Advertisement
E-Paper

১০-০, জয়পুর পেল তৃণমূল

অঙ্কটা শুরু হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরনোর সময়ে। তখন জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনের মধ্যে ৯টি করে পেয়েছিল তৃণমূল আর বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫
জয়পুর ব্লক অফিসে ঢুকছেন বিজেপির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার।  নিজস্ব চিত্র

জয়পুর ব্লক অফিসে ঢুকছেন বিজেপির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত সমিতিতে কংগ্রেসের টিকিটে জেতা একমাত্র সদস্যের নাম সভাপতি পদের জন্য প্রস্তাব করল তৃণমূল। পুরুলিয়ার জয়পুরে ১০-০ ভোটে জিতে গেলেন তিনিই। ‘‘শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় অদ্ভুতুড়ে সিরিজের গল্পে যেটাকে বলেন, ‘এক গাল মাছি’— আমাদের অবস্থা হয়েছিল ঠিক তেমনটাই’’, বলছিলেন ওই এলাকার বিজেপির এক নেতা।

কেন? অঙ্কটা শুরু হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরনোর সময়ে। তখন জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনের মধ্যে ৯টি করে পেয়েছিল তৃণমূল আর বিজেপি। একটি করে পায় কংগ্রেস, সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক। গোলমালের আশঙ্কায় বোর্ড গঠন ছিল বন্ধ। সেই সময়টায় কোনও দলবদলও হয়নি এখানে। বিজেপি দাবি করেছে, এ দিন সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্যদের সমর্থন পাওয়ার কথা ছিল তাঁদের।

বোর্ড না হওয়ায় সর্বদল বৈঠক করে ওই সমিতিতে বিজেপি এবং তৃণমূলের দলনেতা ঠিক করা হয়েছিল। বিজেপির দলনেতা সঞ্জীব মাহাতোর দাবি, বৃহস্পতিবার তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত সভাপতির আসনে তাঁরা সতন বাউড়ির নাম প্রস্তাব করেন। তৃণমূল প্রস্তাব করে কংগ্রেসের বিন্দুবালা কর্মকারের নাম। সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিডিও (আড়শা) অমিত গায়েন। তিনি জানান, ব্যালটে ভোট হবে। সঞ্জীবের দাবি, ব্যালট জমা দিতে হচ্ছিল বিডিও-র হাতেই। প্রথমে ভোট দিতে ডাকা হয় বিন্দুদেবীকে। সঞ্জীব বলেন, ‘‘উনি ভোট দিয়ে ফেরার পরে আবার ডেকে ব্যালটে সই করতে বলা হয়। আমরা দাবি করি, এক বার ভোট দিয়ে ফেললে আবার ব্যালট নেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে ভোটটাই বাতিল হয়ে যাবে।’’

তাঁর দাবি, বি়ডিও সেই যুক্তি মানতে চাননি। তাঁরা অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে ভোট বয়কট করার কথা বলেন। আর তার পরেই বিন্দুদেবীকে জয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হয়। বিডিও (আড়শা) অমিত গায়েন বলেন, ‘‘বিন্দু কর্মকার জয়পুর পঞ্চায়‌েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ১০-০ ভোটে। কিছু সদস্য ভোট দেননি। তৃণমূলের পিঙ্কি রাজোয়াড় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।’’

বিজেপি দাবি করছে, তাদের পক্ষে ১১ জন ছিলেন। সেই হিসাবে তৃণমূলের দিকে ১০ জন। তাহলে একটি ভোট নিয়েই তর্জা এতদূর গড়াতে দিলেন কেন? জয়পুরের বাসিন্দা, বিজেপির জেলা সম্পাদক রবীন সিংহদেও বলেন, ‘‘ভোট পরিচালনা করতে আড়শার বিডিওকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি নিজের এলাকার পঞ্চায়েত সমিতিও অনৈতিক ভাবে শাসকদলকে পাইয়ে দিয়েছিলেন। এ দিন গোড়াতেই বুঝেছিলাম, আমাদের দল ভাঙাতে না পেরে প্রশাসনকে কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল।’’

বিজেপি নেতৃত্বে টেনে আনছেন আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের প্রসঙ্গ। সেখানে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও তাদের ৫ প্রার্থীর ভোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় সভাপতির পদে বসেন তৃণমূলের প্রার্থী। রবীনবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিডিও সে বার বলেছিলেন তাঁর পেন দিয়ে ভোট দিতে হবে। এ বারও সেটাই হচ্ছিল।’’ তাঁর দাবি, সেই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের তরফে আদালতে যাওয়া হয়েছে। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন হঠাৎ করে এ দিন অন্য মহকুমার একটি ব্লক থেকে আধিকারিককে নিয়ে আসা হল সভা পরিচালনা করার জন্য?

উত্তরটা দিচ্ছেন এসডিও ঝালদা সুশান্তকুমার ভক্ত। তিনি বলেন, ‘‘সভার আগের দিন বিডিও (জয়পুর) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা সে কথা জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম। তাঁর নির্দেশ মতোই বদলি আনা হয়েছে।’’

বিজেপি দাবি করছে, সার্বিক ভাবেই এ বার জয়পুরে ভাল ফল করেছে তারা। সেখানে ৭টি পঞ্চায়েত। ৩টিতেই বোর্ড গড়েছে বিজেপি। দাবি করেছে, অন্য একটিতে সংরক্ষিত প্রধান পদের জন্য প্রার্থী না থাকলেও সেখানেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল তারা। তবে বোর্ডগঠন পর্বে পুরুলিয়ায় যে দু’টি মৃত্যু হয়েছে, দু’টিই এই জয়পুরে। ঘাঘরা পঞ্চায়েত এলাকায়। সেই গোলমালের পরেই জেলা জুড়ে বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত করে দিয়েছিল প্রশাসন। এ দিন কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়। সমিতির অফিসের সামনে প্রায় মাছি গলার জো ছিল না। দিনের শেষে সমিতির বাইরে কোনও গোলমাল হয়নি। তবে বিজেপি অভিযোগ করেছে, ভিতরে তাঁদের মারধর করা হয়েছে। বিজেপির মহিলা সদস্যদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে বিডিও-র নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে। তবে সেই অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ বা প্রশাসন।

আপাতত বিজেপি দাবি করেছে, এ দিনের ঘটনা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবে তারা। আর পুরুলিয়া জেলাপরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ভিতরে কী হয়েছে জানি না। শুধু বলতে পারি, বিজেপির নিজেদের ভিতরের কোন্দল কাজে লাগিয়ে আমরাই ক্ষমতায় এসেছি।’’

Panchayat TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy