Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Corona

পাঠদানে স্পিকার-চিপ পৌঁছে দিচ্ছেন শিক্ষকেরা

বহু দিন পড়াশোনার বাইরে থাকা পডুয়ারা এতে নতুন করে পড়ার আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন অভিভাবক অনিল দাস, ডাক্তার মুর্মুরা।

একমনে: চলছে পড়াশোনা।

একমনে: চলছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র।

পাপাই বাগদি
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২১ ০৭:২৩
Share: Save:

অডিয়ো স্পিকার, চিপ আর প্রশ্নপত্র। বাড়ি এসে স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে যাওয়া তিনটি জিনিসে ভর করেই নতুন করে পড়া শুরু করেছে মহম্মদবাজারের চারটি স্কুলের পড়ুয়ারা।

এক বছরের বেশি বন্ধ স্কুল। নির্দিষ্ট তথ্য, পরিসংখ্যান না থাকলেও এই সময়ে স্কুলছুটের সংখ্যা যে লাফিয়ে বেড়েছে তাতে সংশয় নেই অনেক বিশেষজ্ঞের। এমন অবস্থায় স্কুলছুট কমাতে ও শিশুশ্রম রুখতে তৎপর হয়েছেন আঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েতের রাজ্যধরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরিচা পঞ্চায়েতের রাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দোবান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিমদাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক। আপাতত প্রতিটি স্কুলের ২৫ জন করে মোট ১০০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে পড়ুয়াদের অডিও স্পিকারের মাধ্যমে পড়ানো শুরু করেছেন।

এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শিক্ষক সুশান্ত অধিকারী, আনন্দ বাগদি, সুশান্ত দাস, উৎপল ঘোষ, বিকাশ মণ্ডল ও এহেসান আলিরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিক্ষকদের উদ্যোগেই পড়ুয়াদের কিনে দেওয়া হয়েছে একটি করে স্পিকার। তার মাধ্যমে পড়ুয়ারা প্রথমে চিপে থাকা শিক্ষকদের অডিয়ো রেকর্ড শুনছে। তার পরে শিক্ষকদের দেওয়া প্রশ্নের উত্তর তৈরি করতে হচ্ছে। এ ভাবে পড়ানো হচ্ছে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের। অডিয়ো স্পিকারের মাধ্যমে এক এক দিন এক একটি বিষয়ের উপরে শিক্ষকরা অডিয়ো তৈরি করে পৌঁছে দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের হাতে। বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল, পরিবেশ বিজ্ঞান এই ভাবেই যতটুকু সম্ভব পড়ানো হচ্ছে। থাকছে পরিবেশ সংক্রান্ত প্রশ্ন ও অডিয়ো। তবে আপাতত বাদ থাকছে অঙ্ক। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এক বা দু’দিন পরে ওই পড়ুয়ার কাছে গিয়ে উত্তরপত্র নিয়ে এসে আবার দেওয়া হচ্ছে নতুন প্রশ্নপত্র। স্পিকারের জন্য দেওয়া হচ্ছে নতুন চিপ।

বহু দিন পড়াশোনার বাইরে থাকা পডুয়ারা এতে নতুন করে পড়ার আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন অভিভাবক অনিল দাস, ডাক্তার মুর্মুরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় এত দিন পড়াশোনা করছিল না ছেলেমেয়েরা। আগে স্কুল খোলা থাকলে বাড়িতে প্রতিদিন পড়াশোনা করত। আমরাও যে ছেলেমেয়েকে বসিয়ে পড়াশোনা করাব সেই ক্ষমতা নেই। এখন ওরাই আবার পড়তে বসছে।’’ তাঁরা মানছেন, একে অভাব তার উপরে স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েরা ছোট থেকে কাজ শুরু করছে। কিন্তু, এলাকার শিক্ষকেরা যে ভাবে বাড়িতে এসে ছেলেমেয়েদের খোঁজ নিচ্ছেন ও স্পিকারের মাধ্যমে পড়াশোনা করাচ্ছেন তাতে অবস্থা পাল্টাচ্ছে বলেও মানছেন অভিভাবকেরা।

এই উদ্যোগে প্রথম থেকে রয়েছেন শিক্ষক সুশান্ত অধিকারী। তিনি বলছেন, ‘‘এখন সবথেকে অবহেলিত থেকেছে প্রাথমিক শিক্ষা। স্কুল বন্ধের ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পিছিয়ে পড়া এলাকার পড়ুয়ার। তাই পরিস্থিতি দেখে এ ভাবে পড়ানো শুরু হয়েছে। তাতে বেশ সাড়াও মিলেছে এলাকার সমস্ত পরিবার ও ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE