Advertisement
E-Paper

থার্মোকল নয়, পরিবেশ বাঁচাতে পুজোর ভোগ শালপাতায়

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের নালিশ, সেই মরসুম পেরোনোর পরে বোলপুর বা শান্তিনিকেতনের পিকনিক স্পটগুলিতে থার্মোকলের থালা ছাড়া কিছু চোখে পরে না।

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩০
তৎপরতা: ভোগ খেতে শালপাতার থালা সংগ্রহ। বোলপুরের স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

তৎপরতা: ভোগ খেতে শালপাতার থালা সংগ্রহ। বোলপুরের স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

সরস্বতী পুজোয় দূষণের আঁচ এড়াতে তৎপর বোলপুরের বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা। তা-ই থামোর্কল নয়, পুজোর ভোগ খাওয়াতে তাদের পছন্দ শালপাতার থালা।

সরস্বতী পুজোর আগে বোলপুর এবং সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে জানা গেল এমনই কথা। পড়ুয়ারা জানায়, প্রায় প্রতিটি স্কুলেই শালপাতার থালায় ভোগ দেওয়া হয় প্রথম থেকেই। বেশ কিছু স্কুলে ভোগের দায়িত্ব পেয়েছে ক্যাটারিং সংস্থা। সেই সব স্কুল ক্যাটারিং সংস্থাকে বিশেষ ভাবে জানিয়েছে শালপাতার থালাতেই যেন ভোগ পরিবেশন করা হয়। কয়েকটি গ্রামের স্কুলে বাচ্চাদের মিড-ডে মিল খাওয়ার জন্য নিজেদেরই থালা রয়েছে। সেই থালা সঙ্গে এনেই সরস্বতী পুজোর ভোগ খাবে সেখানকার পড়ুয়ারা। অতিথি বা প্রাক্তন পড়ুয়াদের জন্যও থাকছে শালপাতার থালাই।

শীত মানেই চড়ুইভাতির মরসুম। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের নালিশ, সেই মরসুম পেরোনোর পরে বোলপুর বা শান্তিনিকেতনের পিকনিক স্পটগুলিতে থার্মোকলের থালা ছাড়া কিছু চোখে পরে না। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের অনেকর মধ্যেই থার্মোকলের ব্যবহার নিয়ে এখনও সে ভাবে কোনও সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে স্কুলগুলি এ ব্যাপারে সচেতন। পড়ুয়ারা জানায়, অনেক আগে থেকেই শালপাতার থালাতেই বিতরণ করা হয় সরস্বতী পুজোর ভোগ। এতে এক দিকে যেমন পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের দিক খেয়াল রাখা যায়, অন্য দিকে স্কুলবেলা থেকেই তাদের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি নিয়ে সচেতনতাও তৈরি করা যায় বলে মত স্কুলগুলির বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকার।

বোলপুর সংলগ্ন গ্রামগুলির স্কুলগুলিতে সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে শালপাতার থালাও কেনা হয়ে গিয়েছে। রজতপুর ইন্দ্রনারায়ণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক দীপনারায়ণ দত্ত জানান, স্কুলের ছেলেমেয়েরা এ বারের পুজোয় থিম করেছে রজতপুর গ্রামকেই। প্রতিমার পাশেই সাজানো হবে রজতপুর গ্রাম। সরস্বতী পুজোর দিনই খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হবে। শালপাতার থালাতেই। গোয়ালপাড়া তনয়েন্দ্র বিদ্যালয়ের (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক সুপ্রতীক মণ্ডল জানান, এই স্কুলেও বরাবরই শালপাতার থালায় খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হয়। গ্রাম্য এলাকা হওয়ায় স্কুলের পড়ুয়া ছাড়াও অনেকেই ভোগ খেতে বা নিতে আসেন। কেউ যদি থার্মোকলের থালা নিয়ে আসেন, তাঁদের সেই থালায় ভোগ দেওয়া হয় না। শালপাতার থালাতেই তিনি ভোগ নিয়ে যান। পাঁচশোয়া রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক সীতারাম মণ্ডলও একই কথা জানান। অন্য দিকে বেড়গ্রাম পল্লি সেবানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মলয় মণ্ডল এবং শিক্ষিকা প্রতিভা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তাঁদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিল খাওয়ার থালাতেই ভোগ দেওয়া হয়। তবে অতিথি বা অন্য লোকেদের জন্য তাঁরা কয়েকশো শালপাতার থালা কিনে রাখেন।

বোলপুরের স্কুলগুলিতেও শালপাতার থালাতেই সরস্বতী পুজোর ভোগ খাওয়ানো হয়। বোলপুর নীচুপটি নীরদ বরণী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপেন্দু ধর বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে প্রথম থেকেই শালপাতার থালায় খাওয়ানো হতো। এখনও সেই ঐতিহ্য বজায় রাখা হয়েছে।’’ বোলপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা প্রজ্ঞাপারমিতা বসু জানান, স্কুলে সরস্বতী পুজোর ভোগ দেওয়ার দায়িত্ব ক্যাটারিং সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। তবে এ বছর তাঁদের আলাদা করে বলে দেওয়া হয়েছে যেন শালপাতার থালাতেই ছাত্রীদের ভোগ দেওয়া হয়। বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি নিজে যখন এই স্কুলের ছাত্র ছিলাম, তখন এমন শালপাতার থালা পাওয়া যেত না। তখনও আমরা শালপাতাতেই পুজোর ভোগ খেয়েছি। এখনও আমাদের স্কুলে শালপাতার থালাতেই ভোগ খাওয়ানো হয়।’’

এ বছর সরস্বতী পুজোর ঠিক পরেই মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তাই প্রায় সব স্কুলেই সরস্বতী পুজোর দিনেই ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকছে। যদিও অন্যান্য বছর পুজোর এক দিন পরে বা প্রতিমা বিসর্জনের পরে ভোগ খাওয়ানোর রীতি ছিল। বিশেষ করে যে সব স্কুলগুলিতে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে, সেই স্কুলগুলি পুজোর দিনেই ভোগ খাওয়াবে বলে জানা গিয়েছে। দ্বারোন্দা চণ্ডীমাতা বিদ্যালয়ের (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক অনির্বাণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ভোগ খাওয়ানো হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন পরীক্ষা নেই। এ বারও শালপাতার থালাতেই ভোগ খাওয়ানো হবে।’’

Saraswati Puja Bolpur Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy