ইলামবাজারের মুর্গাবুনি গ্রামে একটি বাড়িতে হামলার চিহ্ন। রবিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
তৃণমূলের মোটরবাইক মিছিল থেকে শনিবার রাতে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ইলামবাজারের মুর্গাবনি গ্রামে। বাড়িতে বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট চলে বলেও অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় রবিবার পর্যন্ত কোনও পক্ষের তরফ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্গাবুনি এলাকায় প্রায় ২০০টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস। তার মধ্যে ২৫-৩০টি পরিবার তাদের সমর্থক বলে বিজেপির দাবি। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে ওই পরিবারগুলি তাঁদের দলের হয়ে মিটিং, মিছিল থেকে শুরু করে প্রচারে যোগ দেন। ভোটের দিনেও তাঁদের কেউ কেউ বিজেপির হয়ে কাজও করেন। বিজেপির অভিযোগ, ভোট মিটতেই ওই পরিবারগুলিকে গ্রামে থাকা সাবমার্সিবল ওয়াটার পাম্প ও পুকুর থেকে জল নিতে বাধা দেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের এক কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর অনুগামীরা। শনিবার ফের ঝামেলা বাধে ওই এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জেলার দু’টি লোকসভা আসনে বিপুল ব্যবধানে জয় উদ্যাপন করতে শনিবার মুর্গাবনি ও আশপাশের এলাকায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা মোটরবাইক মিছিল করেন। বিজেপির অভিযোগ, সেই মিছিল রাত ৮টা নাগাদ গ্রামে ঢোকে। জেলা পরিষদের এক কর্মাধ্যক্ষের অনুগামীরা জল না দেওয়ার প্রতিবাদ করা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হয়ে লাঠি, বাঁশ, রড দিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালাতে থাকেন বলে বিজেপির অভিযোগ। কয়েকজনকে মারধর ও হুমকিও দেওয়া হয় বলে দাবি। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীরও দু-একজনের বাড়িতে হামলা চলে বলে অনেকের দাবি।
ঘটনায় গ্রাম জুড়ে এখনও চাপা উত্তেজনা রয়েছে। তবে এ দিন গোটা গ্রামে কোথাও পুলিশের টহল বা নজরদারি চোখে পড়েনি। রবিবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। চারিদিক শুনশান। কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রাম। গ্রাম ঢোকার মুখে এক নাবালিকা দেখিয়ে দিল রাতে কোন দিকে হামলা চলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দারা বললেন, “বিজয় মিছিল করার পর গ্রামে ঢোকে বাইক বাহিনী। একের পর এক বাড়িতে হামলা চালাতে থাকে। ঘটনায় আমরা যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।”
তবে এই ঘটনা ঘটার পরেও বিজেপি নেতৃত্বকে পাশে পাওয়া যায়নি বলে বিজেপির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা অভিযোগ তুলেছেন। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি চিত্তরঞ্জন সিংহ বলেন, “২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর যে ভোট পরবর্তী হিংসা চলেছিল এটি তারই পুনরাবৃত্তি। আমরা কর্মীদের পাশে আছি।” অভিযোগ অস্বীকার করে ইলামবাজারে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। যেটুকু শুনেছি সেখানে একটা গ্রাম্য বিবাদের ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।”
কিন্তু এখনও কেন পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি? চিত্তরঞ্জনের দাবি, ‘‘মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাই গ্রামের কেউ অভিযোগ করতে পারেননি। কারণ, এখানে ২০২১ সালে ভোট পরবর্তী হিংসায় খুন হন গৌরব সরকার। তবে বিজেপির তরফে দ্রুত এ বিষয়ে অভিযোগ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy