Advertisement
E-Paper

ক্ষোভ বাড়াচ্ছে বেহাল জাতীয় সড়ক

দৃশ্য ১: সিউড়ি-দুর্গাপুরগামী সরকারি বাস। সিউড়ি শহরের বাইরে এসে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরল। দিব্যি চলছিল বাসটি। কিন্তু, বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে আসতেই শুরু হল দুর্ভোগ। অসম্ভব ঝাঁকুনির চোটে সিটে বসে থাকাই দায় যাত্রীদের।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০১:০৭
এমনই হাল রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের। সাতকেন্দুরী এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

এমনই হাল রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের। সাতকেন্দুরী এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

দৃশ্য ১: সিউড়ি-দুর্গাপুরগামী সরকারি বাস। সিউড়ি শহরের বাইরে এসে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরল। দিব্যি চলছিল বাসটি। কিন্তু, বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে আসতেই শুরু হল দুর্ভোগ। অসম্ভব ঝাঁকুনির চোটে সিটে বসে থাকাই দায় যাত্রীদের। হঠাৎ-ই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল উপরে জিনিসপত্র রাখার খাঁচাটি। হতভম্ভ যাত্রীরা। আকস্মিকতা কটিয়ে অনেকেই চালকের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, ‘‘দাদা আস্তে চালান। রাস্তার অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন না। অন্নপ্রাশনের খাবার উঠিয়ে আনবেন মনে হচ্ছে!’’ বাসটিতে যাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় কাউকে চোট পেতে হয়নি।

দৃশ্য ২: দুর্গাপুর থেকে মালদাগামী বাসে চড়ে পিছনের সিটে বসে জানালায় কনুই ঠেসিয়ে লম্বা ঘুম দিচ্ছিলেন এক ভদ্রলোক। দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরী মোড় আসতেই আচমকা এক ঝাঁকুনিতে ছিটকে পড়লেন। আঙুল কেটে রক্তারিক্ত। বেজায় চোটে গিয়ে প্রায় চালককে মারতে যাওয়ার উপক্রম। সকলে তাঁকে বোঝালেন দোষ চালকের নয়, দোষ আসলে বেহাল রাস্তার। রক্তাক্ত আঙুল কোনও রকমে চেপে ধরে গজগজ করতে থাকলেন আহত ভদ্রলোক। পাশ থেকে অপর একজন বলে উঠলেন, ‘‘নরক যন্ত্রণার কথা জানা নেই। তবে সড়ক-যন্ত্রণা টের পাচ্ছি!’’

দৃশ্য ৩: জাতীয় সড়ক ধরে চিনপাই বাইপাসের কাছে আটকে গেল দেউঘর-বর্ধমান রুটের একটি বেসরকারি যাত্রিবাহী বাস। সামনে বিশাল যানযট। এক ইঞ্চি নড়ছে না। জানা গেল সামনেই বক্রেশ্বর সেতুর উপর যন্ত্রাংশ ভেঙে ফেঁসে গিয়েছে পাথর বোঝাই লরি। সৌজন্যে— সেই অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক-ই।

ঘটনা হল, ভিন্ রাজ্যে জাতীয় সড়ক বললে যে চকচকে মসৃণ সাদা ডিভাইডার দেওয়া রাস্তার কথা চোখে ভাসে, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের দুবরাজপুর থেকে কচুজোর পর্যন্ত রাস্তায় কেউ যদি একবার যাতায়াত করেন, মুহূর্তে সেই ধারণাটাই বদলে যাবে। এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে এই রাস্তা। ১ থেকে ২ ফুট গভীর অসংখ্য বড় বড় খানাখন্দে ভরা এই রাস্তা। আর তাতে বর্ষার জল জমে মরণফাঁদ তৈরি হয়ে উঠেছে। এমন এক জনকেও পাওয়া যাবে না যে রাস্তায় যাতায়াত করার সময় বিরক্তি প্রকাশ করেন না। নিত্যযাত্রীরা ভয়ে থাকেন, ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছব তো! কারণ বেহাল রাস্তায় প্রতি দিনই একাধিক লরি বা ভারী যান খারাপ হয়ে পড়ে থাকে। যার পরিণতি— যানজট। অথচ জাতীয় সড়কের এই অংশটুকু অনেক আগেই সংস্কার হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বর্ষার আগে সেই কাজের সিকিভাগও করতে পারেনি সংস্থা। বরং যেটুকু অংশ সংস্কার হয়েছিল, সেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে অসংখ্য ভারী যানবাহনের চাকার নীচে।

এ দিকে, কবে ভাল হবে রাস্তা, কবে যন্ত্রণার মুক্তি হবে, সে নিয়ে বিরক্তির শেষ নেই এই রাস্তা ব্যবহারকারীদের। শুধু যাত্রীরা নন, চরম বিরক্ত চালক থেকে গাড়ির মালিক— সকলেই। জেলার একটি বাসমালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এত ভয়ঙ্কর রাস্তায় কী করে গাড়ি চালাচ্ছি, তা আমরাই জানি। যে কোনও সময় বড় ধরনের বিপদ ঘটে যাবে। প্রশাসন সব জেনেও কেন যে এত উদাসীন, ভেবে অবাক হচ্ছি। অবিলম্বে রাস্তাটি সংস্কার হওয়া দরকার।’’ জাতীয় সড়কের বেহাল দশা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল নেতা চন্দ্রনাথ সিংহ-ও। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ওই রাস্তা। আমাদের তরফে যেখানে যা জানানোর জানিয়েছি, কিন্তু কেন যে কাজ হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।’’ এলাকাবসী জানাচ্ছেন, গত জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে এই রাস্তা সংস্কারের কথা বলা থাকলেও বেহাল জাতীয় সড়কের এই অংশের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে মার্চ মাসে। কিন্তু কাজের গতি এত শ্লথ ছিল যে বর্ষার আগে রাস্তা সংস্কারের কাজ যে সম্পূর্ণ করা যাবে না, সেটা তখনইন অনুমান করেছিলেন ভুক্তভোগীরা।

রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মধ্যে থাকা দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরী মোড় থেকে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত যে অংশটির কাজ চলছে, সেই অংশের অবস্থাই সবচেয়ে বেহাল ছিল। এলাকাবাসী ও রাস্তা ব্যবহারকারীদের দাবি, এমনিতেই বিশাল বিশাল গর্ত ও খানাখন্দে ভর্তি এই রাস্তার উপর দিয়ে প্রচুর সংখ্যক যান চলাচল করে। তার উপর রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাস্তার এক দিকের বিভিন্ন জায়গা খুঁড়ে দিয়ে দিনের পর দিন ধরে ফেলে রেখেছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা। কিছুটা করে কাজ হচ্ছিল। বর্ষার জলে সেটুকু শেষ। প্রায় দিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। আর যদি যানজট না থাকে তা হলেও এই রাস্তায় প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হয়। বিরক্ত পুলিশও। যে অংশটুকু খারাপ মূলত সেই অংশের ব্যবহার করতে হয় সদাইপুর থানাকে। থানা বলছে, পথ দুর্ঘটনা আর যন্ত্রাংশ ভেঙে পড়ে থাকা গাড়ি সরিয়ে রাস্তা চলাচলের যোগ্য রাখতে সারা দিনই থানার একটি গাড়ি ও কয়েক জন পুলিশ কর্মীকে ব্যস্ত থাকতে হয়।

কী বলছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ? এই অংশের দায়িত্বে থাকা এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নীরজ সিংহ এ দিন অসুস্থ ছিলেন। তবে, কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি জানিয়েছিলেন, রাস্তার ওই অংশটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে বেড তৈরির কাজ চলছিল। সেই কাজে পাথরের সঙ্গে চিরাচরিত ভাবে পাথরের গুঁড়ো ব্যবহার করার বদলে সিমেন্ট মেশানো হচ্ছে। যাতে রাস্তাটির বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, সেটা জমতে কিছুটা বেশি সময় লাগে। এ ছাড়া একটি চূড়ান্ত যানবাহনে ঠাসা ব্যস্ত রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ নতুন করে রাস্তা করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে।

কিন্তু, বর্তমানে যে সবটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ বার কী হবে? সেটা অজানাই থাকল!

Suri Road damaged National highway Dayal sengupta Raniganj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy