Advertisement
E-Paper

কুসংস্কার রোখার পাঠ তাপাসপুরে

শেষ পর্বে ওঠে তাপাসপুর গ্রামের সোমবারের ঘটনার কথা। স্কুল থেকে মাত্র কিলোমিটার দূরে গ্রামটি। সেখানে রোগেভুগে হাসপাতালে মারা যান বছর বাইশের এক যুবক। ওই যুবকের মৃত্যুর জন্য সদ্যবিধবা স্ত্রীকে দায়ী করে তাঁকে মারধর, হেনস্থা করেছিল এলাকাবাসীর একাংশ।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৫০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সচেতনতার পাঠ শুরু হোক বাড়ি থেকেই। পড়ুয়ারাই অভিভাবকদের বোঝাক তন্ত্রমন্ত্র, ঝাড়ফুঁক কিংবা তুকতাক করে কারও অনিষ্ঠ কিংবা ভাল করা যায় না। এগুলো শুধুই কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস। নবম শ্রেণির কন্যাশ্রী প্রাপক ছাত্রীদের উদ্দেশে মঙ্গলবার এমনই বার্তা দিলেন চিনপাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ মজুমদার ও স্কুলের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

এ দিন চিনপাই স্কুলে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস পালনে অনুষ্ঠান হয়। তার শেষ পর্বে ওঠে তাপাসপুর গ্রামের সোমবারের ঘটনার কথা। স্কুল থেকে মাত্র কিলোমিটার দূরে গ্রামটি। সেখানে রোগেভুগে হাসপাতালে মারা যান বছর বাইশের এক যুবক। ওই যুবকের মৃত্যুর জন্য সদ্যবিধবা স্ত্রীকে দায়ী করে তাঁকে মারধর, হেনস্থা করেছিল এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, তন্ত্রসাধনা, ঝাঁড়ফুক করেই স্বামীকে মেরেছেন ওই তরুণী। রেহাই পাননি ওই তরুণীর বাপের বাড়ির লোকেরাও। পরিস্থিতি এমন হয় যে, কিছু শিক্ষিত যুবক বাধা না দিলে এবং সময় মতো পুলিশ না এলে প্রাণে বাঁচতেন না ওই বধূ।

২২ শ্রাবণের অনুষ্ঠানে স্কুলে এসেছিল তাপাসপুর গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরাও। এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি শিক্ষকেরা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সোমবারের প্রসঙ্গ উঠতেই প্রধান শিক্ষক ও সহ শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এ সব কুসংস্কার। মানুষের এমন ক্ষমতা নেই যে মন্ত্রবলে বা ঝাড়ফুঁক করে কারও অনিষ্ঠ করা সম্ভব। পাড়ায় বা গ্রামে কেউ এগুলো বিশ্বাস করতেই পারেন। তোমরা তো শিক্ষার আলোয় এসেছো। তোমরা কেন সেটা বিশ্বাস করবে?’’

শিক্ষকেরা জানালেন, গ্রামে ঘটে যাওয়া ঘটনা কুসংস্কার থেকেই ঘটেছে— কিছু ছাত্রী শুরুতে তা মানতেই চায়নি। পরে বুঝিয়ে বলতে কাজ হয়। শেষে স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী দীপিকা ওরং, প্রিয়াঙ্কা কোনাই, মিকু দোলই, তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, জাহানারা খাতুনরা মিলিত প্রতিশ্রুতি দেয়, ‘‘আমরা বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের বোঝাব। পরে বাড়িতে বাড়িতে এই নিয়ে প্রচারও চালাব।’’

স্কুলে সূত্রে জানা গিয়েছে, নবম শ্রেণির মোট পড়ুয়া ৩২৫। তার অর্ধেক ছাত্রী। এদের মধ্যে কম করে ৪০-৫০ জন শুধু ওই তাপাসপুর গ্রাম বা কাছাকাছি এলাকা থেকে স্কুলে আসে। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়ার চাপ বেশি। তাই নবম শ্রেণির ছাত্রীদের ভাল-মন্দের পাঠ দেওয়া হয়েছে। কারণ ওরা এখন বড় হয়েছে। অভিভাবকদের বুঝিয়ে বলতেও পারবে। ওদের সঙ্গে সব সময় আমরা থাকব।’’ যোগ করছেন, ‘‘পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে গ্রামে গিয়ে সচেতনতামূলক একটা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে রয়েছে। তবে জনরোষের মাঝে ছাত্রীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, গত দিনের ঘটনায় কিছুটা হলেও চাপে রয়েছেন গ্রামের মানুষ। তাঁদের আশঙ্কা, পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে কিংবা ধরে নিয়ে যেতে পারে। তবে ওই বধূ যে তন্ত্রসাধনা করেই স্বামীকে মেরেছেন, এই বিশ্বাস থেকে সরে আসেননি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই। তবে কেউ কেউ এখন মনে করছেন, মণি ওরফে সাবিত্রী নামের ওই তরুণীকে মারধর ঠিক হয়নি।

জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘ওই গ্রামে আমাদের নজর থাকছে। বাসিন্দাদের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করতে সচেতনতামূলক কিছু করার চিন্তাভাবনা চলছে।’’

Superstition কুসংস্কার awareness program
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy