Advertisement
E-Paper

বিস্ফোরণে উড়ল তৃণমূলের অফিস

বিস্ফোরণের আওয়াজ বহু বার শুনেছেন খয়রাশোলবাসী। ফের শুনলেন সোমবার। বিস্ফোরণে ধূলিসাৎ হয়ে গেল তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। দিনের বেলায় ব্যস্ত খয়রাশোল-বাবুইজোড় সড়কের ঠিক পাশে এ ভাবে একটি ভবনকে গুড়িয়ে যেতে দেখে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৯
বিধ্বংসী: বিস্ফোরণের অভিঘাতে ভেঙে পড়েছে তৃণমূলের কার্যালয়। সোমবার খয়রাশোলের বড়রায়। নিজস্ব চিত্র।

বিধ্বংসী: বিস্ফোরণের অভিঘাতে ভেঙে পড়েছে তৃণমূলের কার্যালয়। সোমবার খয়রাশোলের বড়রায়। নিজস্ব চিত্র।

বিস্ফোরণের আওয়াজ বহু বার শুনেছেন খয়রাশোলবাসী। ফের শুনলেন সোমবার। বিস্ফোরণে ধূলিসাৎ হয়ে গেল তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। দিনের বেলায় ব্যস্ত খয়রাশোল-বাবুইজোড় সড়কের ঠিক পাশে এ ভাবে একটি ভবনকে গুড়িয়ে যেতে দেখে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।

সোমবার ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা ৪০ মিনিট। কাঁকরতলা থানা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বড়রায় তৃণমূলের অঞ্চল কার্যালয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। প্রায় ৯০০ বর্গফুটের ওই ভবনটি বন্ধ ছিল তখন। রাস্তাতেও তেমন লোক ছিল না। ঢালাই ছাদ ভেঙে পড়ে। গুড়িয়ে যায় দেওয়াল। লোহার দরজা, টিন, কাঠের টুকরো ৪০-৫০ মিটার দূরে ছিটকে যায়। এলাকাবাসীর বক্তব্য, রাস্তায় লোক থাকলে জখমও হতে পারতেন।

জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেছেন, ‘‘কেন, কী ভাবে এই বিস্ফোরণ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি লোকজন নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে। তাদেরই ছোড়া বোমায় দলীয় কার্যালয় ভেঙে পড়েছে।’’ এর পিছনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি তিনি। হামলাকারীদের মধ্যে মাওবাদীরাও ছিল বলে দাবি করেন অনুব্রত। তবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, গোটা ব্লকে একটিও আসনে বিজেপির কোনও প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করতে পারেননি। সেখানে বিজেপি কর্মীরা কী করে কাঁকরতলায় ঢুকে এ ভাবে বোমা মেরে পালিয়ে যেতে পারেন!

বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের মন্তব্য, ‘‘অনুব্রতবাবু লোক হাসাতে পারেন বটে! ওঁদের দলীয় কার্যালয় গুড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক নেই। এটা ওঁদের ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ এবং ব্লক কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল হক কাদেরীর দ্বন্দ্বের ফল।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘ফের প্রমাণিত হল, তৃণমূলের প্রতিটি কার্যালয় বোমা তৈরির কারখানা।’’ দিলীপবাবু আরও বলেন, ‘‘শুনেছি তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেছেন, ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি লোক ঢুকিয়েছে। তারাই বোমা মেরে গিয়েছে। আমার প্রশ্ন, উনি কি দিনেও গাঁজা খাচ্ছেন আজকাল?’’

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর মন্তব্য, ‘‘শাসক দল কি এখন বোমার কারবার করছে? রাজ্যের সব জায়গায় শুধু বোমা আর বোমা!’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এসে নাকি বোমা মেরেছে। তা হলে পুলিশ কী করছিল? আমাদের রাজ্যের নিরাপত্তার ভার কি এ বার ঝাড়খণ্ডকে দিতে হবে?’’

তৃণমূলের অন্দরমহলের কানাঘুষো, ১৪ সেপ্টেম্বর বড়রা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন। কার হাতে থাকবে এলাকার দখল, তা নিয়েই দুই নেতার অনুগামীদের বিবাদ চলছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ১৬ অগস্টও এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি হয়। এলাকা অশান্তই ছিল। দু’পক্ষের লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবেই ওই দলীয় কার্যালয়ে বোমা মজুত করা হয়েছিল বলে আড়ালে বলছেন তৃণমূলের স্থানীয় কয়েক জন নেতা।

বড়রায় তৃণমূলের দু’টি কার্যালয় রয়েছে। একটি শেখ মিরাজ ও উজ্জ্বল হক কাদেরীর দখলে। অন্যটি দীপক ঘোষের অনুগামী শেখ আজফর ওরফে কালোর অধীনে। এ দিন গুড়িয়েছে কালোর দখলে থাকা কার্যালয়ই। দীপকবাবু বলছেন, ‘‘এখন ওই কার্যালয়টি নতুন করে রং করা হলেও, সেটি আসলে কার্যকরী ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল হক কাদেরীদের হাতেই ছিল। বন্ধ দলীয় কার্যালয়ে কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটল, তা পুলিশই তদন্ত করে দেখুক।’’ অন্য দিকে উজ্জ্বলবাবু বলছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন আমি ওই কার্যালয় থেকে সরে এসেছি। প্রকৃত তদন্ত হলেই দেখা যাবে, ওই কার্যালয় আদতে কার দখলে ছিল।’’

এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, ওই রাস্তা দিয়ে লোক চলাচল বন্ধ করেছে পুলিশ। পৌঁছেছেন ডিএসপি (সদর) কাশীনাথ মিস্ত্রি। সঙ্গে বিশাল পুলিশ বাহিনী। তখনও পোড়া বারুদের গন্ধ টাটকা। পুলিশকর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, সম্ভবত ওই ভবনে সিঁড়ির নীচে সিমেন্টের বস্তার আড়ালে রাখা ছিল প্রচুর বোমা। তা-ও সংখ্যায় প্রায় তিনশোর কাছাকাছি। তাতেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। যার জন্য ওই ভবনের ছাদের সিলিং থেকে ভিত— সবই নড়িয়ে দিয়েছে।

বন্ধ ভবনে মজুত রাখা বোমা কী ভাবে ফাটতে পারে? পুলিশ সূত্রে খবর, কোনও বড় ইঁদুর বা ছোট কোনও প্রাণী ওই বোমার স্তূপের উপরে ঝাঁপালে এমন অসম্ভব নয়।

ঘটনাস্থল থেকে শ’দেড়েক মিটার দূরের একটি বাড়ির এক বৃদ্ধা বললেন, ‘‘বাড়ির দাওয়ায় মাদুরে বসেছিলাম। প্রচণ্ড শব্দে ছিটকে পড়ি। অনেক ধোঁয়াও ছিল আশপাশে।’’ যদিও তিনশো মিটার দূরের বড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা বড়রা তৃণমূল অঞ্চল কমিটির সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী বলেন, ‘‘তেমন শব্দ তো পাইনি! যারাই এমন করে থাকুক, যেন শাস্তি পায়।’’

Bombing Destroyed Party Office TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy