Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পার্টি অফিস কংগ্রেসের হাতে, কোন্দলকে দুষছে তৃণমূল

পুরুলিয়া-বরাকর রাস্তার ধারে এত দিন তৃণমূলের দু’টি অফিস থাকলেও এটিই ছিল পুরনো। স্থানীয় সূত্রের খবর, তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ব্লকে দলের কর্মীদের একাংশই বেরিয়ে গিয়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

উল্লাস: নতুন পার্টি অফিসের সামনে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

উল্লাস: নতুন পার্টি অফিসের সামনে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪১
Share: Save:

ছিল তৃণমূলের পাটি অফিস। রাতারাতি তাই বদলে গেল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে। পুরুলিয়া ২ ব্লকের বোঙাবাড়ি এলাকার ঘটনা। পুরুলিয়া-বরাকর রাস্তার ধারে এত দিন তৃণমূলের দু’টি অফিস থাকলেও এটিই ছিল পুরনো। স্থানীয় সূত্রের খবর, তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ব্লকে দলের কর্মীদের একাংশই বেরিয়ে গিয়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত এই অফিস থেকেই ব্লক তৃণমূলের কাজকর্ম হয়েছে। কিন্তু পরের দিন বুধবার লোকজনের চোখে পড়ে পার্টি অফিসের মাথায় লেখা ‘ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়’ সাদা রং দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। বাইরের দেওয়ালে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির ফ্লেক্সের বদলে সেখানে রয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর ছবি। অফিসের ভিতরে যে সব কর্মীরা রয়েছেন, তাঁরা কেউ তৃণমূলের নাম করছেন না। বলছেন, তাঁরা সবাই কংগ্রেসের।

তাঁদের মধ্যে অনেক কর্মীরই অভিযোগ, তৃণমূলের ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিচুতলার কর্মীদের উপেক্ষা করে চলছেন। যে গুটিকয় নেতা গত বিধানসভা নির্বাচনেও দলবিরোধী কাজ করেছেন, এখন দলে তাঁরাই ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। অথচ জেলা নেতৃত্ব তাঁদের হাতেই ফের ক্ষমতার ব্যাটন তুলে দিচ্ছেন। জেলার শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানো স্বত্ত্বেও লাভ হয়নি বলে তাঁদের দাবি। তাই তাঁরা তৃণমূল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

এক কর্মীর কথায়, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ব্লকের ন’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সব ক’টিই ছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতেই দলের কাজকর্ম নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, বেনিয়মের অভিযোগ সরব হন দলের কর্মীদের একাংশই। কিন্তু তেমনই কিছু জনপ্রতিনিধিকে এ বারও দল নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

ব্লকের প্রবীণ তৃণমূল কর্মী হৃষিকেশ মাহাতো জানান, আগে এটি পুরুলিয়া ২ ব্লকের কংগ্রেসের অফিস ছিল। পরে ৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের অফিস হয়। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৯৮ সালে বামফ্রন্ট আমলে এই এলাকার রাঘবপুর পঞ্চায়েতের ২২টি আসনের মধ্যে আমরা ১৯টি পেয়েছিলাম। সেই সময় থেকেই আমরা সকলে তৃণমূলের কর্মী। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে দলেরই কিছু নেতা নাশকতা করে এখানে ভরাডুবি ঘটাল। অথচ তাঁরাই পরে গুরুত্ব পেলেন। জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে কংগ্রেসে ফিরলাম।’’

শুক্রবার এই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে দলীয় কর্মীরা উচ্ছ্বাস করছেন। তাঁদের অনেকেই সদ্য তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে এসেছেন। সুদীপ বলেন, ‘‘২০১২ সাল পর্যন্ত আমিও তৃণমূলে ছিলাম। আমার কংগ্রেসে ফেরার কারণ কারও অজানা নয়। বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে সবাই কংগ্রেসে ফিরছেন।’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, এই ব্লকে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথা শুনে সম্প্রতি দু’টি পার্টি অফিসের বদলে একটি থেকেই দলীয় কাজকর্ম সারার কথা বলে যান জেলা পর্যবেক্ষক তথা যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও দু’টি অফিস থেকেই কাজ চলছিল। এই ব্লকের তৃণমূল নেতা শ্রীকান্ত গড়াইয়ের দাবি, ‘‘তৃণমূলে থেকে আখের গুছিয়ে কিছু লোক এখন কংগ্রেসে চলে গিয়েছে।’’ দলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘ওই ব্লকে দলের কিছু কর্মীর ক্ষোভ ও অভিমান রয়েছে। তার ফলেই এমনটা হয়েছে। আমরা ওই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE