Advertisement
E-Paper

আশ্বাস সার, কুঁয়ে নদীর সেতু হয়নি রামঘাটিতে

নদী পারাপারের মাধ্যম বলতে রয়েছে নৌকা কিংবা লোহার কড়াই।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৩:৪৯
ভোগান্তি: জল পেরিয়ে নৌকা ধরতে হয় বাসিন্দাদের। ছবি: কল্যাণ আচার্য

ভোগান্তি: জল পেরিয়ে নৌকা ধরতে হয় বাসিন্দাদের। ছবি: কল্যাণ আচার্য

বর্ষা শুরু হতে না হতেই সেতুর অভাবে দুর্ভোগ শুরু হয়ে গিয়েছে লাভপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষজনের। নদী পারাপারের ওই দুর্ভোগ অবশ্য দীর্ঘদিনের। সেতু তৈরির জন্য বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা না হওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকার মানুষের মধ্যে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লাভপুরের রামঘাটি ও বলরামপুরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুঁয়ে নদী। সেই নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময়ই কমবেশি জল থাকে।

ওই নদী পেরিয়েই দুই পারের বিস্তীর্ণ তল্লাটের মানুষজনকে স্কুল-কলেজ, বাজারহাট-সহ জীবনজীবিকার প্রয়োজনে দিনে বহুবার যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু, নদী পারাপারের মাধ্যম বলতে রয়েছে নৌকা কিংবা লোহার কড়াই। নদীতে স্রোত বাড়লে সে পথও বন্ধ। তখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন দুই পাড়ের মানুষজন। অন্যথায় প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ঘুরপথে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছতে হয়।

রামঘাটির স্কুলছাত্রী আসমাতারা খাতুন, কলেজ পড়ুয়া রমজান আলি বলেন, ‘‘স্কুল, কলেজ এবং গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার জন্য আমাদের দিনে একাধিক বার নদী পারাপার করতে হয়। প্রতিবার নৌকা পারাপারের জন্য ২ টাকা করে দিতে হয়। বর্ষাকালে মাঝেমধ্যেই নৌকা বন্ধ হয়ে যায়। তখন হয় আমাদের ৪৫ কিমি ঘুরে যেতে হয় অথবা স্কুল-কলেজ যাওয়াআসা বন্ধ থাকে।’’ রামঘাটির বাসিন্দা জয়নাল শেখ, বলরামপুরের হাঁকাই শেখদের ক্ষোভ, ‘‘জীবিকার তাগিদে আমাদের দিনে বহুবার নদী পারাপার করতে হয়। কিন্তু, সেতুর অভাবে প্রতি বছর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই সেতু তৈরি হলে তা এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা নেবে। কারণ নদীর এক দিকে রয়েছে বলরামপুর–কীর্ণাহার সড়ক। ওই সড়কের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে সিউড়ি-কাটোয়া, কীর্ণাহার-বোলপুর সড়ক। কীর্ণাহারের বুক চিরে চলে গিয়েছে আমোদপুর-কাটোয়া রেলপথ। কীর্ণাহারেই রয়েছে বাজার-হাট, স্কুল, ব্যাঙ্ক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নদীর অন্য পাড়ে রামঘাটি গ্রামের অদূরে রয়েছে লাভপুর-লাঙ্গলহাটা সড়ক। ওই রাস্তার সঙ্গেই যোগ রয়েছে মুর্শিদাবাদেরও। আর রয়েছে বিস্তীর্ণ কৃষিপ্রধান অঞ্চল। স্বাভাবিক ভাবেই দুই পাড়ের সড়ক দু’টিকে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে যোগ করা হলে অর্থনীতির চেহারাই বদলে যাবে বলে মনে করেন এলাকার মানুষ। পারস্পরিক আদানপ্রদানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হবেন নদীর দু’পারের বহু গ্রামের মানুষজন ।

সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের দাবি মেনেই ২০১৪ সালে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মাপজোক করা হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। ব্যস ওইটুকুই। তার পরেও সেতু নির্মাণে কোনও উদ্যোগ চোখে না পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। লাঙ্গলহাটার সুরেশ বাগদি, ঠিবার আনন্দ মণ্ডলদের কথায়, ‘‘বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকেই আমরা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে শুধু ‘হচ্ছে হবে’ আশ্বাস শুনে আসছি। কয়েক বছর আগে মাপামাপি দেখে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে মনে আশা জেগেছিল। কিন্তু আজও কাজের কাজ কিছুই হল না। জানি না, বেঁচে থাকতে সেতু দেখে যেতে পারব কি না।’’ সমসযার কথা মানছেন সংশ্লিষ্ট ঠিবা পঞ্চায়েতের প্রধান মিঠুন কাজীও। তিনি বলেন, ‘‘ওই সেতুর অভাবে এলাকার ১৫-২০টি গ্রামের বাসিন্দা দুর্ভোগে পড়েন। পঞ্চায়েতের তরফ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সেতু তৈরি হলে মানুষের সমস্যা অনেক কমবে।’’

তৃণমূলের এলাকার পর্যবেক্ষক তথা জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘সব কাজ তো এক সঙ্গে করা তো সম্ভব নয়। আমরা ক্ষমতায় আসার লাভপুরে গুনুটিয়া এবং লা’ঘাটায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু তৈরি করছি। রামঘাটির সেতুর ব্যাপারে বিশদে খোঁজ না নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না।’’

Labpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy