো উবে যায়।
তথ্য বলছে, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি নিয়ে বিপুল প্রচার এবং সতর্কতা অবলম্বনের ফলে গত বছরের চেয়ে এ বার রাজ্যে দুর্ঘটনা কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। গত মে মাসে জেলায় এসে গাড়ি চালকদের সতর্ক করতে আরও একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় সড়কে বেপরোয়া যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ওয়াচ টাওয়ার বানানোরও নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই কাজ এগোচ্ছে। এর মধ্যে ডিজি-র নতুন নির্দেশ দুর্ঘটনা কমাতে আরও সাহায্য করবে বলে মনে করছেন জেলা পুলিশের কর্তারা।
তবে আক্ষেপ একটাই। নজরদারি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ কর্মী ও পুলিশ কর্তা কই। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে দুর্ঘটনা কমিয়ে ফেলা যাবে। চেষ্টাও করা হচ্ছে। কিন্তু, পুলিশ কর্মীর অভাবই মূল সমস্যা। কত সময় আর কাজ করতে বলা যায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy