Advertisement
E-Paper

বরাদ্দ ভাগ করে সংস্কারের সিদ্ধান্ত

রাস্তাঘাটের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। চলতি বর্ষায় হাল আরও খারাপ হয়েছে গোটা বাঁকুড়া পুরএলাকার নানা রাস্তার। বেশ কিছু জায়গায় জলের তোড়ে নালা ভেঙে গিয়ে রাস্তার উপরে নোংরা জল উপচে পড়তে দেখা যাচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৫
এমনই শোচনীয় হাল শহরের প্রতাপবাগানের রাস্তার। — নিজস্ব চিত্র।

এমনই শোচনীয় হাল শহরের প্রতাপবাগানের রাস্তার। — নিজস্ব চিত্র।

রাস্তাঘাটের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। চলতি বর্ষায় হাল আরও খারাপ হয়েছে গোটা বাঁকুড়া পুরএলাকার নানা রাস্তার। বেশ কিছু জায়গায় জলের তোড়ে নালা ভেঙে গিয়ে রাস্তার উপরে নোংরা জল উপচে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এই সবের জেরে ক্ষোভ জমেছে পুরবাসীর মধ্যে। আর সেই ক্ষোভের আঁচ পেয়েই রাজ্য অর্থ কমিশনের দেওয়া টাকায় বকেয়া মেটানোর পরিবর্তে বেশিরভাগটাই ওয়ার্ড উন্নয়নের পিছনে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা।

বাঁকুড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য অর্থ কমিশনের (এসএফসি) ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের প্রথম কিস্তির প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বাঁকুড়া পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে কয়েক মাস আগে। গত অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারদের প্রায় ৫৬ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। টাকা পাওয়ার পর বোর্ড মিটিংয়ে ঠিকাদারদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করা হয়।

কিন্তু বেশির ভাগ কাউন্সিলরই তাতে আপত্তি তুলে ওয়ার্ড উন্নয়নের খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তোলেন। শেষ পর্যন্ত ওই কাউন্সিলরদের দাবি মেনেই প্রায় ৭৩ লক্ষ টাকা ২৪টি ওয়ার্ডকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে জনসংখ্যার ভিত্তিতে। ১০ লক্ষ টাকা জলকলের কাজের জন্য পুরসভা নিজস্ব তহবিলে রাখা হয়েছে। আর বাকি প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “এসএফসির টাকা বেশ কয়েক দফায় পুরসভাকে দেওয়া হয়। আমরা প্রথম দফার টাকা পেয়েছি। ঠিকাদারদের এই দফা থেকে অর্ধেক পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা আগামী দফায় দেওয়া হবে। ওয়ার্ড উন্নয়নের দিকে এ বার আমরা বিশেষ জোর দিয়েছি।”

এসএফসি-র টাকা থেকে ওয়ার্ডে উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি পুরসভা নিজস্ব সম্পদও কিনতে পারে। তবে কোনও পরিবারকে ব্যক্তিগত ভাবে বাড়ি বা শৌচালয় এই প্রকল্পের টাকা থেকে বানিয়ে দেওয়া যায় না। শহরের নানা এলাকার রাস্তাঘাট বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রামপুর, প্রতাপবাগান, কেন্দুয়াডিহি, প্রণবানন্দপল্লি, সারদাপল্লি, কেঠারডাঙার মতো এলাকায় রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে খানা খন্দে ভরে গিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। দ্বিচক্র যান বা রিকশায় চড়ে যাঁরা যাতায়াত করেন রাস্তার হাল খারাপ হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। খন্দপথে প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটছে।

বাঁকুড়ার বাসিন্দা অরুণাভ পাত্র, সনাতন রক্ষিতদের ক্ষোভ, “শহরের রাস্তা ঘাট একেবারে বেহাল হয়ে পড়েছে। বর্ষার জল জমে থাকছে রাস্তার গর্তে। গাড়ি সেই গর্তের উপর দিয়ে গেলে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হচ্ছে। জল ছিটকে পথচারীদের গায়েও লাগছে।” বাঁকুড়া পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের জলটাঙ্কিগড়া, রক্ষাকালীতলা এলাকার রাস্তাঘাট ও নালার হাল খুবই খারাপ। নালা ভেঙে এই এলাকায় নোংরা জল রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। রাস্তাও ছোট বড় গর্তে ভরে গিয়েছে।

এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের রাধারানি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার ওয়ার্ডের রাস্তা ও নিকাশী ব্যবস্থার সমস্যার কথা বহুবার পুরসভাকে জানিয়েছি। কিন্তু টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় কাজ করে উঠতে পারিনি। বোর্ড মিটিংয়ে এসএফসির বেশিরভাগ টাকাই ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানোর কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছিল। তাতে আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম।” তাঁর ওয়ার্ডে বরাদ্দ টাকা থেকে রাস্তা ও নালা সংস্কার করানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই ওয়ার্ডে প্রায় ১ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে পুরসভা।

বেহাল দশা দেখা যাচ্ছে বাঁকুড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডেরও। এলাকার কুণ্ডুপাড়া এলাকার একটি কালভার্টের জল প্রায়ই রাস্তার উপর উঠে যায়। দশেরবাঁধ বস্তি পাড়া এলাকার কাঁচা রাস্তাটির হালও বর্ষায় খারাপ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই রাস্তাটি ঢালাই করার দাবি তুলছেন দীর্ঘদিন ধরেই। ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস লাহা অবশ্য এসএফসি-র ফান্ড থেকে কুণ্ডুপাড়ার কালভার্ট সংস্কার ও বেশ কিছু কাঁচা রাস্তা পাকা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “রাস্তাঘাট ও নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যা কমবেশি সব ওয়ার্ডেই রয়েছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু হবে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে।”

তবে সমস্যা মেটাতে বরাদ্দ টাকা যথেষ্ট নয় বলেই দাবি করছেন বহু কাউন্সিলর। পুরপ্রধান মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে নিয়মিত কাজ চলছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে। এসএফসি-র টাকায় উন্নয়নের গতি বাড়বে সন্দেহ নেই। আগামী দিনে আরও বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আসবে বাঁকুড়া পুরসভায়।”

bankura Road damaged SFC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy