Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
School Teacher

‘দুয়ারে শিক্ষা’ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে হাজির শিক্ষকেরা

বুধবার মহম্মদবাজার ব্লকের পুরাতনগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর ও জয়রামপুর গ্রামে ওই স্কুলের উদ্যোগে ‘দুয়ারে শিক্ষা’ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাড়ির উঠোনে পৌঁছে গিয়েছেন শিক্ষক।

বাড়ির উঠোনে পৌঁছে গিয়েছেন শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

পাপাই বাগদি
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২১ ০৫:৩৩
Share: Save:

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ। এর প্রভাব ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাতেও পড়ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অনেক ছেলেমেয়েই সংসারে সাহায্য করার তাগিদে পড়াশোনা ছেড়ে কোনও কাজ করছে। ফলে, স্কুলে বেড়ে যাচ্ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। তা ছাড়া, স্কুল বন্ধ থাকায় নাবালিকা বিয়ের প্রবণতাও বাড়ছে। এমনই সব ছেলেমেয়েকে ফের স্কুলমুখী করতে এবং বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে ‘দুয়ারে শিক্ষা’ কর্মসূচি নিয়েছে ময়ূরেশ্বর ব্লকের বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়।

বুধবার মহম্মদবাজার ব্লকের পুরাতনগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর ও জয়রামপুর গ্রামে ওই স্কুলের উদ্যোগে ‘দুয়ারে শিক্ষা’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ছিলেন বাজিতপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা এলাকার প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করেন। স্কুল বন্ধ থাকলেও ছেলেমেয়েরা যাতে পড়া চালিয়ে যায়, তার পরামর্শ দেন।

কী ভাবে কাজ করবে এই কর্মসূচি?

তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার ছাত্রছাত্রী রয়েছে বাজিতপুর স্কুলে। স্কুল সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষকেরা ওই পঞ্চায়েত এলাকার ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পড়াশোনা করার পরামর্শ দেবেন। গ্রাম্য এলাকায় বহু ছেলেমেয়েরই স্মার্টফোন নেই। তবে, এলাকায় বেশ কিছু পড়ুয়ার পরিবারে কাছে স্মার্টফোন রয়েছেও। ওই সব পরিবারকে অনুরোধ করা হবে, তাদের সন্তানদের সঙ্গে স্মার্টফোন না-থাকা ছেলেমেয়েদেরও যাতে একসঙ্গে বসিয়ে অনলাইন ক্লাস করানো যায়। যাতে সকলেই কমবেশি নিজেদের ন্যূনতম পড়াশোনাটুকু চালিয়ে যেতে পারে। বাজিতপুর স্কুলের এমন উদ্যোগে খুশি এলাকার ছেলেমেয়েরা সহ তাঁদের পরিবারেরাও।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্তকুমার দাস বলেন, ‘‘এই অতিমারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়াও আমরা খবর পাচ্ছি, স্কুল বন্ধ থাকায় এলাকার বহু নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। মূলত স্কুলছুট, বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম রুখতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’ তিনি জানান, প্রতিটি এলাকায় যাদের মোবাইল রয়েছে আর যাদের মোবাইল নেই, এমন বেশ কয়েক জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে একটি করে টিম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা সকলেই পারস্পরিক সহযোগিতায় নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘এতে আমরা ভাল সাড়াও পাচ্ছি।’’

অভিভাবক মলয় চক্রবর্তী, পলাশ সাহা, স্বপন মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘স্কুলের উদ্যোগে আমরা খুব খুশি। আমরা নিজেদের কাজে সব সময় বাইরে থাকি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার দিকে নজর দিতে পারি না। স্কুল বন্ধ থাকায় ওরা পড়াশোনা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। শিক্ষকেরা যেভাবে বাড়িতে এসে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, তাতে ওরা উৎাসী হয়ে আবার পড়বে। অসংখ্য ধন্যবাদ স্কুলের সমস্ত শিক্ষককে।’’

স্কুলপড়ুয়া রিমা সাহা, সুদীপা চক্রবর্তী, রাজ মণ্ডল জানায়, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে মানসিক ভাবে অসুস্থ বোধ করছিল তারা। পড়াশোনাতেও মন লাগছিল না। তাদের কথায়, ‘‘এ দিন শিক্ষকেরা আমাদের সঙ্গে দেখা করে মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁরা আমাদের সঙ্গে এ ভাবে যোগাযোগ রাখলে আমরাও পড়াশোনা চালিয়ে যাব। স্যারেরা যে ভাবে বাড়িতে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন, সেটাও খুব ভাল লেগেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE