পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে প্রস্তুতি।—নিজস্ব চিত্র
রঘুনাথপুরকে রাজ্যের অন্যতম শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলে আসছেন। তবে একমাত্র ডিভিসি ছাড়া ভারী শিল্প এখনও তৈরি হয়নি সেখানে। সেই রঘুনাথপুরের জেলা সদর পুরুলিয়ায় এ বার মূলত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প টানতে দু’দিনের সিনার্জি (শিল্প সম্মেলন) বসতে চলেছে। আজ, শুক্রবার রবীন্দ্র ভবনে ওই সম্মেলন শুরু হচ্ছে। আয়োজন করেছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং বস্ত্র দফতর।
রাজ্য সরকারের এতদিনের স্লোগান— পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করার নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে চান? এ বার সেই স্লোগানটা পুরুলিয়ার জন্যও তোলা শুরু হয়ে গেল। এখানে জেলা বণিকসভার প্রতিনিধিদের যেমন ডাকা হয়েছে, তেমনই বাইরের বিনিয়োগকারীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে এই ধরনের উদ্যোগের প্রশাংসই করছেন জেলার শিল্পদ্যোগীরা। তাঁদের মতে, এই সম্মেলন জেলায় প্রথম। আশাকরি ভালই সাড়া পাওয়া যাবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সম্মেলনে আসা শিল্পদ্যোগীদের একছাতার তলায় এনে তাঁদের জন্য এই জেলায় যা যা সম্ভাবনা রয়েছে তা জানানো হবে। এখান থেকেই তাঁদের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই জেলায় শিল্পের উপযোগী কী কী পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তা তুলে ধরা হবে। বিনিয়োগকারীদের কী ধরনের সহযোগিতা করা হবে তাও বিশদে জানানো হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা কোনও প্রস্তাব দিলে তা বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা হবে।’’
পুরুলিয়া জেলা শিল্পকেন্দ্রের ম্যানেজার প্রণবকুমার নস্কর বলছেন, ‘‘জেলায় বিনিয়োগের সুবিধার্থে আমরা কী কী পদক্ষেপ করেছি, তা তুলে ধরা হবে।’’ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই তাঁরা জেলা শিল্পকেন্দ্রে একটি ‘ফেসিলেশন সেন্টার’ খুলেছেন। সেখানে শিল্প স্থাপনে আগ্রহীরা গেলে তাঁদের যাবতীয় প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। বেকার ছেলেমেয়েরাও সেখানে গেলে কী ধরনের শিল্প করা যায়, কোথা থেকে ঋণ মিলবে— সব জানানো হচ্ছে।
রাজ্য শিল্প দফতর ইতিপূর্বে সোয়াস (সার্ভিস উইথ অ্যা স্মাইল) নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। যে কোনও বিনিয়োগকারী নিজের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে পারেন। সেই অ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন করলে, জবাবও মিলে যাচ্ছে। প্রণববাবুর কথায়, ‘‘কারও জমি সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে, কারও হয়তো দূষণ সংক্রান্ত কোনও জিজ্ঞাসা রয়েছে, তাঁরা ওই অ্যাপে জানালে আমরাই জবাব দিয়ে দেব। যদি তাঁদের প্রশ্ন অন্য দফতর সংক্রান্ত হয়, সেখান থেকে জেনে আমরাই জবাব পাঠিয়ে দেব। এই অ্যাপটি সম্পর্কেও বিনিয়োগকারীদের ওয়াকিবহাল করা হবে।’’
এ ছাড়া, বিনিয়োগে আগ্রহীদের কাজের সুবিধার্থে শিল্প-সংক্রান্ত আইনের খুটিনাটি, সরকারের শিল্পনীতি, সরকারের শিল্পবান্ধব সুযোগসুবিধা ইত্যাদি বিষয়গুলি বিনিয়োগকারীদের সামনে বিশদে তুলে ধরা হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোগে বা ছোট উদ্যোগে বিনিয়োগকারীদের সরকার কতটা ভর্তুকি দেবে, জমির জমির চরিত্র বদলের জন্য কী ভাবে আবেদন করতে হবে, আবেদনপত্রের সঙ্গে কী কী লাগবে সবই জানানো হবে।
এই শিল্প সম্মেলনে জেলার সমস্ত ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি থেকে কী ধরনের সহযোগিতা মিলবে তাও একছাদের তলায় জানা যাবে। পুরুলিয়ার জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার শ্রীকান্তমোহন মাহাতো বলেন, ‘‘এই সম্মেলনে জেলার আট-দশটি ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বিনিয়োগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা থাকছেন।’’
জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমরা বিনিয়োগের জন্য পদ্ধতি কতটা সরলীকরণ করেছি, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়িতে বসেই বিনিয়োগকারীরা কী ধরনের পরিষেবা পাবেন তা তুলে ধরা হবে।’’ পুরুলিয়া চেম্বার অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জেলা সভাপতি গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘শিল্প করতে গিয়ে জমি, মিউটেশন, দূষণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। বিষয়টি জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম। সিনার্জিতে যা হবে বলে শুনেছি, তা হলে ভালই হবে।’’
যদিও পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এই সিনার্জি নিয়ে নব উদ্যোমে নামলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এ নিয়ে কিছুই জানেন না। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার ওই শিল্প সম্মেলনের বিষয়টি নিয়ে আমি কিছুই জানি না। কোনও মন্তব্যও করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy