তখনও বেঁচে সাপটি। খয়রাশোলে। নিজস্ব চিত্র
হিংলো নদীতে ভেসে আসা ময়ালকে মাছ ভেবে লাঠি জাতীয় কিছু দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। খয়রাশোলের বাবুইজোড় গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সেই থেকেই নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল আট ফুটের সাপটি। এর পরে তাকে বাঁচানোর জন্য সঙ্গে সঙ্গে বন দফতরকে খবর না দিয়ে উল্টে সেই সাপের সঙ্গে চলল দেদার সেলফি, কেউ গলায় জড়ালেন, কেউ আবার টানলেন লেজ ধরে।
বৃহস্পতিবার ভোরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই সাপটির মৃত্যু হয়। বন দফতরের কর্তারা মনে করছেন, ও ভাবে নির্যাতন চালানো না হলে সাপটি বেঁচেও যেতে পারত। দফতরকে খবর না দিয়ে যাঁরা তার উপর নির্যাতন চালিয়েছেন, চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে বলে জানিয়েছেন বীরভূমের অতিরিক্ত বনাধিকারিক বিজনকুমার নাথ। এই ঘটনায় অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে লালগড়ের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের কথা। পশ্চিম মেদিনীপুরের চাঁদরায় ঢুকে পড়া বাঘকে প্রথমে দেখা গিয়েছিল ক্যামেরা-ফাঁদে। পরে ফাঁদ পেতেও তাকে ধরা যায়নি। আরও পরে তার বেঘোরে মৃত্যু হয় মানুষেরই বল্লমে।
খয়রাশোলের ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হিংলো নদী। বুধবার সন্ধ্যার আগে সেখানেই ভেসে এসেছিল অজগরটি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, জলের উপরে মুখ ভাসতে দেখে প্রথমে কেউ সাপটিকে বড় মাছ বলে ভুল করেন। তখনই লাঠি জাতীয় শক্ত কিছু দিয়ে মাথায় মারা হয়। গুরুতর জখম হয় তখনই। তত ক্ষণে উপস্থিত লোকজন বুঝে গিয়েছিলেন মাছ নয়, সেটি পইথন। নিস্তেজ হয়ে পড়া সাপটিকে টেনে-হিঁচড়ে ডাঙায় টেনে তোলা হয়। সেখানেও এক প্রস্ত নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ। সাপটি একেবারে নিস্তেজ হলে সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে যায়।
এ রকম কাণ্ডের খবর পেয়ে গ্রামের এক সিভিক ভলান্টিয়ার প্রথমে স্থানীয় কাঁকরতলা থানার ওসিকে জানান। ওসি বন দফতরকে খবর দেন। বন দফতর ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত সাড়ে ১০টান নাগাদ সাপটিকে উদ্ধার করে আনে। বন দফতরের এক কর্তা জানান, অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। তখন চিকিৎসক পাওয়া সম্ভব ছিল না। প্রাথমিক শুশ্রূষার ব্যবস্থা করে সকালের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল। কিন্তু, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ায় আগেই সাপটির মৃত্যু হয়।
অজগর বিপন্ন না হলেও সংরক্ষিত প্রাণী। বছর কয়েক আগে হিংলো জলাধারেই মিলেছিল পাইথন। এ ছাড়াও একাধিক বার পাইথন উদ্ধার হয়েছে খয়রাশোলে। কিন্তু, প্রতিবারই নির্বিঘ্নে বন দফতর সাপটিকে উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দিতে পেরেছিল। ব্যতিক্রম এ বার। কেন এমনটা হল, তা দেখার পাশাপাশি এলাকায় প্রচার চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বন দফতরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy