Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ বিজেপি-র

বদলির হুমকির পরেই তলবি চিঠি

মামা বদলি করার হুমকি দিয়েছিলেন। আর দফতরে তলব করলেন ভাগ্নে! সম্প্রতি সাঁইথিয়ায় পুরভোটের প্রচারে এসে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী, পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক সুশান্ত রায়কে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার ঠিক দশ দিন পরেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে একটি তলবি চিঠি পেলেন সুশান্তবাবু।

শিক্ষক সুশান্ত রায়কে পাঠানো চিঠি। — নিজস্ব চিত্র

শিক্ষক সুশান্ত রায়কে পাঠানো চিঠি। — নিজস্ব চিত্র

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

মামা বদলি করার হুমকি দিয়েছিলেন। আর দফতরে তলব করলেন ভাগ্নে!

সম্প্রতি সাঁইথিয়ায় পুরভোটের প্রচারে এসে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী, পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক সুশান্ত রায়কে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার ঠিক দশ দিন পরেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে একটি তলবি চিঠি পেলেন সুশান্তবাবু। বাসিন্দাদের অভিয়োগের যুক্ত দেখিয়ে ওই চিঠিতে সুশান্তবাবুকে যাঁর সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেই সংসদ সভাপতি রাজা ঘোষ আবার সম্পর্কে অনুব্রতরই ভাগ্নে। বৃহস্পতিবার এই চিঠির কথা জানাজানি হতেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে বিজেপি।

দলের জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা বলছেন, ‘‘তৃণমূলের হাজারও শাসানির পরেও সুশান্তবাবু আমাদের প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই আক্রোশ থেকেই তৃণমূল প্রথমে অনুব্রতর মাধ্যমে দলীয় ভাবে, এ বার রাজা ঘোষকে দিয়ে প্রশাসনিক ভাবে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ তাঁর দাবি, এই ঘটনাই প্রমাণ করে রাজ্যের শাসকদল পুলিশ-প্রশাসনকে দলদাসে পরিণত করেছে। তাদের দিয়ে বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও করছে। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল এবং প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, উভয়েই বিজেপি-র বক্তব্য মানতে রাজি নয়।

প্রসঙ্গত, গত ১২ এপ্রিল সাঁইথিয়ায় ভোট প্রচারে গিয়ে বিজেপি-র ওই শিক্ষক প্রার্থীকে খয়রাশোলে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন অনুব্রত। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ব্যবসা করে দু’টো পয়সা করেছে। দীর্ঘ দিন স্কুলে যায় না। এটা নাকি শুনতে পাওয়া যায়। স্কুলে না গেলে তো শিক্ষাটা হবে না। ফাঁকি দিয়ে পয়সা নেওয়া যাবে না। ভোটের পর যদি স্কুল না যায় হলে খয়রাশোলে বদলি করা হবে।’’ তাঁর পরেই তৃণমূল নেতার হুঙ্কার, ‘‘এটা কিন্তু দাঁড়িয়ে বলে গেলাম। হয় চাকরি ছেড়ে দিতে হবে, না হলে খয়রাশোলে যেতে হবে! এটা জোর গলায় বলে গেলাম!’’ বস্তুত, ওই হুমকির পর থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্থানীয় রুবি রানি সিংহ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুশান্তবাবু।

ঠিক কী আছে ওই চিঠিতে?

এ দিন সুশান্তবাবু জানান, বুধবার বিকেলের পরে প্রাইমারি স্কুলের সাঁইথিয়া সার্কেলের এসআই গৌতম ভট্টাচার্যের মারফত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সেক্রেটারির পাঠানো একটি চিঠি তিনি পান। তাতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার সময় সংসদ সভাপতির সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন? চিঠিতে তার বিশদ ব্যাখ্যা নেই। শুধু লেখা রয়েছে, সাঁইথিয়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সুশান্তবাবুকে দেখা করতে বলা হচ্ছে। সুশান্তবাবু যদিও এ দিন রাজাবাবুর সঙ্গে দেখা করতে যাননি। এ দিন সকালেই তিনি এসআই-এর মাধ্যমে স্কুলবোর্ডের সেক্রেটারিকে চিঠি দিয়ে পাল্টা চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেন, পূর্ব নির্ধারিত কাজের জন্য (অসুস্থ বাবাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া) এ দিন সংসদে যেতে পারবেন না। ‘‘আমার এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমি দুঃখিত। এর পরে আপনি যে দিন আপনার সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেবেন, সে দিনই আপনার সঙ্গে দেখা করব।’’— চিঠিতে লিখেছেন সুশান্তবাবু।

কেন ডাকা হয়েছে সুশান্তবাবুকে?

এ দিন রাজাবাবুর দাবি করেন, ওই স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সাঁইথিয়া চক্রের এসআই-কে দিয়ে তদন্ত করানো হয়েছিল। এসআই-এর তদন্ত রিপোর্ট পেয়েই সুশান্তবাবুকে বেশ কিছু জবাবের জন্য তলব করা হয়েছে বলে সংসদ সভাপতি জানিয়েছেন। রাজাবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওই শিক্ষক ছুটির যে আবেদন করেছেন, তা-ও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাই এ দিন ওই শিক্ষক, স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং এসআই-কে ডাকা হয়েছিল।’’ কিন্তু, অভিযোগ যে উঠছে, বিজেপি-র প্রার্থী হওয়ায় ওই শিক্ষককে হেনস্থা করতেই তলব করা হয়েছে? অভিযোগ উড়িয়ে সভাপতির দাবি, ‘‘ওই শিক্ষক ভোটে দাঁড়িয়েছেন কিনা আমার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা নেই। কারণ, ভোটে দাঁড়াতে গেলে নিয়ম মেনে যে অনুমতি নিতে হয়, তা সুশান্তবাবু নেননি। এই তলবি চিঠির সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ বিজেপি-র অবশ্য অভিযোগ, অনুব্রতর হুমকির পরেই তাঁর কথা রাখতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ভাগ্নে রাজা ঘোষ। ওই হুমকির পরেই এলাকার তৃণমূল কর্মীদের দিয়ে অভিযোগ করিয়ে বিজেপি প্রার্থীকে শায়েস্তা করার এই চক্রান্তের শুরু বলে অর্জুনবাবুদের দাবি। ঘটনা হল, বাসিন্দারা ঠিক কবে অভিযোগ জানিয়েছেন, এ দিন সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন রাজাবাবু।

এ দিকে, প্রার্থী হওয়া নিয়ে সংসদ সভাপতির ওই যুক্তিকে মানতে চাননি বিজেপি প্রার্থী। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘আধা সরকারি স্কুলে চাকরি করি। এ ক্ষেত্রে পুরসভা বা পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনও এনওসি লাগে না। তা লাগলে আমি ভোটেই দাঁড়াতে পারতাম না। তার আগে আমার মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়ে যেত!’’ তিনি আরও জানান, এসআইউ-এর কাছে দু’বার ছুটির আবেদন করেছিলেন। প্রথম বার বাতিল করে দেওয়ার পরে দ্বিতীয় বার তাঁর আবেদনের কোনও জবাবই দেননি এসআই। বিজেপি-র হয়ে লড়া আটকাতেই এমনটা করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। কিন্তু, সরকারি ভাবে ছুটি মঞ্জুর না হওয়ার পরেও কেন স্কুলে গরহাজির থাকছেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি সুশান্তবাবুও। অন্য দিকে, অনুব্রত ফোন ধরেননি। এসআই গৌতমবাবুর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE