Advertisement
E-Paper

ফল ১৬-০ করতে ঝাঁপাচ্ছে শাসকদল

সাধারণ পাটিগণিতেই পাঁচ’টি ওয়ার্ড (১৫ ওয়ার্ডের হিসেবে) এখনও বিরোধীদের দখলে। সেটা বিরোধীরা বজায় রাখতে পারবে, নাকি ‘কেষ্ট ম্যাজিকে’ গায়েব হয়ে যাবে সেটুকুও। জোর চর্চা সে নিয়েই।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩৬
প্রস্তুতি: ঢুকতে শুরু করল পুলিশও। শুক্রবার। ছবি: সব্যাসাচী ইসলাম

প্রস্তুতি: ঢুকতে শুরু করল পুলিশও। শুক্রবার। ছবি: সব্যাসাচী ইসলাম

পুরভোটে শাসকদল কি নিরঙ্কুশ হবে, নাকি বেশ কিছু ওয়ার্ডে জিতে ‘ঐতিহ্য’ ধরে রাখবে নলহাটি। দু’টো সম্ভাবনার কোনটা ফলবে, হলে সেটা কোন সমীকরণের জোরে? ভোটের আগে সেই নিয়ে নানা অঙ্ক-সম্ভাবনা, যুক্তি-পাল্টা যুক্তির তুফান উঠেছে নলহাটির অলিগলিতে।

নলহাটির পুরভোটের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা বলছে, ২০০২ সালে যখন পুরসভার প্রথম ভোট হয়, তখন জেতে কংগ্রেস। রাজ্যে তখন বাম রাজনীতির ভরা বাজার। সেই সময়েও উল্টো পথে হেঁটেছিল এই তল্লাট। সে বার ১৬টি আসনের ১১টিতেই জয়ী হয় কংগ্রেস। ২০০৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও একই ফল হয়েছিল। সেই সময় পুরপ্রধান হন কংগ্রেসের বিপ্লব ওঝা এবং উপপুরপ্রধান হন অশোক ঘোষ। কংগ্রেসের ভাঙন আসে আরও দু’বছর পরে, ২০০৯ সালে। ওই বছরের নভেম্বরে পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা ৮ সদস্যকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১২ সালের বিদায়ী পুরবোর্ড গড়ে আবার তৃণমূল। তখন ওয়ার্ড ছিল ১৫টি। দলগত বিন্যাস ছিল— তৃণমূল ৮, কংগ্রেস ৩। আর সিপিএম, ফব, বিজেপি, বাম সমর্থিত নির্দল পেয়েছিল একটি করে আসন। পরে অবশ্য নির্দল, সিপিএমের এক জন করে কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন।

সাধারণ পাটিগণিতেই পাঁচ’টি ওয়ার্ড (১৫ ওয়ার্ডের হিসেবে) এখনও বিরোধীদের দখলে। সেটা বিরোধীরা বজায় রাখতে পারবে, নাকি ‘কেষ্ট ম্যাজিকে’ গায়েব হয়ে যাবে সেটুকুও। জোর চর্চা সে নিয়েই।

ভোটের দিন ঘোষণা হতেই বাম-কংগ্রেসের তরফে সমঝোতার সুতো গোটানো শুরু হয়। দু’দলের অবস্থান ছিল স্পষ্ট— বিরোধী ভোট ভাগ হতে না দেওয়া। সাংগঠনিক অবস্থা দেখেই ওই বোঝাপড়া শেষমেষ আসন সমঝোতায় দাঁড়ায়। আটটি করে আসনে প্রার্থী দেয় বাম-কংগ্রেস। কিন্তু, ১৬টি আসনের প্রতিটিতেই প্রার্থী দেয় বিজেপি। নলহাটি পুরভোটের ইতিহাসে এ বারই প্রথম সবক’টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছে বিজেপি। বাম-কংগ্রেস বা বিজেপি-র আশা, বিদায়ী পুরবোর্ডের আর্থিক দুর্নীতি, অনুন্নয়ন ইভিএমে প্রতিফলিত হবে। শাসকদলের কাছে বিরোধী ফ্যাক্টর ছাড়া রয়েছে নির্দল কাঁটা। অন্তত তিনটি ওয়ার্ডে এ বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন ওই নির্দল প্রার্থীরা।

আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব?

পুরভোটের কয়েক ঘণ্টা আগেও এই বিষয়টিই চিন্তায় রাখছে শাসকদলকে। কেমন? যে বিপ্লব ওঝাকে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এনে জমি শক্ত করেছে বর্তমান শাসকদল, সেই বিপ্লববাবু বা তাঁর অনুগামীরা এ বার টিকিটই পাননি। ষোলোয়-ষোলো করতে পয়লা গেরো সেখানে। শহর ঘুরে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বললেই তার আঁচ মেলে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বিদায়ী পুরবোর্ডের প্রধান রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ এবং তাঁর ভাই, শহর সভাপতি রাকেশ সিংহ প্রথম থেকেই বিপ্লব ওঝার শিবিরকে কোণঠাসা করে রেখেছে। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চাননি। প্রকাশ্যে দু’জনেই বলছেন, ‘‘কোথাও কোনও বিরোধ নেই। ভোটে জিতবে তৃণমূলই।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের অনুমান, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই কয়েক’টি ওয়ার্ড হাতছাড়া হতে পারে। বোঝার উপরে শাকের আঁটির মতো রয়েছে নির্দল কাঁটা।

কিছু ওয়ার্ডে অনুন্নয়ন নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। সেখানকার ফলও শাসকদলের বিপক্ষে যেতে পারে। পুরবাসীর অনেকেই জানাচ্ছেন, ভোট যাবে-আসবে। কিন্তু, তাঁদের কখন ভাবা হবে? উঠে আসছে একের পর এক সমস্যার কথা। রেলগেট পড়তেই স্তব্ধ হয়ে যায় নলহাটির গতি। এখনও রাস্তাতেই বসে সব্জি বাজার, ফলের দোকান। সে সব পার হয়ে গাড়ি নিয়ে তো দূর, হাঁটাই দায়। বহু বাড়িতে নেই শৌচালয়, নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। রাস্তাতেই পড়ে থাকে আবর্জনা। নিকাশির হালও তথৈবচ। এখনও পুরসভার নিকাশি নালা খোলা। খেলার সময় পড়ে গিয়ে বিপদ হয়েছে এমন উদাহরণ রয়েছে বহু। রাস্তা কোথাও কোথাও এত সংকীর্ণ যে দুটি গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়াতে পারে না। নিজস্ব ভবন না থাকায় আকাশে মেঘ দেখলে এখনও ছুটি হয়ে যায় অঙ্গনওয়াড়ি। বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘এ বারের ভোটেও কেউ না কেউ জিতবে। এ ভাবে আর কত দিন? কাজের মতো কাজ কবে হবে?’’

তবে, সবার উপরে রয়েছে ‘অনুব্রত ফ্যাক্টর’। বৃহস্পতিবারই প্রচারে অনুব্রতকে দরাজ শংসাপত্র দিয়ে গিয়েছেন মন্ত্রী, জেলার পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম। বলেছিলেন, ‘‘কেষ্টর জন্যেই জিতব।’’ কী ভাবে? সেটা আর ভাঙেননি। বিরোধী দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘নীরব সন্ত্রাস তো চলছেই। ভোটের দিন, তার আগের দিন তো সেটাই জুলুমে পৌঁছবে। তবে, মানুষ ভয়ে না পিছিয়ে গেলে আমরাই এসে বোর্ড গড়ব।’’

Municipality Election TMC Opponents Ruling Party নলহাটি পুরভোট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy