Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মহার্ঘ্য ডিম, মনখারাপ মিড-ডে মিলের মেনুতে

খয়রাশোলের বড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলে ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেকের জন্য  সপ্তাহের এক দিন বরাদ্দ একটা গোটা ডিম। পড়ুয়াদের মেজাজ সে দিন থাকে ‘খুশ’। কিন্তু গত ১০ দিনে ছবিটা বদলেছে। ডিমের দাম আকাশছোঁয়া। তাই কোপ পড়েছে মিড-ডে মিলের মেনুতে।

আহার: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ভিড় খুদেদের। থালায় অর্ধেক ডিম। মঙ্গলবার সিউড়িতে। ছবি: নিজস্ব চিত্র

আহার: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ভিড় খুদেদের। থালায় অর্ধেক ডিম। মঙ্গলবার সিউড়িতে। ছবি: নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

খয়রাশোলের বড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলে ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেকের জন্য সপ্তাহের এক দিন বরাদ্দ একটা গোটা ডিম। পড়ুয়াদের মেজাজ সে দিন থাকে ‘খুশ’। কিন্তু গত ১০ দিনে ছবিটা বদলেছে। ডিমের দাম আকাশছোঁয়া। তাই কোপ পড়েছে মিড-ডে মিলের মেনুতে। মনখারাপ স্কুলের কচিকাঁচাদের।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন অধিকারী অসহায়। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৯০০। আনাজের দামও এখন চড়া। নির্দিষ্ট বরাদ্দে ৭-৮ টাকায় এক-একটা ডিম কিনে পড়ুয়াদের থালায় দেওয়া মুশকিল।’’

একই কথা শোনালেন পাঁড়ুই ইউনিয়ন আমজাদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমার স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০০ পড়ুয়া রয়েছে। তবে সবাই মিড ডে মিল খায় না। কিন্তু সপ্তাহের কোনও দিন মেনুতে ডিম থাকলে ওদের ভাত, তরকারি না দিলেও ওদের ডিমটা অন্তত খেতে দিই।’’

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, মিড ডে মিলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াপিছু প্রশাসনিক বরাদ্দ থাকে ৪ টাকা ১৩ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৬ টাকা ১৮ পয়সা। ডিমের জন্য আলাদা টাকা না থাকলেও বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা সপ্তাহে ১-২ দিন পড়ুয়াদের ডিম দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সমস্যার মুখে পড়েছেন তাঁরা। কোথাও কোথাও একটা ডিমের দাম পৌঁছেছে সাড়ে ৭ থেকে ৮ টাকায়। তাই কার্যত বাধ্য হয়ে মিড ডে মিল থেকে ডিম বাদ পড়েছে জেলার বেশিরভাগ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে।

ডিম নিয়ে বিপাকে বীরভূমের ৪ হাজার ৯৯৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরাও। সামলানোর পথ খুঁজতে তাঁরা হিমসিম হচ্ছেন। স্কুলের মিড ডে মিলে সরকারি তরফে ডিমের জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকে না। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সপ্তাহে ৬ দিনই ৬ মাস থেকে ছ’বছরের শিশুদের অর্ধেক ডিম এবং গর্ভবতী মহিলা ও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য একটি করে ডিম বরাদ্দ। প্রতিটি ডিমের জন্য সরকারের তরফে দেওয়া হয় ৪ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ৩০টি ডিম পাইকারি দরে কিনলেও কমপক্ষে ১৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম আরও বেশি। জেলার কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের বক্তব্য, আনাজের দামও যথেষ্ট বেড়েছে। তা কিনতেই সমস্যা হচ্ছে। তার উপর ডিম। কী ভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে, তা বুঝতে পারছেন না কেউ। এ নিয়ে সরকারি তরফে কোনও নির্দেশও এখনও পর্যন্ত পৌঁছয়নি তাঁদের কাছে।

সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, ডিমের দাম বাড়লেও বীরভূমের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির কোনও সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রশাসনিক সূত্রে তার কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য চাল কেনা হয় অত্যাবশকীয় পণ্য নিগম থেকে। প্রতি কিলোগ্রাম চালের দর সেখানে ২৬ টাকা। কিন্তু আদপে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য চাল কেনার কথা ছিল ‘ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এফসিআই) থেকে। তা মিলত ৩ টাকা কিলোগ্রাম দরে। বীরভূমের সংশ্লিষ্ট দফতর এফসিআইয়ের কাছে ৯৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কেনার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিল। তখনই এফসিআই জানায়— ‘নো স্টক’। বাধ্য হয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগম থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির জন্য চাল কিনতে হয়।

সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের বীরভূম জেলা আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি বলেন, ‘‘এফসিআই থেকে চাল কিনতে পারলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের প্রত্যেক উপভোক্তার বরাদ্দ থেকে প্রায় ১ টাকা ১৫ পয়সা করে বাঁচত। সে ক্ষেত্রে ডিমের দাম বাড়লেও তা অনেকটা সামলানো যেত।’’ অরিন্দমবাবুর বক্তব্য, ডিমের দাম না কমলে আগামী সপ্তাহ থেকে ছ’দিনের বদলে ৫ দিন ডিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি কমানো হতে পারে আনাজ, সয়াবিনের পরিমাণও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid day meal Eggs Price Rise
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE