Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সরানোর চেষ্টা হচ্ছে, দাবি পুরপ্রধানেরই

এই সংঘাত হঠাৎ নয়। তৃণমূল কাউন্সিলরদের একটা অংশ পুরপ্রধানের শিবির থেকে সরেছেন লোকসভা নির্বাচনের বছর খানেক আগে থেকেই।

সিউড়ি পুরসভা

সিউড়ি পুরসভা

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

জেলা সদরে রবিবার তৃণমূল কাউন্সিলের বাড়িতে বোমা পড়ার ঘটনার পরেই সামনে এসেছে সিউড়ির পুরপ্রধানের সঙ্গে একগুচ্ছ কাউন্সিলের সংঘাত।

তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, এই সংঘাত হঠাৎ নয়। তৃণমূল কাউন্সিলরদের একটা অংশ পুরপ্রধানের শিবির থেকে সরেছেন লোকসভা নির্বাচনের বছর খানেক আগে থেকেই। পুর-এলাকার অনুন্নয়ন, পানীয় জলের সঙ্কট না মেটানো এবং পুরপ্রধানের খামখেয়ালিপনার অভিযোগ তুলে ১৯ ওয়ার্ড বিশিষ্ট সিউড়ি পুরসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার ভাবনা নিয়েছিলেন বলেও দল সূত্রের খবর। শেষ পর্যন্ত দলের জেলা সভাপতির অনুব্রত মণ্ডলের হস্তক্ষেপে অনাস্থা আসেনি। সেই সময় দলের প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে ক্ষোভ চেপে বিদ্রোহী কাউন্সিলরেরা চুপ করে গিয়েছিলেন।

কিন্তু লোকসভা ভোটের পর থেকে ফাটলটা আরও চওড়া হয়েছে। তৃণমূলের জনা বারো কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দেবেন, এমন একটি খবর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রকাশ পেতেই ফের একজোট হন তাঁরা। দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে এই বার্তা স্পষ্ট করে দেওয়া চেষ্টা করেন, দল নয়, তাঁদের ক্ষোভ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধেই। কিন্তু সেই বার্তা খুব একটা গুরুত্ব পেয়েছে, এমন নয়। পরিস্থিতি যে ক্রমশ জটিল হচ্ছে, সেটা জুন মাসে কলকাতার নজরুল মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সভায় সিউড়ির কাউন্সিলরদের একাংশের অনুপস্থিতিতেই স্পষ্ট ছিল। যাঁরা ওই বৈঠকে যাননি, তাঁদের মধ্যে ছিলেন বর্তমান উপ-পুরপ্রধান বিদ্যাসাগর সাউ, প্রাক্তন দুই পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও তপন শুকুল এবং শহর তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ মজুমদারের স্ত্রী। কেন যাননি, এ প্রশ্নের জবাবে গরহাজির দুই কাউন্সিলরের বক্তব্য ছিল , ‘‘আমাদের ক্ষোভ পুরপ্রধানের উপরে। দলের প্রতি নয়। আমাদের ক্ষোভের কথা বহুবার জেলা সভাপতি ও জেলা পর্যবেক্ষককে বলা হয়েছে। কিন্তু, তা গুরুত্ব পায়নি।’’

এই মুহূর্তে যা সমীকরণ সেটা হল, ১৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে এক জন মারা গিয়েছেন। বাকি ১৮ জনের মধ্যে ১০ জনই পুরপ্রধানের বিপক্ষে চলে গিয়েছেন। শহর সভাপতি অভিজিৎবাবুও পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বারবার জেলা সভাপতি ও নেতৃত্বকে জানিয়ে ফল না পেয়ে মাস দেড়েক আগে সকলে মিলে পুরমন্ত্রী তথা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু, ‘ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া’ মোটেও ভাল ভাবে নেননি জেলা নেতৃত্ব। ফলে লাভ কিছু হয়নি। বরং পাল্লা ভারী হয় উজ্জ্ববাবুরই।

মরিয়া কাউন্সিলররা সম্প্রতি ফের কলকাতায় গিয়ে পুরমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পুরপ্রধানকে সরানোর দাবি তোলেন। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরমন্ত্রী বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে জেলা সভাপতির কোর্টেই বল ঠেলেছেন। তার মধ্যেই রবিবার পুরপ্রধানের ‘বিরোধী’ শিবিরের এক কাউন্সিলরের বাড়িতে বোমা পড়ায় সেই সংঘাত অন্য মাত্রা পেল। ওই বোমা পড়া নিয়ে শহর সভাপতি ও পুরপ্রধানের মধ্যে এক প্রস্ত কাদা ছোড়াছুড়িও হয়েছে।

পুরপ্রধানের দাবি, তিনি যথেষ্ট ভাল কাজ করেছেন, সেই হিংসা থেকে তাঁকে টেনে নামানোর চক্রান্ত করছেন দলে তাঁরই কিছু সতীর্থ। অন্য দিকে বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা বলছেন, কত টাকা রাজ্য সরকার দিয়েছে, আর শহরের কী কী কাজ হয়েছে, তার একটা খতিয়ান প্রকাশ্যে এলেই সব স্পষ্ট হবে। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে এমনিতেই সিউড়ি পুর-এলাকায় বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তার উপরে পুরসভায় তৃণমূলের দ্বন্দ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে বলেই মনে করছেন শহরের রাজনীতি

সচেতন মানুষজন। বিরোধী কাউন্সিলররা বলছেন, ‘‘সামনেই পুর-নির্বাচন। শহরের অনুন্নয়ন নিয়ে মানুষকে কী জবাব দেব? তাই আমাদের দাবি থেকে সরছি না।’’

তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ যদিও দাবি করছেন, ‘‘আমাদের মতে, কাউন্সিলরের বাড়িতে বোমা ফেলেছে দুষ্কৃতীরা। দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। মৌখিক ভাবে কে কী বলছে জানি না।’’ একটু ভিন্ন সুর সিউড়ি পুরসভার পর্যবেক্ষক তথা জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরীর গলায়। তিনি বলছেন, ‘‘বোমা পড়ার বিষয়টি শুনেছি। বিশদে না জেনে কিছু বলছি না। সোমবার সকলকে নিয়ে বসব। কোনও সমস্যা থাকলে জেলা সভাপতিকে জানাব এবং তাঁর নির্দেশেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Loksabha Siur Birbhum TMC Councillor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE