Advertisement
E-Paper

পুজোর মঞ্চে কুর্নিশ এক সাহসিনীর লড়াইকে

বছর তেরোর মেয়েটি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে মঞ্চে শোনাচ্ছিল তার লড়াইয়ের কথা। কয়েক মাস আগের ঘটনা। অভিভাবকদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে একাই সে রুখে দিয়েছিল নিজের বিয়ে। মানবাজার থানার আদিবাসী গ্রাম শহরডির রমণী হাঁসদা পড়াশোনা করতে চায়।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:১৩
মন্ত্রীর হাত থেকে স্মারক নেওয়া। —নিজস্ব চিত্র।

মন্ত্রীর হাত থেকে স্মারক নেওয়া। —নিজস্ব চিত্র।

বছর তেরোর মেয়েটি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে মঞ্চে শোনাচ্ছিল তার লড়াইয়ের কথা। কয়েক মাস আগের ঘটনা। অভিভাবকদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে একাই সে রুখে দিয়েছিল নিজের বিয়ে।

মানবাজার থানার আদিবাসী গ্রাম শহরডির রমণী হাঁসদা পড়াশোনা করতে চায়। তার সেই সাহসিকতার জন্য স্থানীয় মহড়া হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীটিকে রবিবার মানবাজার থানা সর্বজনীন কালীপুজো কমিটি সংবর্ধনা দিল। রমণীর হাতে স্মারক তুলে দেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যান দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। দর্শকদের মুঠোয় ধরা অসংখ্য মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি হল সেই দৃশ্য। মানবাজার থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ওই কিশোরীর হাত ধরেই এই এলাকায় দীপাবলির আলো জ্বলল। এই আলো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে।’’

প্রতি বছর মানবাজার থানা সর্বজনীন কালীপুজো কমিটি পুজোর পরের দিন থানা চত্বরে দরিদ্র মানুষজনকে বস্ত্রদান ও অন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই বছর সাহসী মেয়েটিকে সবার সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কমিটির অন্যতম কর্তা তথা মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতো বলেন, ‘‘অতটুকু মেয়ে যে মনের জোর আর সাহসের পরিচয় দিয়েছে, তার জন্যই ওকে সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই ওর কথা শুনে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হোক।’’

চলতি বছরের ৩১ মে শহরডি গ্রামের কিশোরী রমণীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল কেন্দা থানার ট্যুকা গ্রামের এক যুবকের। ওই কিশোরী তার অভিভাবকদের জানায়, নির্দিষ্ট বয়সের আগে বিয়ে করা উচিত নয়। তা ছাড়াও সে পড়া চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তার কথায় কেউই বিশেষ আমল দেয়নি।

হাল ছাড়েনি রমণী। এক দিন স্কুল পালিয়ে সটান চলে গিয়েছিল পঞ্চায়েত অফিসে। সমস্ত কথা খুলে বলেছিল। তা শুনে বামনি-মাঝিহিড়া পঞ্চায়তের প্রধান ফতেমা বিবি পুলিশ এবং বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে রমণীর বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। কথাবার্তা বলার পরে ওই কিশোরীর বাবা আনন্দ হাঁসদা নিজের ভুল বুঝতে পারেন। প্রতিশ্রুতি দেন, মেয়ে সাবালিকা হলে তবেই বিয়ে দেবেন। লড়াকু মেয়েটির পড়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে এককালীন কিছু টাকাও দেওয়া হয়।

এই লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পুজো কমিটি রমণীর হাতে তুলে দিয়েছে স্মারক ও শংসাপত্র। মন্ত্রী সন্ধ্যারানিদেবী বলেন, ‘‘এলাকায় বাল্য বিবাহ রুখতে আগামী দিনে রমণীকে মুখ করা হবে। ও মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে কাহিনি শোনাল তাতে ওর বয়সী অন্য মেয়েরা সাহস পাবে।’’

পুজো কমিটি আয়োজিত দৌড় প্রতিযোগিতার প্রথম ১৫ জনকে এ দিন পুরস্কৃত করা হয়েছে। ৪৬ বছরের অশোক কর্মকার এবং ৮ বছরের সূরজ দাসকেও বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতো, মানবাজারের সিআই সুবীর কর্মকার, ওসি শেখর মিত্র, মানবাজার মসজিদ কমিটির সম্পাদক শেখ জিয়াউল রহমান প্রমুখ।

Teen Girl Awarded Minor Marriage Awarded for Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy