Advertisement
E-Paper

রাহুলের সভায় দাবি, বাবুলকে চাই

তিনি আগেও এসেছেন। ফের এলেন। কিন্তু পুরভোটে বাজিমাত করতে বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের তুলনায় রঘুনাথপুরে দলের কর্মীরা এখন দলের তারকা নেতা-নেত্রীদেরই বেশি করে চাইছেন। অন্তত শুক্রবার রঘুনাথপুরে রাহুলের জনসভার চেহারা দেখে দলের নিচুতলার কর্মীদের এই কথাটাই মেনে নিয়েছেন জেলা নেতারাদের একাংশও।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৮
সন্ধ্যায় পুরুলিয়া শহরে রোড-শোতে কিছুটা ভিড় হওয়ায় স্বস্তি ফিরল বিজেপিতে।

সন্ধ্যায় পুরুলিয়া শহরে রোড-শোতে কিছুটা ভিড় হওয়ায় স্বস্তি ফিরল বিজেপিতে।

তিনি আগেও এসেছেন। ফের এলেন। কিন্তু পুরভোটে বাজিমাত করতে বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের তুলনায় রঘুনাথপুরে দলের কর্মীরা এখন দলের তারকা নেতা-নেত্রীদেরই বেশি করে চাইছেন। অন্তত শুক্রবার রঘুনাথপুরে রাহুলের জনসভার চেহারা দেখে দলের নিচুতলার কর্মীদের এই কথাটাই মেনে নিয়েছেন জেলা নেতারাদের একাংশও।

রঘুনাথপুর কলেজে এ বার আশাতীত সাফল্য পেয়েছে আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখেও রঘুনাথপুর পুরসভায় তৃণমূলের পরেই বিজেপির সমর্থন বেশি। এই পুরশহরের ১৩টি ওয়ার্ডের ৫টিতেই এগিয়ে ছিল তারা। তার উপরে গত জানুয়ারি মাসে রঘুনাথপুর কলেজে আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সাফল্য বিজেপি কর্মীদের মনোবল আরও বাড়িয়েছে। তাই রঘুনাথপুরকে দিয়েই রাহুলের এই জেলায় নির্বাচনী জনসভা শুরু হয়। দুপুরে তিনি ঝালদায় যান। সন্ধ্যায় পুরুলিয়া শহরে রোড শো করেন রাহুল।

কিন্তু বেলা ১১টায় রঘুনাথপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি সঙ্ঘের মাঠে রাহুল যখন সভা করেন, তখন মাঠের অর্ধেকটাই ফাঁকা থেকে যায়। কেন এমন হল? তা নিয়ে দিনভর নানা আলোচনা শোনা গিয়েছে বিজেপির অন্দরে। তবে কি বিজেপির সমর্থনে ভাটা শুরু হয়েছে? দলের নেতা থেকে কর্মী সকলেরই দাবি, কাঠফাটা রোদের মধ্যে মাঠে ঠায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শোনা খুবই কষ্টের। অনেকে তাই মাঠের বাইরে দোকানে বা গাছের ছায়ার নীচে দাঁড়িয়ে থেকে রাহুলের কথা শুনেছেন।

তবে দলের অনেক কর্মী অন্য কথাও বলছেন। তাঁদের মতে, বাঁকুড়া লোকসভার প্রার্থী হয়ে রাহুলবাবু ২০০৯ সালে একাধিকবার রঘুনাথপুরে প্রচারে এসেছেন। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ডিভিসির প্রকল্পের জমি আন্দোলনেও এসেছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে রঘুনাথপুরে লোকসভা ভোটে ভাল ফলও হয়েছে বিজেপির। তাই রাহুলবাবু এলাকার অনেকের কাছে চেনামুখ। তুলনায় আসানসোলের তারকা সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে মানুষের কৌতূহল অনেক বেশি। তার উপরে তিনি কেন্দ্রের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীও বটে। তাই পুরভোটে তাঁকে দিয়ে প্রচার করিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে টেক্কা দেওয়ার ইচ্ছে বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের মনে।

এ দিন দলের স্থানীয় নেতা কর্মীরাও রাহুলবাবুর কাছে বাবুলকে এনে প্রচার করানোর প্রস্তাব জানিয়েছেন। পাশাপাশি দাবি উঠেছে দলের দুই তারকা রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায়কে দিয়েও রঘুনাথপুরে প্রচার করানো হোক। কারণ রাজ্য রাজনীতিতে সম্প্রতি হামলার ঘটনাকে ঘিরে রূপার গুরুত্বও দলের কর্মীদের কাছে বেড়ে গিয়েছে। তার উপরে দুই নেত্রীই অভিনেত্রী হিসেবে বিশেষ পরিচিত। তবে তবে রঘুনাথপুরের বিজেপি কর্মীদের মনোবাসনা পুরভোটের আগে পূর্ণ হবে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানিয়ে যেতে পারেননি রাহুলবাবু।

তবে বাবুলের আশা ছাড়তে নারাজ বিজেপি কর্মীরা। দলের একাধিক শহর নেতাই বলছেন, ‘‘রঘুনাথপুরের লাগোয়া শহর আসানসোল। সেখানে বাবুল তৃণমূলের শ্রমিক নেত্রী দোলা সেনের সঙ্গে যে ভাবে লড়াই করে সাংসদ হয়েছেন তার প্রভাব দামোদর পেরিয়ে ভালভাবেই পড়েছে রঘুনাথপুরে। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রে পুর ও নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীও। তাই পুরভোটে তিনি এলে অনেক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোটারদের মনে।’’ বস্তুত প্রচারে রঘুনাথপুরে আসানসোলের তারকা সাংসদকে আনার চেষ্টা বেশ কিছুদিন ধরেই করছে বিজেপির স্থানীয় নেতারা। বিজেপির রঘুনাথপুর শহর মণ্ডলের সম্পাদক তথা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শুভঙ্কর কর বলেন, ‘‘রঘুনাথপুরে উল্লেখযোগ্য ফল করতে বাবুল সুপ্রিয়কে প্রচারে চাইছে দলের অন্য প্রার্থীরা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলির সদস্যেরা। দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আমরা আগেই বাবুল সুপ্রিয়কে রঘুনাথপুরে প্রচারে আনার জন্য দরবার করেছি। এ দিন রাজ্য সভাপতির কাছেও ওই দাবি জানানো হয়েছে।”

জেলায় তিন পুরসভার মধ্যে রঘুনাথপুরে বিজেপির অবস্থা যথেষ্ট ভাল হওয়ায় দলের জেলা নেতৃত্বও চাইছেন রঘুনাথপুরে বাজিমাত করতে প্রচারে আনা হোক বাবুল, রূপা ও লকেটদের। রাজ্য সভাপতির কাছে এ দিন সেই দাবি পেশ করা হয়েছে বলে জানান দলের জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

আর তাঁদের চাহিদাটা এ দিন আরও বেশি প্রকট করে দিয়েছে রাহুলের সভার অর্ধেক ফাঁকা মাঠের ছবি। আশপাশের ব্লক এলাকা থেকে গাড়িতে লোক তুলে এনেও মাঠ ভরানো যায়নি। যদিও বিজেপির ব্যাখ্যা, খুব কম সময়ের প্রস্তুতিতে এই সভা করতে হয়েছে। তার উপরে রোদের তেজও কম ছিল না।

বিকেলে ঝালদা শহরের বাজারে সর্বজনীন দুর্গামন্দির প্রাঙ্গণে রাহুলের সভায় কিছুটা হলেও লোক ছিল। তবে সন্ধ্যায় পুরুলিয়া শহরে রাহুলের রোড-শোয় বেশ ভাল লোক হয়েছে বলে দাবি বিজেপি নেতা-কর্মীদের। সব জায়গাতেই রাহুল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। সারদা-কাণ্ড থেকে সম্প্রতি রূপার উপরে হামলা নিয়ে তিনি সরব ছিলেন।

—নিজস্ব চিত্র।

Babul Suprya Suvra prakash Mondal Raghunathpur Rahul Singh BJP Trinamool municipal election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy