Advertisement
E-Paper

খালাসির মৃত্যু, উত্তপ্ত রাজগ্রাম

এ দিন সকালে ঘটনাটি ঘটেছে মুরারই থানার রাজগ্রাম পাথর শিল্পাঞ্চলের জিতপুর গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম হিরণ শেখ (২২)। বাড়ি একই থানার ধিতড়া গ্রামে।

তন্ময় দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৮
গণরোষ: দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতার ভিড়ে পুলিশ। রাজগ্রামে। নিজস্ব চিত্র

গণরোষ: দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতার ভিড়ে পুলিশ। রাজগ্রামে। নিজস্ব চিত্র

ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ওই গাড়িরই খালাসির মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার অগ্নিগর্ভ হল রাজগ্রাম পাথর শিল্পাঞ্চল। উত্তেজিত জনতা ট্রাক, পাথর ব্যবসায়ীর অফিস এবং সেখানে রাখা ডিজেল জেনারেটরে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় ছ’ঘণ্টা পরে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ দিন সকালে ঘটনাটি ঘটেছে মুরারই থানার রাজগ্রাম পাথর শিল্পাঞ্চলের জিতপুর গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম হিরণ শেখ (২২)। বাড়ি একই থানার ধিতড়া গ্রামে। এলাকায় গিয়ে জানা গেল, জিতপুরের একটি খাদান থেকে দশ চাকার ট্রাকে পাথর বোঝাই করে গাড়ি পিছন দিকে বের করছিলেন চালক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তখন চলন্ত গাড়িতে চাপতে গিয়ে পা-হড়কে ট্রাকের নীচে চলে যান হিরণ। শরীরের উপর দিয়ে চাকা চলে যায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে চালক ট্রাক ছেড়ে পালিয়ে যান।

সেই সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এলাকার পাথর ব্যবসায়ী সিরাজুল খান। তাঁকে সাহায্যের আবেদন করেন শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু, তিনি ‘আসছি’ বলে এলাকা ছাড়েন বলে বিক্ষোভে থাকা শ্রমিকদের অভিযোগ। যদিও সিরাজুলের দাবি, ‘‘রক্ত দেখে আর এলাকায় থাকতে পারিনি। তবে অ্যাম্বুল্যান্স এবং পুলিশকে আমিই খবর দিয়েছিলাম। তা ছাড়া আমার ক্রাশার থেকে পাথর বোঝাই হয়নি। ট্রাকও আমার ছিল না।’’ তার পরেও এলাকার মানুষ তাঁর অফিসে হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ সিরাজুলের।

এ দিকে, এক ঘণ্টারও বেশি সময় রক্তাক্ত অবস্থায় এলাকাতেই পড়েছিলেন গুরুতর আহত হিরণ। কিন্তু, পাথর শিল্পাঞ্চলে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স না থাকায় এবং পাথর ব্যবসায়ীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ। চোখের সামনে এমন মৃত্যু দেখে শ্রমিক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ একে একে ট্রাক এবং সিরাজুলের অফিস ও ডিজেল জেনারেটরে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনার দু’ঘণ্টা পরে এলাকায় পুলিশ ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু, উত্তেজিত মানুষের প্রতিরোধে পিছিয়ে আসে। বেলা চারটে নাগাদ রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে গিয়ে দেহ উদ্ধার করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, খাবারের দোকানি নাজেমা বিবি বলেন, “চোখের সামনে ছেলেটা মরে গেল। দুধ গরম করে খাইয়েছি। বার বার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু, কোনও অ্যাম্বুল্যান্স বা পুলিশের গাড়ি মেলেনি। গাড়ি পেলে হয়তো বাঁচানো যেত।’’ হিরণের মামা তহিদুল শেখের কথায়, “সকালে পাথর বোঝাই করতে এসে আর বাড়ি ফিরল না। এখানে পাথর ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা আয় করছে। অথচ, কোনও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকুও নেই।’’ স্থানীয় বাসিন্দা গাউস শেখ জানালেন, চোখের সামনে এই ঘটনা দেখে মানুষ উত্তেজিত হয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

হিরণের বাবা লাল্টু শেখ জানালেন, চার মেয়ে আর দুই ছেলের মধ্যে হিরণ বড়। চার বছর আগে এক দুর্ঘটনায় লাল্টুবাবুর একটি পা অকেজো হয়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সংসারের হাল ধরার জন্য বড়ো ছেলে ট্রাক চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই জন্য খালসির কাজ করতে শুরু করে। ওর রোজগারে কষ্ট করে সংসার চলত। এখন কী হবে কিছু জানি না।’’

এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কোনও কিছু ঘটে গেলে ছুটতে হয় ১২ কিলোমিটার দূরে রাজগ্রাম স্বাস্থকেন্দ্রে। কাছেপিঠে চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা থাকলে প্রাণ বাঁচানো যেত। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে পাথর শিল্পাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করতে হবে। ক্ষতিপূরণের দাবিও উঠেছে। মালিক পক্ষকে এলাকায় আসার দাবিও তোলা হয়। বিকেলের পরে পুলিশের সঙ্গে পাথর ব্যবসায়ীরা গিয়ে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসগার আলির দাবি, “আমাদের অ্যাম্বুল্যান্স এখন বিকল হয়ে রয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে অবশ্য অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়েছিল। এলাকার মানুষই ঢুকতে দেননি।”

Rajgram Murarai Truck Cleaner Agitation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy