Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লোবার পাশে থাকার আশ্বাস বিজেপির

নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করল কার্যত মুখ থুবড়ে পড়া লোবার জমি আন্দোলন। মঙ্গলবার লোবায় কমিটির ডাকা সমাবেশে যোগ দিয়ে তাঁদের আন্দোলনে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য। লোবার মানুষের দাবিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক তুলে ধরার প্রতিশ্রুতিও দিলেন। পাশাপাশি লোবা নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করলেন।

পাশে আছি। লোবার সমাবেশে। —নিজস্ব চিত্র

পাশে আছি। লোবার সমাবেশে। —নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
লোবা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করল কার্যত মুখ থুবড়ে পড়া লোবার জমি আন্দোলন। মঙ্গলবার লোবায় কমিটির ডাকা সমাবেশে যোগ দিয়ে তাঁদের আন্দোলনে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য। লোবার মানুষের দাবিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক তুলে ধরার প্রতিশ্রুতিও দিলেন। পাশাপাশি লোবা নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করলেন। সব মিলিয়ে এ দিনের পরে লোবার জমি আন্দোলন নতুন করে অক্সিজেন পেল বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল।

এ দিন বিকেলের ওই সমাবেশে শমীকবাবু বললেন, “এখানকার গরিব মানুষের চাষের জমি এবং জীবিকা লুঠ করার চক্রান্ত করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আপনারা যে আন্দোলন শুরু করেছেন এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন, তার পাশে বিজেপি থাকবে।” এমনিতে ওই কমিটি একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ। তবে, প্রথম থেকেই কমিটির সঙ্গে রয়েছেন পিডিএস নেতা সমীর পুততুণ্ড। বিভিন্ন সময়ে কমিটির ধর্নামঞ্চে এসে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য থেকে সৌমেন মিত্ররাও। কেউ-ই খুব একটা ভরসা জোগাতে পারেননি। কিন্তু আন্দোলন ভেস্তে যাওয়ার মুখে কেন্দ্র সরকারের ক্ষমতায় থাকা বিজেপির মতো কোনও জাতীয় দলকে কমিটির একটি বড় অংশই পাশে চান বলে খবর। তাঁদের ব্যাখ্যা, এর ফলে কমিটি নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় করার সম্ভাবনা বাড়বে।

প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লা খনি গড়ার প্রেক্ষিতে লোবার জমিহারা বাসিন্দারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন চেয়েছিলেন। সেই দাবিতে তাঁরা খনি গড়তে আসা সংস্থার (পিপিপি ভিত্তিতে গড়া ডিভিসি-এমটা) মাটি কাটার যন্ত্র আটকে আন্দোলন শুরু করেন। ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর সেই যন্ত্র উদ্ধারে আসা পুলিশের অভিযানে ছয় গ্রামবাসী জখমও হয়েছিলেন। ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। লোবায় জোরদার জমি আন্দোলনে নেমে পড়েছিল কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। এমনকী, ওই ঘটনা বিরোধীদের হাতে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রও তুলে দিয়েছিল। কিন্তু আজ, কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সেই আন্দোলের অভিঘাত অনেকটাই স্থিমিত। গত পঞ্চায়েতে কমিটির সদস্যেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বারের মুখ দেখতে হয়েছে। তার পরে আন্দোলন বলতে হয়েছে মাঝে মধ্যে দু’একটি সমাবেশ। সে দিনের পুলিশি অভিযানে জখম গ্রামবাসীদের ক্ষতও অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। কিন্তু লোবার মূল যে দাবিকে ঘিরে আন্দোলনের সূত্রপাত, তার সমাধান সূত্র এখনও অধরা।

কী বলেছেন শমীক?

জলকল্যাণকর রাষ্ট্রে এমন কোনও চুক্তিই হতে পারে না, যেটা কৃষক-বিরোধী হবে। তাঁরা যদি জমির ন্যায্য মূল্য চেয়ে থাকেন, তাতে কোনও অন্যায় নেই।

শমীক ভট্টাচার্য সাধারণ সম্পাদক, রাজ্য বিজেপি

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, মধ্যসত্বভোগীদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ায় এই সরকারের জমি-নীতি। তাঁর কথায়, “জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না, এটাই নাকি রাজ্য সরকারের ঘোষিত জমি-নীতি। তার মানে দাঁড়ায়, সরকারের যাঁরা তাবেদার, যাঁরা সরকারের অনুগ্রহে আছেন, তাঁরা সরকারের নাম করে জোর করে ভয় দেখিয়ে জমি কিনতে পারবেন। এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না!” একটি বেসরকারি কোম্পানির বিরুদ্ধে লোবার মানুষের আন্দোলনের ভূয়সী প্রশংসা করে শমীকবাবু বলেন, “এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের একটি ভূমিকা রয়েছে। তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। আপনারা ভোট দেন, কর দেন। এই সরকার তো আপনাদেরই। সেই আপনাদের প্রতি কোথাও যদি কোনও অন্যায় হতে থাকে, তার প্রতিকার নিয়ে রাজ্য সরকার উদাসীন থাকতে পারে না।” একই সঙ্গে তিনি জানান, লোবার সঙ্কট নিয়ে রাজ্য বিজেপি প্রাথমিক ভাবে আলোচনা করেছে। খুব দ্রতই তাঁরা এ নিয়ে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলবেন বলার আশ্বাসও দেন। এর পরেই শমীকবাবুর সংযোজন, “আমি জানি না, ডিভিসি এবং এমটার মধ্যে কী চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে এমন কোনও চুক্তিই হতে পারে না, যেটা কৃষক-বিরোধী হবে। তাঁরা যদি জমির ন্যায্য মূল্য চেয়ে থাকেন, তাতে অন্যায় নেই।”

কমিটির সূত্রের খবর, গত ভোটে লোবা পঞ্চায়েতও তৃণমূলের দখলে চলে যাওয়ায় কমিটির আন্দোলন আরও ব্যাকফুটে চলে এসেছিল। ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেই এ দিনের সমাবেশের ডাক দেওয়া। এবং তাতে যোগ দিতে বিজেপিকে আমন্ত্রণ জানানো। আর ওই সভা থেকেই শমীকবাবুর বক্তব্য ফের ভরসা জুগিয়েছে কমিটিকে। সভায় এসেছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলও। দিনের শেষে কতকটা তাঁর দিকে তাকিয়েই কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সভাপতি ফেলারাম মণ্ডল, সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার, আহ্বায়ক আশিস মিশ্ররাও বললেন, “কয়লা রাষ্ট্রের সম্পত্তি। এর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের উপর রয়েছে। তাই শমীকবাবুর কথায় আমরা নতুন করে আশার আলো দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE