Advertisement
E-Paper

হাতে পদক, মুখে আঁধার

পদক নিয়ে ভিন রাজ্য থেকে ফিরল কোতুলপুরের তিন কন্যা। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বরণ করে নেবে বলে মালা, আতসবাজি আর মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল গোটা গ্রাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
কৃতী তিন মেয়ে। নিজস্ব চিত্র

কৃতী তিন মেয়ে। নিজস্ব চিত্র

পদক নিয়ে ভিন রাজ্য থেকে ফিরল কোতুলপুরের তিন কন্যা। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বরণ করে নেবে বলে মালা, আতসবাজি আর মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল গোটা গ্রাম। কিন্তু তিন মেয়ের মুখে হাসি নেই। কেন? শুধু পদক নয়, বিদেশ যাওয়ার ডাকও নিয়ে ফিরেছে ওরা। নিজেরাও জানে, সে জন্য খরচ বিস্তর।

শিবানি ক্ষেত্রপাল, নমিতা সাঁতরা আর রূপসা দে। কেরালা জিমন্যাস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে তিরুঅনন্তপুরমের জিমি জর্জ স্টেডিয়ামে ১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া অ্যাক্রোব্যাটিক জিমনাস্টিকস ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রায়ো ইভেন্টে ১৮টি রাজ্যের ৩৫টি দলকে হারিয়ে দিয়েছে তারা। জুনিয়র বিভাগে পেয়েছে সেরার শিরোপা। সোনার পদক। কোতুলপুর বিবেকানন্দ ক্লাবের সভাপতি কালীকৃষ্ণ ভদ্র বলেন, ‘‘আজারবাইজানে আন্তর্জাতিক অ্যাক্রোব্যাটিক জিমন্যাস্টিক চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছে ওরা। কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে?’’

তিন কন্যাই উঠে এসেছে গ্রামের প্রান্তিক পরিবার থেকে। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বিবেকানন্দ ক্লাবের সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘ধারদেনা করে, সবার সাহায্য নিয়ে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলাম কেরল যাওয়ার জন্য। বিদেশ যেতে তো কয়েক লক্ষ টাকা দরকার!’’ শুক্রবার কোতুলপুরের বাঘরোল গ্রামে নমিতাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তিন বন্ধু বসে রয়েছে দাওয়ায়। নমিতার বাবা শ্রীকান্ত সাঁতরা বলেন, ‘‘হিমঘরে কাজ করি। আমাদের ঘরের মেয়ের আবার বিদেশ যাওয়া! একটা খেলার জামার দামই তো এগারোশো টাকা। সেটাই জোগাড় করতে ধারদেনা করতে হয়েছে।’’ নবম শ্রেণির পড়ুয়া নমিতা। শিবানীও। তার বাবা লক্ষীকান্ত ক্ষেত্রপাল মুটের কাজ করেন। নেতাজি মোড়ে বাসে মালপত্র তোলেন। রূপসা সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। বাবা লজেন্স ফেরি করেন। ভবিষ্যতের ভাবনায় কূল পাচ্ছেন না তাঁরাও।

তিন মেয়ের কোচ কৃষ্ণা ভদ্র বলেন, ‘‘ওদের প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু এই খেলায় তো পুষ্টিকর খাবার দরকার। কাঁধের পেশির জোর বাড়াতে হয়। পাবে কোথায়!’’ বিবেকানন্দ ক্লাবের আরও এক প্রশিক্ষক সদানন্দ ভদ্র বলেন, ‘’৭০ জন আমাদের ক্লাবে প্রশিক্ষণ নেয়। এর আগে চার বার সাফল্য এসেছে জাতীয় স্তরে। অনুশীলনের পরিকাঠামো নেই। সিমেন্টের মেঝেতে, খোলা আকাশের নীচে, সস্তার ম্যাট পাতা থাকে। বাচ্চাগুলো শুধু অধ্যাবসায়ের জোরে এই জায়গায় গিয়েছে।’’

সেই অধ্যাবসায় আর জেদ সম্বল করে স্বপ্ন দেখছে তিন কৃতী।

Gymnastic Gold Medal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy