Advertisement
E-Paper

স্যানিটারি ন্যাপকিন যন্ত্র এড়াচ্ছে ছাত্রীরা

এটা মাত্র একটা উদাহরণ। কিন্তু জেলার বিভিন্ন স্কুলে পরিস্থিতি এমনই। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্কুলে ওই যন্ত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। কয়েকটি স্কুলে পরীক্ষামূলক ভাবে দেওয়া হয়েছে ওই যন্ত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:২০
হানাবাড়ি: এমনই হাল কমনরুমের। ময়ূরেশ্বরের স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

হানাবাড়ি: এমনই হাল কমনরুমের। ময়ূরেশ্বরের স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

বছরখানেক আগের কথা। ব্লক অফিস থেকে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া হাইস্কুলে দেওয়া হয়েছিল স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন। সেই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় আঠেরোশো। ৫০ শতাংশই ছাত্রী। কিন্তু ছাত্রীদের কমনরুম দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অযোগ্য। তাই ওই যন্ত্র বসানো হয় স্কুলের অফিসঘর লাগোয়া সিঁড়ির নীচে। শিক্ষকরা তো বটেই, সেখানে অবাধ যাতায়াত রয়েছে ছাত্রদেরও। তাই স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক সময় অস্বস্তিতে পড়ে ছাত্রীরা।

এটা মাত্র একটা উদাহরণ। কিন্তু জেলার বিভিন্ন স্কুলে পরিস্থিতি এমনই। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্কুলে ওই যন্ত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। কয়েকটি স্কুলে পরীক্ষামূলক ভাবে দেওয়া হয়েছে ওই যন্ত্র। কিন্তু সেটি কোথায় বসানো হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন অনেক স্কুলের কর্তৃপক্ষ। কারণ ওই যন্ত্র বসানোর উপযুক্ত জায়গা নেই সে সব স্কুলে। প্রশ্ন উঠেছে, এমন ক্ষেত্রে ওই যন্ত্র নিয়ে কী করা যাবে?

প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এখনও অনেক গ্রামীণ এলাকার দোকানে মেলে না স্যানিটারি ন্যাপকিন। কোথাও তা থাকলেও লোকলজ্জায় অনেকেই দোকান থেকে তা কিনতে পারে না। সেই সমস্যা মেটাতেই স্কুলে স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিলির যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যাতে স্কুলে থাকাকালীন ছাত্রীদের কখনওই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয়। কিন্তু সেই যন্ত্র বসানোর জায়গা খুঁজতে গিয়ে হয়রান কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে কো-এডুকেশন স্কুলে সেই সমস্যা আরও বেশি।

শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে ওই যন্ত্র বসানোর কথা ছাত্রীদের কমনরুমে। কিন্তু জেলার বেশির ভাগ স্কুলেই মেয়েদের জন্য কোনও কমনরুম নেই। তার জেরে স্কুলে স্কুলে ওই যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে।

এ বিষয়ে অভিভাবক রবীন্দ্রনাথ দাস, সুনীল মণ্ডলের মতো কয়েক জনের বক্তব্য, ‘‘মেয়েরা বাড়িতে জানিয়েছে, কেউ দেখে ফেলবে সেই লজ্জায় স্কুলে ওই যন্ত্র ব্যবহার করতে চায় না। তা হলে ওই যন্ত্র বসিয়ে কী লাভ হল?’’

এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ওই যন্ত্র ছাত্রীদের কমনরুমে বসাতে পারলেই ভাল হত। তা হলে তারা নির্বিঘ্নে সেটি ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু অনেক দিন ধরে ওই কমনরুম ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রশাসনকে জানালেও তার সুরাহা এখনও হয়নি।’’ একই সমস্যা নানুরের জুবুটিয়া জপেশ্বর বিদ্যামন্দির, লাভপুরের মহেশগ্রাম মুরারিমোহন হাইস্কুলেও। জুবুটিয়ার স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৮২৯ জন। তার অর্ধেকই ছাত্রী। মহেশগ্রামে ২৫০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৪৫ শতাংশ ছাত্রী। ওই দুই স্কুলে অবশ্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং যন্ত্র এখনও এসে পৌঁছয়নি। কিন্তু দু’টি স্কুলেই মেয়েদের কমনরুম নেই। তাই ওই যন্ত্র কোথায় বসানো হবে, তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের। জুবুটিয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাখনলাল মণ্ডল, মহেশগ্রামের প্রধান শিক্ষক তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের কথায়— ‘‘আমাদের কো-এডুকেশন স্কুল। কিন্তু মেয়েদের আলাদা কোনও কমনরুম নেই। তাই ওই যন্ত্র মিললে তা নিয়ে কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।’’

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অধীর কুমার দাস বলেন, ‘‘শুধু ওই যন্ত্রের জন্য নয়, মেয়েদের নিজস্ব কিছু প্রয়োজনেও প্রতিটি স্কুলে তাদের জন্য কমনরুম থাকা প্রয়োজন। কিন্তু জেলার অনেক স্কুলেই তা নেই। আগে সে সব স্কুলে কমনরুম তৈরি করতে হবে। না হলে ওই যন্ত্র বসিয়ে কোনও লাভ হবে না।’’

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক বলেন, ‘‘ওই সব স্কুলের তরফে লিখিত ভাবে কমনরুম তৈরির দাবি জানানো হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

Girl Hostel Sanitary napkin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy