Advertisement
E-Paper

জরিমানায় ডেঙ্গি-শিক্ষা হচ্ছে কই?

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মহামারী বিশেষজ্ঞ সতীনাথ ভুঁইয়া ও পতঙ্গ বিশারদ সঙ্কর্ষণ রায় ওই এলাকা ঘুরে বলেন, ‘‘একাধিক বাড়িতে এডিসের লার্ভা দেখেছি। এখন যা আবহাওয়া, তাতে দশ দিনের মধ্যে লার্ভা থেকে এডিস মশা জন্মাবে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০৮:২০
সরেজমিন: পুরুলিয়া শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্পূরবাগান এলাকায় জমা জলে ডেঙ্গির লার্ভা রয়েছে কি না দেখছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

সরেজমিন: পুরুলিয়া শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্পূরবাগান এলাকায় জমা জলে ডেঙ্গির লার্ভা রয়েছে কি না দেখছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

জল জমালে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। কিন্তু, তাতে পুরুলিয়া শহরের ডেঙ্গি কবলিত এলাকার বাসিন্দারা কতখানি সচেতন হয়েছেন, সেই প্রশ্ন উঠে গেল। বৃহস্পতিবার শহরের বেশ কিছু এলাকায় পরিস্থিতি সরজমিনে দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে বই কমেনি।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মহামারী বিশেষজ্ঞ সতীনাথ ভুঁইয়া ও পতঙ্গ বিশারদ সঙ্কর্ষণ রায় ওই এলাকা ঘুরে বলেন, ‘‘একাধিক বাড়িতে এডিসের লার্ভা দেখেছি। এখন যা আবহাওয়া, তাতে দশ দিনের মধ্যে লার্ভা থেকে এডিস মশা জন্মাবে। তাই সর্বত্রই সচেতনতা খুব জরুরি।’’

ইতিমধ্যেই এই শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৬৯। আক্রান্তদের বেশির ভাগই দেশবন্ধু রোড ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা বলেই স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই এলাকাটি ১ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে।

এই এলাকার মহালক্ষ্মী বাগান লেন, আনন্দ সরণি সন্নিহিত এলাকায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ডেঙ্গি-আক্রান্তের হদিস মিলেছে। সেখানে কিছু বাড়ি ঘুরে জমা জল তেমন দেখা না গেলেও দেশবন্ধু রোডের পিছনের দিকে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্পূরবাগান এলাকায় জল জমা নিয়ে ততটা সচেতনতা লক্ষ করা যায়নি বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য-আধিকারিকেরা।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কর্পূর বাগান এলাকা থেকে চার জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তাঁদের মধ্যে প্রথম যাঁর ডেঙ্গি হয়েছিল, তিনি দেশবন্ধু রোডে কাজ করেন। তারপরে বাকিরা অসুস্থ হন।’’ এ দিন ওই এলাকায় যান সতীনাথবাবু ও সঙ্কর্ষণবাবু।

তাঁরা এ দিন ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে ছোট-বড় পাত্রে জমা জলে ডেঙ্গির জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন। এই এলাকায় বস্তিও রয়েছে। একটি বাড়িতে ঢুকে উঠোনের এক প্রান্তে খোলা পাত্রে জল জমে রয়েছে দেখে এগিয়ে যান স্বাস্থ-আধিকারিকেরা। তাঁরা খুঁটিয়ে দেখেন, সেই জলে গিজগিজ করছিল এডিস মশার লার্ভা। বাড়ির সদস্যদের ডেকে সেই লার্ভা দেখিয়ে সতর্ক করে জল ফেলে দেন তাঁরা। এই বাড়ির সদস্য লক্ষ্মী বাউরি বলেন, ‘‘ওই টুকু জলে যে মশার লার্ভা জন্মাবে, তা বুঝতে পারিনি।’’

পাশের বাড়িতেও একই দৃশ্য। যথারীতি উঠোনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পাত্রে জমা জলে এডিস মশার লার্ভা দেখা যায়। সঙ্কর্ষণবাবু বলেন, ‘‘আগে আমরা বলতাম জল জমাবেন না। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে জল তো জমবেই। তাই কোথাও জল জমলেই ফেলে দিতে বলা হচ্ছে।’’ এই বাড়ির বধূ আরতি বাউরি বলেন, ‘‘এ বার থেকে সতর্ক থাকব।’’ এই এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, যে ভাবে এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়েছে তাতে পুরসভার রাসায়নিক ও ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর বিষয়ে আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন।

সচেতনতা যে একেবারেই তৈরি হয়নি, এমনটা নয়। দেশবন্ধু রোড লাগোয়া ২১ নম্বর ওয়ার্ডের রেনি রোডে বিদ্যুতের লাইনের জিনিসপত্রের একটি গুদামে গিয়ে দেখা গিয়েছে খোলা জায়গায় পড়ে থাকা টায়ার ফুটো করে রেখেছেন কর্মীরা। স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা জানান, দিন কয়েক আগে তাঁরা এই গুদাম গিয়ে দেখেছিলেন, খোলা জায়গায় পড়ে থাকা টায়ারে ও ছোট বড় খোলা পাত্রের জলে এডিসের লার্ভা রয়েছে। সে দিন সর্তক করেছিলেন তাঁরা। গুদামের কর্মী আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিক্রম যাদব বলেন, ‘‘ডেঙ্গির ভয়াবহতা দেখে আমরা সতর্ক হয়েছি।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, ‘‘জল জমা নিয়ে সচেতনতা যে একেবারেই নেই, তা বলব না। তবে আরও প্রয়োজন। প্রত্যেকে সচেতন হয় এডিসের লার্ভা তৈরি রুখতে পারলেই ডেঙ্গি থামানো সম্ভব।’’

Dengue Health Medical
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy