Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Rice

Jewellery: চালের মধ্যে গয়না, ফিরিয়ে দিলেন আড়তদার

গয়না হারিয়ে ওই দম্পতি হয়েছিলেন শোকে মুহ্যমান, আর পরের গয়না নিজেদের কাছে রেখে দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছিল আড়তদারের পরিবারের।

ফেরানো হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া গয়না।

ফেরানো হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া গয়না। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২২ ০৭:২৪
Share: Save:

রেশনে পাওয়া ৯ কেজি চাল বিক্রি করতে গিয়ে স্ত্রীর লুকিয়ে রাখা গয়না ভর্তি ব্যাগটাও যে আড়তদারের কাছে চলে যাবে, ভাবতেই পারেননি রামপুরহাট থানার হরিওকা গ্রামের প্রৌঢ় কুমুদরঞ্জন মণ্ডল। গয়না হারিয়ে ওই দম্পতি হয়েছিলেন শোকে মুহ্যমান, আর পরের গয়না নিজেদের কাছে রেখে দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছিল আড়তদারের পরিবারের।

শেষমেষ সেই আড়তদার, আড়তদারের স্ত্রী এবং এক ভ্যানচালকের বদান্যতায় গয়না ভর্তি ব্যাগ ফেরত পেলেন কুমুদরঞ্জনের স্ত্রী অপর্ণা মণ্ডল। শুক্রবার স্থানীয় মসজিদ কমিটি ও ক্লাবের সদস্যদের উপস্থিতিতে অপর্ণার হাতে ছ’ভরি গয়না ভর্তি ব্যাগ তুলে দিলেন আড়তদারের স্ত্রী জাহিরুন্নেশা বিবি। ঘটনার সাক্ষী থাকলেন শ্রীকৃষ্ণপুর পাখুড়িয়া গ্রামের আরও অনেক বাসিন্দা। গয়না ফেরত পেয়ে আড়তদার ও তাঁর স্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কুমুদরঞ্জন ও অপর্ণা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল হরিওকা গ্রামের বাসিন্দা কুমুদরঞ্জন রেশনে পাওয়া ৯ কেজি চাল গ্রাম ছাড়িয়ে দেড় কিলোমিটার দূরে শ্রীকৃষ্ণপুর পাখুড়িয়ার আড়তদার বরকত আলির কাছে বিক্রি করেছিলেন। ওই সময় কুমুদবাবুর স্ত্রী খড়্গপুরে ছেলের কাছে গিয়েছিলেন। স্ত্রী ছেলের কাছে যাওয়ার আগে গয়না ভর্তি ব্যাগ যে বাড়িতে মজুত চালের মধ্যে রেখে যাবেন, সেটা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি কুমুদরঞ্জন! চার দিন আগে অপর্ণা বাড়ি ফিরে জানতে পারেন যে, সেই চালই আড়তদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন স্বামী। শুনেই মূর্ছা যাওয়ার জোগাড় অপর্ণার!

আড়তদার বরকত আলি বলেন, ‘‘চালের মধ্যে যে গয়না ভর্তি ব্যাগ ভরা আছে, তা প্রথমে জানতেই পারিনি। এক জন ক্রেতাকে চাল বিক্রি করতে গিয়ে ওই ব্যাগ দেখতে পাই। পরে ওই ক্রেতা গয়না ভর্তি ব্যাগ নিজের বলে দাবি করেন। কিন্তু, এক ভ্যানচালক এবং আমার স্ত্রীর উপস্থিত বুদ্ধিতে গয়না ভর্তি ব্যাগটি অন্য কাউকে দেওয়া হয়নি।’’ রাজা শেখ নামে ওই ভ্যান চালক বরকতের আড়তের চাল বহন করেন। তিনি আড়তদার ও তাঁর স্ত্রীকে প্ৰকৃত মালিক ছাড়া গয়না হাতছাড়া না-করার কথা বুঝিয়েছিলেন।

বরকতের স্ত্রী জহিরুন্নেশা বিবি জানান, গয়না ভর্তি ব্যাগটির প্রকৃত মালিক কে, তা নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় ছিল। আবার নিজেদের কাছে পরের এত গয়না রাখা নিয়েও একটা ভয় কাজ করছিল। আশেপাশে অনেকেই বিষয়টা জানতে পেরে নিজেদের গয়না দাবি করে বাড়িতে আসতে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রকৃত গয়নার মালিকের হাতে গয়নার ব্যাগ তুলে দেওয়ার জন্য স্থানীয় মসজিদে মানতও করি। শেষমেষ বৃহস্পতিবার হরিওকা গ্রামের এক ভদ্রমহিলা তাঁর স্বামীকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন। ওই ব্যাগে কী কী গয়না রাখা আছে, তার হুবহু বিবরণ দেন। স্বামীর ভুলের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন।’’

বরকত বলেন, ‘‘আমরা প্রকৃত মালিকের হাতে গয়না ভর্তি তুলে দিতে চেয়েছিলাম। ওই মহিলার কাছ থেকে ব্যাগে রাখা গয়নাগুলির সঠিক বিবরণ পেয়ে গ্রামের পাঁচ জনের উপস্থিতিতে এ দিন তাঁদের হাতে গয়না ফেরত দেওয়া হয়েছে।’’ হারানিধি ফেরত পেয়ে অপর্ণা যারপরনাই খুশি। হাঁফ ছেড়েছেন কুমুদরঞ্জনও। অপর্ণা বলছেন, ‘‘আমার বাড়িতে দুই ছেলে আছে। এখন থেকে বরকতও আমার ছেলে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rice jewellery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE