Advertisement
E-Paper

শব্দ-দাপট কী, দেখাল সোনামুখী

বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার দাবি, ‘‘সোনামুখীতে প্রশাসন সজাগ ছিল সারা রাত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৩
গানের গুঁতো: রাতভর তারস্বরে বাজল গান। —নিজস্ব চিত্র।

গানের গুঁতো: রাতভর তারস্বরে বাজল গান। —নিজস্ব চিত্র।

চার পাশে গিজগিজ করছে পুলিশ। তারই মধ্যে সমানে বেজে চলল বুক কাঁপানো ডিজে। চার পাশ কাঁপিয়ে মুহুর্মুহু ফাটল বাজি। পর্ষদ যে নির্দেশই দিক, সোনামুখীর কালী ভাসানের বরাবরের চেনা ছবিটা কিন্তু সোমবারও বদলালো না।

পাঁচ দিনের কালীপুজোর সমাপ্তি হল সোমবার রাত-ভোর বিসর্জনের শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত জাগল সোনামুখী। রেশ থাকল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত। পুলিশ কালীপুজোর আগে থেকেই জনগণের মধ্যে প্রচারপত্র ছাপিয়ে, বিভিন্ন থানায় মাইক ব্যবসায়ী ও বাজি ব্যবসায়ীদের বৈঠকে ডেকে শব্দ বিধি মেনে না চললে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল। কালীপুজোর সময় প্রকৃতিক বিপর্যয় ও পুলিশি কড়াকড়িতে জেলার সর্বত্র শব্দ-জব্দ করা গেলেও সোনামুখীতে উল্টো ছবিই দেখা গেল। কেন?

বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার দাবি, ‘‘সোনামুখীতে প্রশাসন সজাগ ছিল সারা রাত। প্রচুর পুলিশ সেখানে মোতায়েন ছিল। কড়া নজর রাখায় শব্দবাজি এবং ডিজে-র দাপট আগের থেকে কমেছে। ভবিষ্যতে আরও কমবে আশা রাখি।’’

তবে সোমবার সন্ধ্যা থেকে সোনামুখী চৌমাথায় যাঁরা বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে এসেছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। বিকেল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা তো বটেই আশপাশের জেলা থেকেও লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই আসমান বোমার চমক দেখানো শুরু।

প্রতিবারের মতো কালী বিসর্জনের সমন্বয় কমিটির বেঁধে দেওয়া সময় ধরে ১৯টি অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা একে একে চৌমাথায় আসতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ডিজে-র দাপটে কান পাতা দায় হয়ে ওঠে। সঙ্গত করতে রাস্তার উপরেই ফাটতে থাকে শব্দবাজি। আতসবাজিও ছিল।

বর্ধমান থেকে সপরিবারে এসেছিলেন সৌগত বসু। তিনি বলেন, ‘‘বাইপাস বিহীন সোনামুখী শহরে শোভাযাত্রাকে সুন্দর ভাবে পরিচালনার জন্য জেলা পুলিশকে কুর্নিস করতেই হয়। কিন্তু এত শব্দ বাজি আর ডিজে-র দাপট তো পুলিশ-প্রশাসনকে দশ গোল খাইয়ে দিল। বুক ধড়ফড় হচ্ছেই, কানেও যন্ত্রণা হচ্ছে। প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীল হতে হত। পুজো কমিটিগুলিরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’’

শহরের প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েক বছর আগেও বিসর্জনে এমন বাজির দাপট ছিল না। আলোকসজ্জা ছিল মূল আকর্ষণ। প্রতিযোগিতা হতো আলোর রোশনাই আর বাহারি আতসবাজির। কিন্তু পরম্পরার দোহাই দিয়ে কারা যে এই ‘বেল বোম’ আর ‘আসমান গোলার’ বিকট শব্দ বাজির আমদানি করল, বুঝতে পারছেন না তাঁরা।

তবে নতুন প্রজন্মের বিজয় ঘোষাল, সেবাব্রত চট্টোপাধ্যায়েরা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এ বছর অনেকটাই শব্দ বাজির দাপট কমেছে। আতসবাজি কদম ঝাড় এবং বাহারি আলোর রোশনাই অনেক পুজো উদ্যোক্তাই শোভাযাত্রায় নিয়ে বেড়িয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই এক সময়ে শব্দবাজি বন্ধ হয়ে গিয়ে আতসবাজি ও আলোকসজ্জাই ফিরে আসবে এখানে।’’

তবে বিদ্যুৎ দফতর ও দমকলের কর্মীরাও ছিলেন সজাগ। মাইক্রোফোন হাতে শোভাযাত্রা সামলানোর ফাঁকে সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শব্দ বাজি একেবারে নির্মূল হবে ভাবা উচিত নয়। তবে আগের থেকে ৮০ শতাংশ কমেছে, এটা আমি দাবি করছি। ভবিষ্যতে আরও কমবে আশা রাখি।’’ তিনি জানান, কয়েকটি পুজো কমিটি ডিজে ব্যবহার করলেও অনেক পুজো কমিটি অনুরোধ মেনে তা ব্যবহার করেননি।

রাতের শেষ বেলায় দেখা গেল সমস্ত প্রতিমা স্বর্ণময়ীতলা হয়ে দশের পুকুরের পথ ধরেছে। ভোরবেলাতেই যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেয় বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। বিসর্জনের ক্লান্তি ঘোচাতে মঙ্গলবার অঘোষিত বন্‌ধ পালন করল সোনামুখী।

Immersion DJ Sound Pollution সোনামুখী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy