Advertisement
E-Paper

ঝালদায় তিন নেতাকে বহিষ্কার করল কংগ্রেস

গোঁজ প্রার্থী শুধু শাসকদলের নয়, বিরোধীদেরও যে মাথাব্যথার কারণ, তার প্রমাণ মিলল ঝালদায়। দলের গোঁজেরাই সমস্যা হতে পারে পুরভোটে, এই আশঙ্কা থেকে ঝালদায় দলের এক বিদায়ী কাউন্সিলর-সহ শহর কমিটির তিন নেতাকে বহিষ্কার করল কংগ্রেস। একই সঙ্গে প্রার্থী ঘোষণা, এমনকী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পার হয়ে গেলেও দলবদলও অব্যাহত পুরুলিয়ার এই প্রান্তিক পুর-এলাকায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪১
প্রচারে পুরুলিয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সোহেল দাদ খান। বৃহস্পতিবার।— নিজস্ব চিত্র।

প্রচারে পুরুলিয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সোহেল দাদ খান। বৃহস্পতিবার।— নিজস্ব চিত্র।

গোঁজ প্রার্থী শুধু শাসকদলের নয়, বিরোধীদেরও যে মাথাব্যথার কারণ, তার প্রমাণ মিলল ঝালদায়। দলের গোঁজেরাই সমস্যা হতে পারে পুরভোটে, এই আশঙ্কা থেকে ঝালদায় দলের এক বিদায়ী কাউন্সিলর-সহ শহর কমিটির তিন নেতাকে বহিষ্কার করল কংগ্রেস। একই সঙ্গে প্রার্থী ঘোষণা, এমনকী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পার হয়ে গেলেও দলবদলও অব্যাহত পুরুলিয়ার এই প্রান্তিক পুর-এলাকায়।

ঝালদার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর রঘুনন্দন দাস, প্রাক্তন কাউন্সিলর চিরঞ্জিব চন্দ্র ওরফে শ্যাম এবং সুদীপ কর্মকার—এই তিন নেতাকে বহিষ্কারের কথা লিফলেট বিলির মাধ্যমে ঘোষণা করেছে ঝালদা টাউন কংগ্রেস। দলের জেলা সভাপতি তথা ঝালদার বাসিন্দা নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘ওই তিন জন আমাদের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর জন্যই তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’’ বস্তুত, পুরভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বেশ কয়েক জন নেতা তাঁদের দলে যোগ দেওয়ায় ঝালদায় ভাল ফল করার ব্যাপারে এ বার আশাবাদী স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই অবস্থায় দলের যে-সব বিক্ষুব্ধ গোঁজ প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, তাঁরা যাতে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে না পারেন, সেই আশঙ্কা থেকেই ঝালদার রাজনীতিতে পরিচিত মুখ ওই তিন জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।

রঘুনন্দন দাস কিন্তু ঝালদা পুর-রাজনীতিতে খুবই পুরনো মুখ। ১৯৭১ সাল থেকে মোট পাঁচ বার কংগ্রেসের হয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। তিন-তিন বার ঝালদার পুরপ্রধানের দায়িত্বও সামলেছেন। এ বারও তিনি টিকিটের দাবিদার ছিলেন। দল টিকিট না দেওয়ায় এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তিনি নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন পাশের ১ নম্বর ওয়ার্ডে। রঘুনন্দনবাবুর কথায়, ‘‘আমি তো আজকের নই। ঝালদার মানুষ আমাকে জানেন। টিকিট আমারই প্রাপ্য ছিল। দল যখন আমাকে বঞ্চিত করল, তখন নির্দল হয়ে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।’’ বহিষ্কারের প্রসঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘শুনেছি। তবে, এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ অন্য দিকে, চিরঞ্জীব চন্দ্র ২০০৫ সালের পুরভোটে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের বার ভোটে চিরঞ্জীববাবুর মা মায়ারানি চন্দ্রও এই ওয়ার্ড থেকে নির্দল হিসেবেই জেতেন। পরবর্তী কালে তাঁর দু’জনেই তৃণমূলে চলে যান। কিন্তু কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকারের সঙ্গে বিরোধের জেরে মা-ছেলে ফের তৃণমূল ছাড়েন।

কিছুদিন আগে চিরঞ্জীববাবু কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। এ বার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে টিকিটের দাবিদার ছিলেন তিনি। টিকিট না পেয়ে নিজে প্রার্থী হয়েছেন নির্দল হয়ে। তিনি বলেন, ‘‘আমি টিকিটের দাবিদার ছিলাম। দল যখন দিল না, তখন বাধ্য হয়েই নির্দল হিসাবে দাঁড়ালাম। আমার এলাকার কংগ্রেস কর্মীরাই আমাকে প্রার্থী হতে বলল বলেই ভোটে লড়ছি।’’ বহিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এখনও আমাকে কোনও শো-কজের চিঠি দেওয়া হয়নি।’’ সুদীপ কর্মকার অবশ্য ২০০৫-এ কংগ্রেসের টিকিটেই জয়ী হয়েছিলেন ৫ নং ওয়ার্ড থেকে। ওই ওয়ার্ড এ বার মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি চেয়েছিলেন মাকে প্রার্থী করতে। কিন্তু দল এই ওয়ার্ডে অনিতাদেবী শর্মা নামে এক জনকে প্রার্থী করায় সুদীপবাবুর মা জয়শ্রী কর্মকার ওই ওয়ার্ডেই নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সুদীপবাবু নিজে অবশ্য অন্য কোনও ওয়ার্ডে প্রার্থী হননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এত দিন ওয়ার্ড সামলেছি। এখন টিকিট অন্য কেউ পেলে, তা তো মানা যায় না!’’

ও দিকে, মনোনয়নপর্ব শেষ হওয়ার পরেও দলবদল অব্যাহত রয়েছে ঝালদায়। বুধবার সরোজ মুখোপাধ্যায় ও জগন্নাথ রজক নামে এলাকার দুই তৃণমূল নেতা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। জগন্নাথবাবু ছিলেন ঝালদা শহর কমিটির কার্যকরী সভাপতি। সরোজবাবু ছিলেন ওই কমিটিরই আহ্বায়ক। জগন্নাথবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা কংগ্রেসেই ছিলাম। পরে তৃণমূলে যাই। কিন্তু, ঝালদায় এখন দলের সংগঠনের ছন্নছাড়া অবস্থা। নেতৃত্বের কোনও নজর নেই। বারবার বলেও ফল হচ্ছে না। ওয়ার্ড স্তরে কর্মীর অভাব। সকলেই নেতা! এ ভাবে কি চলতে পারে? তাই তৃণমূল ছাড়ার কথা ভাবতে বাধ্য হলাম।’’ একই কথা জানিয়েছেন ঝালদার প্রাক্তন উপপুরপ্রধান সরোজবাবুও। যদিও ঝালদার তৃণমূল নেতা বিজন ঘোষ বলেন, ‘‘এই দু’জনেই আসলে পুরভোটে টিকিট চেয়েছিলেন। কিন্তু, এ বার আমরা সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম, পুরনো কাউকেই টিকিট দেওয়া হবে না।’’ এ কথা অস্বীকার করে সরোজবাবুর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘টিকিটের বিষয়টি সামনে এনে নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন উনি। আমি চাইলে নির্দল হয়েই দাঁড়াতে পারতাম।’’

পুরুলিয়ায় আবার কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন শহর কংগ্রেস সভাপতি কালীশঙ্কর আচার্য। বুধবার তাঁরা শহরে সেচমন্ত্রী তথা দলের তরফে পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় যোগ দেন। পুরুলিয়া শহর কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বরূপ পট্টনায়কের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার কাছে এ রকম কোনও খবর নেই। কালীশঙ্করবাবু বেশ কিছুদিন দলের সঙ্গে নেই। আর ৯ নম্বর ওয়ার্ড এ বার সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় প্রদীপবাবুকে ওই ওয়ার্ডে টিকিট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর সুপারিশ মতোই প্রার্থী করা হয়েছে। তার পরেও উনি দল ছাড়লেন। কিন্তু, তাতে আমাদের দলে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

congress Jhalda municipal election purulia Raghunath das Trinamool Pradip bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy