Advertisement
E-Paper

অনুদানের আলু নিয়ে বিপত্তি স্কুলে

এক শিক্ষক লিখলেন, ‘আজ শ’পাঁচেক বিদায় করলাম’। আর এক জনের প্রতিক্রিয়া, ‘কাল ভুল করে জানলা বন্ধ করে গিয়েছিলাম। আজ স্কুল খোলার পর গন্ধে টিকতেই পারছিলাম না। পাখা ফুল স্পিডে ঘুরিয়েও গন্ধ দূর হয়নি। পড়ুয়ারা বাছাই করে প্রায় কেজি দুয়েক বাইরে ফেলে এল।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৫
দলেমিলে: পড়াশোনার ফাঁকেই চলছে পচা আলু বাছা। নিজস্ব চিত্র

দলেমিলে: পড়াশোনার ফাঁকেই চলছে পচা আলু বাছা। নিজস্ব চিত্র

এক শিক্ষক লিখলেন, ‘আজ শ’পাঁচেক বিদায় করলাম’। আর এক জনের প্রতিক্রিয়া, ‘কাল ভুল করে জানলা বন্ধ করে গিয়েছিলাম। আজ স্কুল খোলার পর গন্ধে টিকতেই পারছিলাম না। পাখা ফুল স্পিডে ঘুরিয়েও গন্ধ দূর হয়নি। পড়ুয়ারা বাছাই করে প্রায় কেজি দুয়েক বাইরে ফেলে এল।’ এ-সব দেখে এক শিক্ষিকা আবার লিখলেন, ‘গন্ধে এখনও গা গুলোচ্ছে।’

এই কথোপকথন চালাচালি হচ্ছে হোয়্যাটস অ্যাপে। পুরুলিয়ার মানবাজার চক্রের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যে এই হোয়্যাটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছেন। গ্রুপের বিষয়—‘পচা আলু’! কেউ কেউ স্রেফ মেসেজ পাঠিয়েই ক্ষান্ত নন। নষ্ট আলুর টাটকা ছবিও গ্রুপে পোস্ট করছেন।

দিন দশেক আগে জেলার স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিনামূল্যে আলু দেওয়া হয়েছে। জেলার মিড-ডে মিলের অফিসার-ইন-চার্জ নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুল শিক্ষা দফতর এবং আইসিডিএস দফতরের যৌথ উদ্যোগে এটি বিশেষ প্রকল্প। কৃষি বিপণন দফতরের সহযোগিতায় বাঁকুড়া জেলা থেকে এই আলু সংগ্রহ করা হয়েছে। স্কুলগুলির জন্য ৯০৬ মেট্রিক টন এবং আইসিডিএস কেন্দ্রগুলির জন্য ১৯৬ মেট্রিক টন আলু বরাদ্দ ছিল। সবাই তা পেয়ে গিয়েছে।’’ আপাতত সেই আলুই হোয়্যাটস অ্যাপে শিক্ষকদের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে মানবাজারে। গত বছরও এই সময় স্থানীয় বাজারে আলু কেজি প্রতি আট টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সে কথা মাথায় রাখলে জেলা প্রশাসনের দেওয়া আলু স্কুল বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে খানিকটা আর্থিক সাশ্রয় দিয়েছে ঠিকই। তবে, আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে নতুন বিপত্তিও দেখা দিয়েছে।

মানবাজার থানার পাথরমহড়া প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস প্রামাণিক জানালেন, সম্প্রতি ব্লক প্রশাসন তাঁদের স্কুলে দু’প্যাকেট (১ কুইন্টাল) আলু দিয়েছে। স্কুলে ৬৩ জন পড়ুয়া। যা চাহিদা, তাতে এই আলু এক মাসের কিছু বেশি যাওয়ার কথা। ‘‘কিন্তু এই গরমে যে হারে আলু নষ্ট হতে শুরু করেছে, তাতে কত দিন যাবে কী জানি। এখন স্কুলের দরজা খুলে আগে আলু বেছে বাইরে ফেলার পরে তবে ক্লাস শুরু করি। এমন দুর্গন্ধ!’’—বললেন তাপসবাবু।

উপরপাড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ দাসের কথায়, ‘‘আমরাও দু’প্যাকেট আলু পেয়েছি। এই আলু পেয়ে আমাদের কিছু আর্থিক সাশ্রয় যেমন হল, তেমনই কাজও বেড়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ক্লাসের মধ্যেই আলু ঢেলে দিয়েছি। তা-ও নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারছি না। রোজ এক-দেড় কিলো আলু ফেলতে হচ্ছে। তা ছাড়া আলু পচে গিয়ে নতুন বিপত্তি।’’ মানবাজারের ঝাড়বাগদা গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী অনুরূপা সেন মঙ্গলবার কেন্দ্রের দরজা খুলে আগে নষ্ট আলু বাছাই করতে বসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটদের দিয়ে বাছাই করতে দিলে নষ্ট আলু থেকে যেতে পারে। সেই আলুতে রান্না করলেও বিপদ! তাই নিজেই বাছাই করতে বসেছি।’’ তিনি জানান, ৪৫ কেজি আলুতে অন্তত দেড় মাস চলার কথা। কিন্তু যে হারে আলু নষ্ট হচ্ছে, তাতে ক’দিন টেকে সেটাই প্রশ্ন।

শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দাম নিলেও বাজার থেকে অন্তত বাছাই করে আলু কেনা যায়। পুরুলিয়ার মারকাটারি গরমে অনুদানের এই আলু টিকিয়ে রাখাই দায়। এক শিক্ষকের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘অনুদানের আলু মন্দ নয়। তবে, পচা আলুর গন্ধ যে কতটা বিষম, তা-ও টের পাচ্ছি।’’

Potatoes Donation School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy