Advertisement
E-Paper

এ বার শুরু ‘জলে মারা’র চেষ্টা

ভোটের আগের দিনেই হুমকি এসেছিল, তৃণমূলকে ভোট না দিলে সাব-মার্সিবলের জল বন্ধ করে দেওয়া হবে। ভোট মিটতেই বাসিন্দারা দেখলেন হুমকিই সত্যি। সাবমার্সিবলের দরজায় মস্ত তালা। জল সরবরাহ বন্ধ।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৯
জলে নেমে তালা ভেঙে সাব-মার্সিবল চালু করলেন বিডিও। শুক্রবার রানিনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

জলে নেমে তালা ভেঙে সাব-মার্সিবল চালু করলেন বিডিও। শুক্রবার রানিনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভোটের আগের দিনেই হুমকি এসেছিল, তৃণমূলকে ভোট না দিলে সাব-মার্সিবলের জল বন্ধ করে দেওয়া হবে। ভোট মিটতেই বাসিন্দারা দেখলেন হুমকিই সত্যি। সাবমার্সিবলের দরজায় মস্ত তালা। জল সরবরাহ বন্ধ।

সোমবার থেকে টানা চার দিন জলের অভাবে রামপুরহাট থানার আয়াস পঞ্চায়েতের রানিনগর গ্রামের ডাঙাপাড়ার বাসিন্দারা তীব্র ভোগান্তিতে পড়লেও স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সাব-মার্সিবলের তালা খুলে দেয়নি। গ্রামবাসীরা শেষে বিডিও-র দ্বারস্থ হওয়ায় তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আকবর আলির মন্তব্য, ‘‘ওরা তো আমার কাছে জলের জন্য আসেনি। বিডিও কি ওদের জল খাওয়াবে?’’

সেটাই করে দেখালেন বিডিও। শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ রামপুরহাট ১ বিডিও নীতীশ বালা গিয়ে সেই তালা ভেঙে জল সরবরাহ চালু করলেন। সেখান থেকেই তিনি ওই দাপুটে তৃণমূল নেতাকে ফোন করে জানিয়ে দিলেন, তালা ভেঙে তিনি-ই জল চালু করে দিলেন। ওই নেতাকেই দায়িত্ব দিলেন, ‘‘দেখবেন এর পরে কোথাও যেন গণ্ডগোল না হয়।’’

ভোটের পরেই বিরোধীদের জব্দ করতে ‘জলে মারার’ এই উদ্যোগ শাসকদলে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকায় নিয়েছিল। রাজ্যে প্রথম দফা নির্বাচনের পরেই ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি এলাকায় নলকূপে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের পরের দিনই দাঁতন-২ ব্লকের তুরকা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কুসুমদা গ্রামের পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ায় সিপিএম সমর্থক কয়েকটি আদিবাসী পরিবারের বাস। মাটি খুঁড়ে সেখানে সজলধারা প্রকল্পের জলের লাইন কেটে দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।

বছর তিনেক আগে রানিনগর গ্রামে ওই সাব-মার্সিবল বসিয়ে জাঙাপাড়া ও পশ্চিমপাড়ায় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু ওই জল সরবরাহ এ বার বন্ধ করা হয়েছিল কেন? ডাঙাপাড়ার বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, এ বার বিধানসভা ভোটে ওই এলাকার কয়েকজন যুবক জোটের প্রার্থী কংগ্রেসের সৈয়দ সিরাজ জিম্মির হয়ে খাটাখাটনি করেন। সেই জন্য ভোটের আগের দিন এলাকার তৃণমূল নেতারা হুমকি দিয়ে যান, তৃণমূলকে ভোট না দিলে সাবমার্সিবলের জল বন্ধ করে দেওয়া হবে। এলাকার যুবক জাহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভোটের পরের দিন থেকে দেখা যায় সত্যিই সাব-মার্সিবল পাম্প হাউসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।’’ এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য ফরওয়ার্ড ব্লকের নাফিসজাহানের অভিযোগ, ‘‘ওই এলাকায় তৃণমূলের এ বার ভোট কম পড়েছে। সে জন্য তৃণমূল কর্মীরা সাবমার্সিবল পাম্প হাউসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর নেপথ্যে রয়েছেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা আয়াষ পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সদস্য আকবর আলি। বৃহস্পতিবার গ্রামবাসীরা রামপুরহাটের মহকুমাশাসক এবং রামপুরহাট ১ বিডিও-র কাছে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার লিখিত অভিযোগ জানান।

শুক্রবার এলাকায় গিয়ে দেখে যায়, পানীয় জলের অভাবে বাসিন্দারা বেজায় সমস্যায় পড়েছেন। ডাঙাপাড়ার গৃহবধূ মমতা বিবি, অনিমা লেটরা বলেন, ‘‘কে কাকে ভোট দিয়েছে সেটা তাঁদের ব্যাপার। এর জন্য জল বন্ধ হয়ে থাকবে কেন? অনেক বাড়িতে নলকূপ নেই। লোকের বাড়ি গিয়ে গিয়ে জল তুলতে কার ভাল লাগে?’’

কিছু গ্রামবাসী যখন জল সরবরাহ কবে চালু হবে সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, তখন আয়াষ পঞ্চায়েতে বসেছিলেন তৃণমূল নেতা আকবর আলি। তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার জন্য পাম্প হাউসে তালা লাগিয়েছেন আপনি? সরাসরি প্রশ্ন করতেই আকবর আলির জবাব, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। এলাকাতে তো তৃণমূলেরই ভোটার বেশি। ভোটের ফল বেরোলেই কাদের ভোট বেশি দেখা যাবে।’’ তাহলে তালা ঝোলালেন কেন? তাঁর যুক্ত, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরে কলের মুখগুলো কারা ভেঙে দিচ্ছিল। পঞ্চায়েত থেকে সেই কলের মুখ বেশ কয়েকবার লাগানো হয়। কিন্তু দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি। ভোটের আগেও কলের মুখ ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে ডাঙাপাড়ায় সব জল বেরিয়ে যাওয়ায় পশ্চিমপাড়ায় জল যাচ্ছিল না। তাই পাম্পহাউসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।’’ তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত তালা ঝুলবে। এরপরেই গ্রামবাসীর প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়া নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘হোক গা। ওরা বিডিও র কাছে অভিযোগ করেছে। আমার কাছে তো আসেনি। বিডিও কি ওদের জল খাওয়াবে?’’

আকবর আলির পক্ষ নিয়ে রানিনগরেরই কয়েকজন দাবি করেন, ডাঙাপাড়ার কয়েকজন কল খুলে পুকুর ভরিয়ে চাষের জন্য জল বিক্রি করছিল। তাঁদের দাবি, এর সঙ্গে কোনও রাজনীতির সম্পর্ক নেই। যদিও ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা বাবু সেখ, সাহিবুল শেখ, জাহিরুল ইসলামদের পাল্টা যুক্তি, ‘‘কলের মুখ খোলার জন্য আগেই জলের অপচয় হচ্ছিল। তখন তো পাম্প হাউসে তালা ঝোলানো হয়নি? রাজনীতি নয়তো এর আর কী কারণ থাকতে পারে?’’

ঘটনাচক্রে, এ দিনই দুপুরে রামপুরহাট ১ বিডিও নিতীশ বালা ওই গ্রামে গিয়ে পাম্প হাউসের বন্ধ তালা ভাঙার ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকেই তিনি তৃণমূল নেতা আকবর আলি কে ফোন করে বলেন, ‘‘তালা ভেঙে দিয়ে জল চালু করেদিলাম। দেখবেন এর পরে যেন কোথাও গণ্ডগোল না হয়।’’ আকবর বারবার কলের মুখ ভেঙে দেওয়ার কথা তাঁকে জানান। বিডিওর পরামর্শ, ‘‘আমাকে জানাবেন। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

TMC water supply election Block development officer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy