Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উঠোনে বাঘ! দম্পতির দাবি

কিছু দিন আগেই ওই এলাকার জঙ্গলে ড্রোন উড়িয়ে বাঘের তল্লাশি চালায় জেলা পুলিশ ও বন দফতর। যদিও ড্রোনে বাঘের ছবি ধরা পড়েনি।

এখানেই: হিমাংশু ও অঞ্জনা দেখাচ্ছেন কোথায় ছিল বাঘ। নিজস্ব চিত্র

এখানেই: হিমাংশু ও অঞ্জনা দেখাচ্ছেন কোথায় ছিল বাঘ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিমলাপাল শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৬
Share: Save:

এত দিন কেবল পায়ের ছাপ দেখেই জল্পনা ছড়াচ্ছিল। এ বার বাড়ির উঠোনে তাকে পায়চারি করতে দেখা গেল বলে দাবি করলেন এক দম্পতি। বুধবার রাতের ওই দাবিকে ঘিরে রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য আরও ঘনীভূত হল সিমলাপালের পিঠেবাকড়া গ্রামে। যদিও ডিএফও (বাঁকুড়া দক্ষিণ) দেবাশিস মহিমা প্রসাদ প্রধানের দাবি, ‘‘রাতেই বন আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। পায়ের ছাপ দেখে তাঁদের মনে হয়েছে, ওটা অন্য কোনও জন্তুর। বাঘের নয়।’’

পিঠেবাকড়া গ্রামটি সিমলাপাল ব্লক ও থানা এলাকার মধ্যে পড়লেও বন দফতরের সারেঙ্গা রেঞ্জের মধ্যে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরেই পিঠেবাকড়া ও নেকড়াতাপলের জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে বলে গ্রামবাসী দাবি করছিলেন। যদিও সেই ছাপ অস্পষ্ট বলে পরীক্ষা করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছিল বন দফতর। তবে বন দফতর বা পুলিশ প্রশাসন বসে থাকেনি।

কিছু দিন আগেই ওই এলাকার জঙ্গলে ড্রোন উড়িয়ে বাঘের তল্লাশি চালায় জেলা পুলিশ ও বন দফতর। যদিও ড্রোনে বাঘের ছবি ধরা পড়েনি।

তারপর থেকে এলাকায় বাঘ নেই বলেই বন দফতরের কর্তারা দাবি করছিলেন। কিন্তু জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের ভীতি অবশ্য তাতে যে বিশেষ কেটেছে এমনটা নয়। এরই মধ্যে বুধবার মাঝ রাত থেকে ওই এলাকায় বাঘের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

পিঠেবাকড়া গ্রামের দম্পতি হিমাংশু রায় ও অঞ্জনাদেবীর দাবি, রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ তাঁরা বাড়ির উঠোনে একটি বাঘকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন।

হিমাংশুবাবু পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘‘রাতে স্ত্রী বাইরে বের হওয়ার জন্য দরজা সামান্য ফাঁক করতেই দেখে উঠোনে একটি বাঘ ঘুরছে। আমিও দেখি। ভয়ে ঘায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। প্রথমে গলা গিয়ে আওয়াজ বেরোয়নি। হুঁশ ফিরতেই দরজা আটকে দু’জনে প্রাণের ভয়ে চিৎকার জুড়ে দিই।’’

তাঁদের দাবি, গ্রামবাসীর হইচই শুনে বাঘটি দৌড়ে জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়।’’

হিমাংশুবাবুদের চিৎকারে কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামের লোকজন সেখানে জড়ো হয়ে যান। সকলকে ঘটনার কথা জানান ওই দম্পতি। খবর যায় বন দফতরে। সারেঙ্গা রেঞ্জের আধিকারিকদের সঙ্গে সিমলাপাল থানার পুলিশ কর্মীরাও এসে উপস্থিত হন ওই দম্পতির বাড়িতে। রাতভর বন দফতরের লোকজন ওই গ্রামেই ছিলেন। সারেঙ্গার রেঞ্জ অফিসার বাসুদেব রাজওয়াড়ির দাবি, ‘‘বাঘের খোঁজে বৃহস্পতিবার দিনভর পিঠেবাকড়ার জঙ্গলে চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়েছে বন দফতরের তরফে। কিন্তু কোথাও বাঘের দেখা মেলেনি। তবে রাতে ঘটনাস্থলে একটি পশুর পায়ের চিহ্ন নজরে পড়ে বন দফতরের কর্মীদের। তবে সেটি বাঘের পায়ের ছাপ কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নই আমরা।’’

তবুও এলাকায় বাঘের উপস্থিতি মানতে নারাজ বন দফতর। রেঞ্জ অফিসারের দাবি, ‘‘যেখানে বাঘটি ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, তার পাশেই বাঁধা ছিল একটি গরু। বাঘ এসে থাকলে ওই গরুকে আক্রমণ করার কথা। কিন্তু তা তো হয়নি।” তিনি যুক্ত করেন, “দিনভর বন দফতরের কর্মীরা জঙ্গলে চিরুনি তল্লাশি চালালেও কোথাও বাঘের দেখা মেলেনি। অন্য কোনও জীবজন্তু আক্রমণের মুখে পড়েছে, এমন ঘটনাও নজরে আসেনি।”

যদিও এই ঘটনার পরে গ্রামবাসীদের মনে আতঙ্ক অনেক বেড়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন কৌতূহলী লোকজন। ওই দম্পতিও তাঁদের নিজেদের অভিজ্ঞতা বলে যান। অনেকেই বন দফতরের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বলরাম সিংহ মহাপাত্র বলেন, “বাঘের ভয়ে আমরা কাবু হয়ে রয়েছি। এত দিন তো শুধু পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছিল। এ বার বাড়ির উঠোনেও হেঁটে বেড়াচ্ছে বাঘ! বন দফতরের উচিত যে ভাবেই হোক বাঘ ধরা। কিন্তু সে উদ্যোগ কোথায়?’’

ডিএফও (বাঁকুড়া দক্ষিণ) দাবি করেন, “বাঘের খোঁজে ড্রোন ওড়ানো হয়েছে। জঙ্গলের ভিতরে বন দফতরের কর্মীরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। কিন্তু কোথাও বাঘ দেখা যাচ্ছে না। বন দফতরের কর্মীরা সব রকম ভাবে সক্রিয় রয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE