Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

৫ বছর পরে ঘরে ফিরছে প্রসেনজিৎ

বছর পাঁচেক আগে এক দিন হঠাৎ বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল প্রসেনজিৎ। তখন তার বয়স ৯ বছর। বাড়ির সবাই হন্যে হয়ে খুঁজেছে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

বছর পাঁচেক আগে এক দিন হঠাৎ বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল প্রসেনজিৎ। তখন তার বয়স ৯ বছর। বাড়ির সবাই হন্যে হয়ে খুঁজেছে। পুলিশের কাছেও যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজটা হল চাইল্ড লাইনের দ্বারস্থ হওয়ার পরে। মাস দেড়েকের চেষ্টায় বারাসাতের হোম থেকে প্রসেনজিৎকে বাঁকুড়ার বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছেন জেলা চাইল্ড লাইনের কর্তা এবং কর্মীরা। চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, শনিবার ওই কিশোরের ঘরে ফেরার কথা।

প্রসেনজিতের পরিবার খুবই দুঃস্থ। তার মা বেঙ্গি দাস মালাকার পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। প্রসেনজিতের এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। বছর খানেক আগে তার বাবা নয়ন দাস দুর্ঘটনায় কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। এরই মধ্যে, ছেলেকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় বাঁকুড়া শহরের ময়রাবাঁধ এলাকার এক চিলতে ভাড়া বাড়িতে ঝলমল করে উঠেছে আলো। বেঙ্গিদেবী বলেন, ‘‘ছেলেটাকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড় করব ভেবেছিলাম। স্কুলেও ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়।’’ চেনাজানা সবার বাড়িতে খোঁজ করেও কোনও সূত্র না পেয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন সদর থানায়। সময় গড়াতে গড়াতে যখন এক প্রকার হাল ছেড়ে দেওয়ার অবস্থা, পরিচিত একজনের পরামর্শে বেঙ্গিদেবী গিয়েছিলেন চাইল্ড লাইনে। দিনটা ছিল চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি।

প্রসেনজিৎ তখন বারাসাতের একটি হোমে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনও ভাবে সে পৌঁছে গিয়েছিল দিল্লি। বাঙালি বলে বুঝতে পেরে সেখান থেকে তাকে রাজ্যে পাঠানো হয়। বারাসাতের হোমে আসে প্রসেনজিৎ। নিজের নাম বলতে না পারায় সেখানে তার নতুন নাম হয় কালীবাবু। হোমে এসে শুধু সে জানাতে পেরেছিল তার বাড়ি বাঁকুড়ায়। উত্তর চব্বিশ পরগনা চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সূত্র ধরে ওই কিশোরকে একবার বাঁকুড়ায় নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু তার বাড়ির কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। জেলা এসে কোনও সূত্রই না পেয়ে ফিরেছিল হোমের লোকজন।

বাঁকুড়া চাইল্ড লাইন আসরে নামতেই ছবিটা বদলায়। খবর যায় সব ক’টি জেলার চাইল্ড লাইনে। জানা যায় বারাসাতের হোমে থাকা কালীবাবুর কথা। বেন্তিদেবীর কথা মত ওই কিশোরের শরীরের বেশ কিছু জন্মদাগও মিলে যায়। হোয়াটসঅ্যাপে মা ও ছেলের ছবি চালাচালি হয়। বাঁকুড়া শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান মহিনুর আলম বলেন, “ছেলে ও মা ছবি দেখে পরস্পরকে চিনতে পেরেছে। ফোনেও কথা হয়েছে। ওই কিশোরকে বাঁকুড়ায় আনা হলে কিছু প্রয়জনীয় নথি দেখে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”

বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল বলেন, “প্রথমবার দফতরে এসে ওর মা বলেছিলেন যে ভাবেই হোক ছেলেকে খুঁজে দিতে। তিনি যে ছেলেকে ফিরে পেলেন এতেই আমরা খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prasenjit Missing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE