Advertisement
E-Paper

ঠান্ডা মাথায় খেলেই লড়ে যাবে বিষ্ণু

তার প্রিয় ক্রিকেটার ধোনি। কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা জীবনের বাজি লড়তে চায় সে। অথচ হতদরিদ্র পরিবারে সেই ছেলের একমাত্র সম্বল বাবা-মা। বাড়ি বলতে দরজা-জানলাহীন জীর্ণ একচালা এক মাটির ঘর। খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া হাইস্কুলের সেই ছাত্র বিষ্ণু ঘোষই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এ বার। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৫২। স্কুলের সেরা ছাত্রের থেকে মাত্র তিন নম্বর কম পেয়েছে।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০০:৪৮
বিষ্ণু ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

বিষ্ণু ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

তার প্রিয় ক্রিকেটার ধোনি। কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা জীবনের বাজি লড়তে চায় সে। অথচ হতদরিদ্র পরিবারে সেই ছেলের একমাত্র সম্বল বাবা-মা। বাড়ি বলতে দরজা-জানলাহীন জীর্ণ একচালা এক মাটির ঘর। খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া হাইস্কুলের সেই ছাত্র বিষ্ণু ঘোষই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এ বার। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৫২। স্কুলের সেরা ছাত্রের থেকে মাত্র তিন নম্বর কম পেয়েছে। তা নিয়ে আক্ষেপের থেকে কী ভাবে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা চলবে, সেই চিন্তাতেই ঘুম আসছে না মাধ্যমিকে কৃতী এই ছাত্রের।

ঘটনা হল, অনটন যে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর গ্রামের এই পরিবারের নিত্যসঙ্গী। ছেলের ভাল ফল অভাবের সংসারে আলো আনলেও তাই মাথায় হাত পড়েছে গরিব বাবা-মায়ের। বড় ছেলেকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবারের সম্বল বলতে বিঘে দু’য়েক এক ফসলি জমি। যে পরিমাণ ধান হয়, তাতে বাড়ির রান্নার সারা বছরের চালটুকুও হয় না। বছরের বাকি সময়ে খেতে কিছু সব্জি ফলিয়ে তা বাজারে বিক্রি করেই করে কোনও রকমে সংসার চালান বিষ্ণুর শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা অসিত ঘোষ। মা অনিমাদেবী বলছেন, ‘‘পড়াশোনায় বরাবর ভাল আমার ছোট ছেলে। সেই মতো রেজাল্টও করেছে। কিন্তু, পরিবারের যা অবস্থা তাতে ওকে পড়ানোটাই কষ্টসাধ্য।’’

এ দিকে, মাধ্যমিকে বিষ্ণু বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮৫, অঙ্কে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, জীবনবিজ্ঞানে ৯৬, ইতিহাসে ৯৩ ও ভূগোলে ৯০ পেয়েছে। ‘‘স্কুলে বরাবর হয় প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হতো বিষ্ণু।’’— বলছেন কেন্দ্রগড়িয়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার দে। সেই ধারা মাধ্যমিকেও বজায় রেখেছে বলে খুশি গোটা স্কুল। বিষ্ণুর নিজের ইচ্ছে বিজ্ঞান শাখা নিয়ে পড়াশোনা করার। কিন্তু, বিজ্ঞান নিয়ে কাছাকাছি কোনও স্কুলে পড়ার সুযোগ নেই। স্কুল বলতে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার দূরের খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া বা পাঁচড়া উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতি দিন এতটা রাস্তা সাইকেল ঠেলে স্কুলে যাওয়ার ঝক্কির সঙ্গে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হল পড়ার বই, টিউশন-সহ অন্যান্য খরচ কে চালাবে? বাবা-মা দু’জনেই জানাচ্ছেন, ছেলের টিউশন দেওয়ার সাধ্যও তাঁদের ছিল না। জেঠতুতো দাদা সুকান্তই বিষ্ণুকে সব বিষয় দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ বার কী হবে, কূল পাচ্ছে না এই হতদরিদ্র পরিবার।

যার কথা এখন গাঁয়ের সবার মুখে, সেই বিষ্ণুর পড়াশোনার পরেই সব থেকে পছন্দের জিনিস ক্রিকেট খেলা ও দেখা। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির এই ফ্যান বলছে, ‘‘কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। পড়াশোনা আমাকে চালিয়ে যেতেই হবে। একটা পথ নিশ্চই বেরোবে। শিক্ষক হতে চাই। আমার মতো ছেলেদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বাড়ির অভাবও দূর করতে চাই।’’ প্রত্যয়ী শোনায় কিশোরের গলা।

dayal sengupta Madhyamik Krishnapur khairasol Bishnu ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy