E-Paper

জোগান সঙ্কট কাটেনি, আলু চড়া

এক বিক্রেতা দুলাল দাসের কাছে অল্প কিছু আলু পড়েছিল। তবে তার মান ভাল না হলেও চড়া দরে ক্রেতারা কিনতে বাধ্য হচ্ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪ ১০:২২
শুরু হল হিমঘরগুলিতে আলু ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ। তবে বাজারে আলুর জোগান বৃহস্পতিবারও স্বাভাবিক হয়নি। বিষ্ণুপুরের হিমঘর ও বাঁকুড়া বাজারের দৃশ্য।

শুরু হল হিমঘরগুলিতে আলু ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ। তবে বাজারে আলুর জোগান বৃহস্পতিবারও স্বাভাবিক হয়নি। বিষ্ণুপুরের হিমঘর ও বাঁকুড়া বাজারের দৃশ্য। ছবি: শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ

আলু ব্যবসায়ীরা একদিন আগে কর্মবিরতি তুললেও বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার বাজারে আলুর জোগান স্বাভাবিক হল না। তার জেরে আলুর দর সামান্য কমে কেজি প্রতি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হল। যদিও আলুর মান দেখে নাক কোঁচকান অনেক ক্রেতা।

‘পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’-র রাজ্য উপদেষ্টা বিভাস দে বলেন, “হিমঘর থেকে আলু বের করার পরে শুকনো করতে সময় লাগে। সে কারণে আলু বাজারজাত করা যায়নি। দ্রুত গতিতে কাজ চলছে।’’ আজ, শুক্রবার থেকে সমস্যা মেটার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

এ দিন সকালে বাঁকুড়া শহরের পুরভবন লাগোয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর কাছেই আলু নেই। এক বিক্রেতা দুলাল দাসের কাছে অল্প কিছু আলু পড়েছিল। তবে তার মান ভাল না হলেও চড়া দরে ক্রেতারা কিনতে বাধ্য হচ্ছিলেন। দুলাল বলেন, “আলু পাইনি। খুবই খারাপ পরিস্থিতি।’’ বাঁকুড়া শহরে এ দিন আলুর দর ছিল কেজি প্রতি ৩৫-৪০ টাকা। শহরের কালীতলার আলু বিক্রেতা মমতা দাস আলুর খারাপ অংশ কেটে বাদ দিয়ে ক্রেতাদের বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, “ব্যবসায় এমন দিন আগে কখনও আসেনি। ক্রেতারাও সমস্যা বুঝতে পারছেন।”

বিষ্ণুপুরের চকবাজার, মাধবগঞ্জের বাজার, মনসাতলা বাজারেও আলুর জোগান ছিল খুব কম। খাতড়ার বাজারেও আলুর জোগান কম ছিল। সেখানে আলুর দর ছিল ৩০ টাকা। তবে বাঁকুড়ার জয়পুরের কৃষক বাজারে সুফল বাংলা স্টলে ২৭ টাকা দরে আলু বিক্রি হয়। জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য-কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত বসাক বলেন, “সুফল বাংলার স্টলে দু’বেলা শিবির করে সরকারি মূল্যে আলু বিক্রি করা হচ্ছে।”

কয়েকদিন পরে এ দিন হিমঘরগুলিতে আলু বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়। এ দিন বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন হিমঘর পরিদর্শন করেন জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বরূপা সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “হিমঘরে আলু শুকনো করা ও বাছাই পর্ব চলছে। শীঘ্রই বাজারজাত যাতে হয় সে দিকে আমরা নজর রাখছি।”

এ দিন পুরুলিয়া, আদ্রা, রঘুনাথপুর, কাশীপুর, মানবাজার, ঝালদা প্রভৃতি বাজারেও আলুর জোগান কম ছিল। যেটুকু আলু ছিল, তা সরাসরি হিমঘর থেকে আসায় ভিজে ছিল।

পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে অবশ্য এ দিন আলুর দর ছিল ৪০ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বাঁকুড়া থেকে এ দিন শহরে আলু এলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। তবে পুরুলিয়া শহরে জেলা পরিষদ চত্বরে ২৮ টাকা কেজি দরে ৩ কেজি পর্যন্ত আলু বিক্রি হয়। ক্রেতাদের ভিড় ছিল ভালই।

কাশীপুর বাজারেও এ দিন আলুর জোগান খুব কম ছিল। ব্যবসায়ী লাল্টু বিদ জানান, পাইকারি বাজারে ভিজে আলু থাকায় খুব কম তুলেছেন। আদ্রা পাইকারি বাজারে এ দিন তিন দিন পরে আলুর ট্রাক ঢুকেছে। তাই দাম নামে ৩২-৩৫ টাকায়। তবে রঘুনাথপুর বাজারে এ দিন আলু আসেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। খুচরো বাজারের বিক্রেতা অরূপ রজকের আশঙ্কা, আলু না এলে দাম ফের বেড়ে যাবে।

টাস্কফোর্সের অভিযানের জেরে এক ধাক্কায় এ দিন মানবাজার কিসান মান্ডিতে আলুর দাম ৪০ টাকা থেকে কমে ৩০-৩২ টাকা হয়ে গিয়েছে।

এ দিকে আলুর দর চড়ে যাওয়ায় মিড-ডে মিলের পাতে আলু দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে স্কুলগুলি। ঝালদা ১ ব্লকের ডিবরিটিকর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সন্দীপ দত্ত বলেন, ‘‘ক’দিন ধরে ৫০-৪০ টাকা দরে আলু কিনতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছি আমরা।’’ পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘বিভিন্ন বাজারে নজরদারির জন্য টাস্কফোর্স গড়া হয়েছে। তারা বাজারগুলিতে অভিযান চালাচ্ছে। বাঁকুড়ার হিমঘর মালিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সেখান থেকে আলু নিয়ে আসা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, জেলা পরিষদ চত্বর ও বড়হাটের দু’টি স্টল থেকে ২৮ টাকা দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia bankura

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy