শেষযাত্রা: পুরুলিয়া শহরের পথে। নিজস্ব চিত্র
শনিবার সন্ধ্যার পরেই খবরটা ছড়িয়ে গিয়েছিল শহরে— কেপিদা আর নেই। রবিবার, দোলের দিনও পুরুলিয়া শহর থেকে গঞ্জের বিভিন্ন জটলায় আলোচনার কেন্দ্রে ছিল পুরুলিয়ার তৃণমূল বিধায়ক এবং পুরপ্রধান কেপি সিংহদেওয়ের মৃত্যুর খবর। তৃণমূল কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন গ্রুপেও তাঁর নানা মুহূর্তের ছবি ছড়িয়েছে। সঙ্গে ‘কমেন্ট’— ‘আপনাকে খুব মিস করব কেপিদা। আপনি চিরশান্তিতে থাকুন।’
প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসারে ভুগছিলেন কয়েক মাস ধরে। মনের জোরে মাস তিনেক আগে পর্যন্তও দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন নিয়ম করে। সেই মানুষটা যে সবাইকে চমকে দিয়ে আচমকা চলে যাবেন, বুঝতে পারেননি কেউই। শনিবার তাঁর শেষযাত্রায় পুরোভাগে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। সঙ্গে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রের বর্তমান ও প্রাক্তন বিধায়কেরা। সেই যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও। পা মিলিয়েছেন সাধারণ মানুষও। মৃত্যুতেও সবাইকে মিলিয়ে দিলেন কেপি সিংহদেও।
পঞ্চকোট রাজপরিবারের সন্তান কেপি সিংহদেওয়ের সেই আশির দশকে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ। পুরুলিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক সুকুমার রায়ের সংস্পর্শেই সরাসরি রাজনীতির ময়দানে। ১৯৮২-তে আড়শা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার বিধানসভায় লড়ে হার। তার পরে একাধিক বার বিধানসভা থেকে লোকসভা, নানা সময়ে নির্বাচনে লড়েছেন তিনি। ২০১১ সালে প্রথমবার জয়ী হন পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে।
শোকযাত্রায় পা মেলানো ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি নিশিকান্ত মেহেতা বলছিলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে একাধিক বার বিধানসভা ও লোকসভায় লড়াই করেছিলেন কেপি। আমরাই জিতেছি। কিন্তু, গননাকেন্দ্রে পিছিয়ে পড়তে থাকায় অনেকেই চলে গেলেও উনি শেষ পর্যন্ত থাকতেন। ফল জেনে বিপক্ষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার পরে যেতেন। এমনই ভদ্র ব্যবহার ছিল ওই মানুষটার।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ রায় শোনালেন অন্য এক গল্প। তখনও বামেরা ক্ষমতায়। কেপি তৃণমূলের জেলা সভাপতি। রঘুনাথপুরে ডিভিসি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ হবে। সব রাজনৈতিক দল নিয়ে মহকুমাশাসকের অফিসে বৈঠক। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘এখানে প্রকল্প হচ্ছে শুনেই মুক্তকন্ঠে অভিনন্দন জানান আমাদের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াকে।’’
বিধায়ক কিংবা পুরপ্রধান হয়েও নানা বিষয়ে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই হয়েছে কেপি সিংহদেওর। গত বছর প্রথম দিকে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিগ্রহ বিতর্কে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নাক গলানো কাম্য নয়। এই মত ব্যক্ত করে দলের একাংশের বিরাগভাজন হলেও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি। কেপি-র দীর্ঘদিনের সঙ্গী, তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘তিনি মনে করতেন, কর্মীদের কথা না শুনলে দল চালানো যাবে না।’’ শান্তিরামবাবুর কথায়, ‘‘আমি কেপিদার থেকে একটু সিনিয়র। তবে দলে যখনই কোনও সমস্যায় পড়তাম বা গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়োজন হত, তখনই কেপিদার কথা মনে পড়ত। তাঁর মতামত নিয়েই কাজ করতাম।’’
সনৎ মুখোপাধ্যায়, সুকুমার রায় আগেই চলে গিয়েছেন। এ বার কেপি। তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘আজীবন প্রতিবাদী এক রাজনৈতিক চরিত্রের যাত্রা থামল বলতে পারেন।’’
রাঁচি রোডের বাঁশবাংলোয় আর বসবে না প্রভাতী দরবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy