Advertisement
E-Paper

উপেক্ষার যন্ত্রণা ভুলতে দুর্গাপুজো আদিবাসী গ্রামে

সম্পন্ন পরিবারের গৃহবধূদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেওয়া, সিঁদুরখেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ ছিল না তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত তথাকথিত ওই ‘ব্রাত্যজনে’দের। সেই উপেক্ষা ভুলতে সারা বছর ধরে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে এ বার দুর্গাপুজো শুরু করতে চলছেন তাঁরা। নানুরের ছাতিনগ্রামের দাসপাড়ায় তা-ই এখন সাজ সাজ রব।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৭

মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিমা দর্শন বা হাত পেতে প্রসাদ নেওয়া— এত দিন ভারতী দাস, বনবালা দাসের পুজোর রোজনামচা ছিল এমনই। সম্পন্ন পরিবারের গৃহবধূদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেওয়া, সিঁদুরখেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ ছিল না তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত তথাকথিত ওই ‘ব্রাত্যজনে’দের।

সেই উপেক্ষা ভুলতে সারা বছর ধরে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে এ বার দুর্গাপুজো শুরু করতে চলছেন তাঁরা। নানুরের ছাতিনগ্রামের দাসপাড়ায় তা-ই এখন সাজ সাজ রব। আট থেকে আশি— কারও যেন দম ফেলার সময় নেই। তাঁদের উদ্যোগে সামিল হয়েছেন গ্রামের পূর্বতন জমিদার বাড়ির উত্তরসূরিরাও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নানুরের ওই গ্রামে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বাস। তার মধ্যে দাসপাড়ায় থাকেন ৫৪টি পরিবার। বেশির ভাগই প্রান্তিক চাষি বা দিনমজুর। আশেপাশে গ্রামেও কোনও সর্বজনীন দুর্গাপুজো এত দিন হতো না। এত দিন দাসপাড়ার বাসিন্দারা পুজো দেখতে যেতেন গ্রামের এক বনেদী পরিবারের পুজোয়। সেই পুজোয় সার্বিক ভাবে যোদ দেওয়ার সুযোগ মিলত না বলে অভিযোগ দাসপাড়ার বাসিন্দাদের। সে জন্য নিজেরাই পুজো শুরুর ইচ্ছা ছিল সেখানকার সকলের। কিন্তু সেই আর্থিক সামর্থ্য ছিল না কারও।

মনের ইচ্ছা তা-ই মনেই থেকে যায়। কিন্তু বছরখানেক আগে সেই ইচ্ছা বাস্তবে বদলানোর সুযোগ পায়। গ্রামবাসী জানান, সে দিন ছিল দীননাথ দাস স্মৃতি ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা। দীননাথবাবু ছিলেন বর্ধমানের রতনপুরের জমিদার। মাতুলালয় সূত্রে ছাতিনগ্রামেও তাঁর কিছু জমিসম্পত্তি ছিল। তাঁরই উদ্যোগে ওই গ্রামে স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, খেলার মাঠ গড়ে উঠে। তাঁর নামে পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সহযোগিতায় বার্ষিক ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত বার সেই প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা দেখতে এসেছিলেন দাস পরিবারের লোকেরা। তখনই তাঁদের কাছে পুজোয় উপেক্ষার কথা শোনান দাসপাড়ার বাসিন্দারা।

কয়েক জন গ্রামবাসী জানান, সে কথা শুনেই পুজো শুরুতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন ওই পরিবারের সদস্যরা। পুজো করার জন্য একটি স্থায়ী জায়গা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিমারও দায়িত্ব নেন তাঁরা। তার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর প্রস্তুতি। সারা বছর ধরে কিছু কিছু করে পুজোর জন্য টাকা জমান দাসপাড়ার বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা সান্তনা দাস, পরীবালা দাস বলেন, ‘‘নিজেদের একটা পুজো হবে। নিজেদের হাতে পুজোর জিনিস গোছাতে পারব, তা ভাবতেই ভাল লাগছে। সে জন্য সারা বছর ধরে কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম। মাধবী দাস, কল্পনা দাসের কথায়, ‘‘পুজোয় আসার জন্যে আত্মীয়দেরও নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।’’

সব থেকে খুশি কচিকাঁচারা। নবম শ্রেণির রতন দাস, অষ্টম শ্রেণির সুস্মিতা দাস বলে, ‘‘পারিবারিক পুজোয় প্রসাদ নিতে গেলে ছোঁওয়া বাঁচাতে হাতে আলগোছে তা ফেলে দেওয়া হত। কখনও প্রসাদের অর্ধেক মাটিতেই পড়ে যেত। খারাপ লাগত। এ বারে আর তা হবে না।’’

পুজো কমিটির সভাপতি বুদ্ধদেব দাস, সম্পাদক নিখিল দাস জানান, দীননাথবাবুর বংশধরেরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তাঁদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে। আশপাশের গ্রামের উপেক্ষিত মানুষেরাও এই পুজোর আনন্দে মাততে পারবেন।

দীননাথবাবুর পরিবারের সঙ্ঘমিত্রা সেন, সুজাতা পাণ্ডের কথায়, ‘‘আমরা কেউ ওই গ্রামে থাকি না। কিন্তু গ্রামের মানুষের কথা ফেলতে পারিনি। আমাদের প্রপিতামহ দীননাথবাবু ওই লোকেদের কথা ভেবে গ্রামে পুজো প্রচলনের কথা ভেবেছিলেন। তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পুজোর সময় গ্রামেও যাব।’’ ছবি: কল্যাণ আচার্য

Durga Puja 2018 Scheduled Tribe
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy