Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাজের হাল জানাবে ফোনে তোলা তথ্যই

জানা যাবে, এলাকার কতখানি রাস্তা পাকা, কতটা মোরামের, কতগুলি নলকূপ রয়েছে ইত্যাদি খুঁটিনাটি তথ্য। পঞ্চায়েত এলাকার খামতি কী, জানা যাবে তাও। এ ভাবেই পঞ্চায়েত এলাকার কাজে গতি এবং স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।

মিলিয়ে-দেখা: বিলির আগে চলছে সাজিয়ে নেওয়া। —নিজস্ব চিত্র।

মিলিয়ে-দেখা: বিলির আগে চলছে সাজিয়ে নেওয়া। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

ওয়েবসাইট খুলে পঞ্চায়েতের নাম দিলেই ফুটে উঠবে পঞ্চায়েত এলাকার স্যাটেলাইট মানচিত্র। খুঁটিয়ে দেখলে সামনে আসবে সরকারি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির ছবি। জানা যাবে, এলাকার কতখানি রাস্তা পাকা, কতটা মোরামের, কতগুলি নলকূপ রয়েছে ইত্যাদি খুঁটিনাটি তথ্য। পঞ্চায়েত এলাকার খামতি কী, জানা যাবে তাও। এ ভাবেই পঞ্চায়েত এলাকার কাজে গতি এবং স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।

সে জন্য পুরুলিয়া জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েত প্রধানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একটি করে স্মার্ট ফোন। ওই ফোনের মাধ্যমে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ধরে ইন্টারনেট পরিষেবার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ভাবে পঞ্চায়েতের এলাকা ভিত্তিক তথ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের ওয়েবসাইটে তুলে (আপলোড) দেওয়া যাবে। সোমবার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় ওই ফোন তুলে দিয়ে বলেন, ‘‘এই ভৌগোলিক তথ্যনির্ভর ব্যবস্থাপনায় জেলার সমস্ত পঞ্চায়েতগুলির তথ্যপঞ্জী উপগ্রহ মানচিত্রে তুলে আনা যাবে। এই কাজ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকায় কী কী নতুন সম্পদ তৈরি হল, গ্রাম সংসদ সভা নির্দিষ্ট সময়ে হচ্ছে কি না বা পঞ্চায়েত পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ কতটা রয়েছে— এ সবই এই ওয়েব মানচিত্র থেকে জানা যাবে।’’

জেলাশাসক জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন পঞ্চায়েত পরিচালনার কাজে আরও স্বচ্ছতা আসুক। এর ফলে তাও আসবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে রাজ্যের ন’টি জেলার কিছু পঞ্চায়েতে এই কাজ হয়েছিল। তা সফল হওয়ায় এ বার সারা রাজ্য জুড়ে সব পঞ্চায়েতেই (৩৩৪২টি) এই কাজ শুরু হয়েছে।

কী ভাবে ওয়েব মানচিত্রে তুলে আনা হবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকার ভৌগোলিক তথ্য? জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জানাচ্ছে, এত দিন পঞ্চায়েত এলাকার মানচিত্র সে ভাবে ছিল না। প্রমথত ওই ফোনের মাধ্যমে এ বার সেই মানচিত্র তৈরি করা যাবে। ওই পঞ্চায়েতে কতগুলি মৌজা রয়েছে, কত কিলোমিটার পিচ রাস্তা রয়েছে, কত কিলোমিটার কংক্রিট বা মোরাম রাস্তা রয়েছে, কতগুলি স্কুল রয়েছে, পানীয় জলের বা ব্যবহার্য জলের উৎস কোথায়, সব তথ্য ও ছবি জায়গা ধরে ধরে উল্লেখ করা হবে। এর ফলে সেখানে আর কী ধরনের কাজ বাকি রয়েছে, তা ওই মানচিত্র দেখলেই বোঝা যাবে।

এ ছাড়া সরকারি কোনও কাজ কোথায় হচ্ছে, সেখানে কাজের আগে কী অবস্থা ছিল, কাজ চলাকালীন ও কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরের ছবি তুলে ধরা হবে। এর ফলে খাতায় কলমে কাজ দেখানো হলেও, বাস্তবে সেই কাজ হয়েছে কি না, তা ছবি ও মানচিত্র দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। একই ভাবে গ্রাম সংসদের সভা কতগুলি হয়েছে, সেখানকার ছবিও দিতে হবে। তা দেখে সেখানে জনগণের অংশ কেমন, তা বোঝা যাবে। এই কর্মসূচির জেলা সঞ্চালক শ্যামল পাড়ুই বলেন, ‘‘কোনও পঞ্চায়েতই কোনও অসত্য তথ্য দিতে পারবে না। কারণ প্রতিটি ফোন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের নাম ধরে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে ওই ফোন দিয়ে অন্য পঞ্চায়েত এলাকার তথ্য ওয়েবসাইটে তোলা যাবে না। ফোনটি সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের উপর ভিত্তি করেই কাজ করবে।’’ এই কাজ করবেন পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কেরা। ইতিমধ্যে জেলাস্তরে সমস্ত পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কদের এই কাজের প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। এ বার ব্লকস্তরে প্রশিক্ষণ হবে।

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা অভিজ্ঞতায় দেখেছি বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঢিলেমির কারণে বিধি না মানার প্রবণতা চলে এসেছে। এই উন্নত প্রযুক্তির ফোনে সে সব কেটে কাজে গতি আসবে।’’ ফোন হাতে পেয়ে নিতুড়িয়া ব্লকের দিঘা পঞ্চায়েতের প্রধান লীলা মাজি, সাঁতুড়ি ব্লকের মুরাড্ডি পঞ্চায়েতের প্রধান টুকটুক সরকারও আশাবাদী, ‘‘এই ব্যবস্থার ফলে গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে গতি বাড়বে। স্বচ্ছতাও আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE