প্রতীকী ছবি।
এই প্রথম বাঘমুণ্ডি বিধানসভা দখলে এল তৃণমূলের। ভাল ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেসের দু’দশকের বিধায়ক নেপাল মাহাতোকে হারিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুশান্ত মাহাতো। তবে এই জয়েও ‘কাঁটা’ ঝালদা পুরসভায় বিজেপির শরিক দল ‘আজসু’ ও কংগ্রেসের তুলনায় দলের পিছিয়ে থাকা। পুর-প্রশাসক সুরেশ আগরওয়াল, প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক, প্রাক্তন পুর-প্রধান প্রদীপ কর্মকার, শহর তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস সেনের ওয়ার্ড-সহ ১১টি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে তৃণমূল। বিধায়ক তথা জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি সুশান্ত মাহাতোর ব্যাখ্যা, ‘‘ঝালদা শহরে সাংগঠনিক দুর্বলতাই আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে।”
তবে সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি, আরও কিছু কারণ আছে বলে মত জেলার রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের। তাদের অন্যতম পুর-পরিষেবা দিতে তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পুর-বোর্ডের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা ও শাসকদের অর্ন্তদ্বন্দ্বের অভিযোগ। ঝালদায় আজসু ৬,০৭২টি ভোট পেলেও তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে ২,৬৪১টি ভোট। তৃণমূলের নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিধানসভার অন্য এলাকাগুলি থেকে দল ভাল ‘লিড’ না পেলে বাঘমুণ্ডি আসন ফের অধরাই থেকে যেত।
ওয়ার্ডভিত্তিক ছবি অনুযায়ী, পুর-শহরের ১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে কেবল ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তবে লোকসভার চেয়ে বিধানসভায় তৃণমূল ঝালদায় ভোটপ্রাপ্তি কিছুটা হলেও বেড়েছে। লোকসভায় ঝালদা শহরে ১,৮০৩টি ভোট গিয়েছিল তৃণমূল প্রার্থীর ঝুলিতে। সেখানে ৮,১৫৯টি ভোট পেয়ে মোট ভোটের ৬৯ শতাংশ দখল করেছিল বিজেপি। আর মাত্র ৮৪৯ ভোট পেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো।
তবে বিধানসভায় ছ’শোর কিছু বেশি ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। এ দিকে, বিজেপি তথা তাদের শরিক দল ‘আজসু’-র ভোট কমেছে প্রায় দু’হাজারের বেশি। যদিও রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিজেপির ভোটের বেশিরভাগই তৃণমূলের বদলে গিয়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে। সে ভোট টেনেই ২,৮০৮টি ভোট পেয়ে ঝালদায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে কংগ্রেস।
এ পরিস্থিতিতে সামগ্রিক ভাবে বিধানসভা দখলে এলেও ঝালদা পুর-শহরের অবস্থা ভাবাচ্ছে শাসকদলকে। আগামী কয়েকমাসের মধ্যে পুর-নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে, তৃণমূলের পক্ষে ঝালদা পুর-বোর্ড দখল করা রীতিমতো কষ্টের হবে বলে মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
কেন এমন অবস্থা? পর্যবেক্ষকদের চর্চায় উঠে আসছে একাধিক কারণ। প্রথমত, ঝালদায় পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পুর-বোর্ড। ‘সুবর্ণরেখা জলপ্রকল্প’ হাতে নিয়েও তৈরি করতে পারেনি তারা। তৈরি হয়নি বাসস্ট্যান্ড। সঙ্কীর্ণ রাস্তায় প্রতিদিন যানজটের সমস্যায় নাজেহাল ঝালদাবাসী। এর সঙ্গে পুকুর ভরাট ও জমি কেলেঙ্কারির ঘটনায় পরোক্ষে নাম জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। বিজেপির শহর সভাপতি মৃণাল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘তৃণমূল পরিচালিত পুর-বোর্ড শহরবাসীকে ন্যূনতম পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার জবাব ইভিএমে দিয়েছেন ভোটারেরা।”
গত পুর-নির্বাচনে একটিও আসনে জিততে না পারলেও কংগ্রেস, বাম ও নির্দলদের ‘ভাঙিয়ে’ তৃণমূল পুর-বোর্ড দখল করেছিল। আর তার পরেই তৃণমূলের ‘অর্ন্তদ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে আসে। বিরোধীদের কটাক্ষ, ক্ষমতা দখলের বদলে তৃণমূলের নেতারা শহরের উন্নয়ন করলে এমন ফল হত না। যদিও ঝালদা শহরের তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবাশিস সেনের বক্তব্য, ‘‘কোথাও খামতি থাকাতেই প্রত্যাশিত ফল হয়নি। ওয়ার্ডভিত্তিক পর্যালোচনা শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy