Advertisement
E-Paper

চিঠি গেল অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের

জয়চণ্ডী পাহাড় ও বড়ন্তি জলাধারকে ঘিরে পর্যটকদের এমনই অ্যাডভেঞ্চারের রোমাঞ্চ দিতে এ বার উঠেপড়ে লেগেছে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০১:১৩
বড়ন্তি: বিস্ময় সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। পর্যটক টানতে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন এর সঙ্গে যোগ করতে চাইছে রোমাঞ্চও। নিজস্ব চিত্র

বড়ন্তি: বিস্ময় সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। পর্যটক টানতে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন এর সঙ্গে যোগ করতে চাইছে রোমাঞ্চও। নিজস্ব চিত্র

টলটলে জলের সামনে অলস বসে থাকা নয়, খাড়া পাহাড়ের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকাও নয়। এ বার জলাশয়ের বুকে তুফান গতিতে বোট ছোটানো যেতে পারে। বুকে বল থাকলে পাহাড়ের ঢালে ওঠার ঝুঁকি নেওয়ার মজাও নেওয়া যাবে। জয়চণ্ডী পাহাড় ও বড়ন্তি জলাধারকে ঘিরে পর্যটকদের এমনই অ্যাডভেঞ্চারের রোমাঞ্চ দিতে এ বার উঠেপড়ে লেগেছে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন।

জয়চণ্ডী, গড়পঞ্চকোট ও বড়ন্তিতে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম গড়তে জেলা প্রশাসনের মারফৎ রাজ্যের পর্যটন দফতরের কাছে বিশদে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তারা। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘রাজ্য পর্যটন দফতরের কাছে রঘুনাথপুরের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম তৈরির প্রস্তাব পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যটন দফতর থেকে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে আশাবাদী আমরা।”

পুরুলিয়া সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলার পর্যটনস্থানগুলিকে ঘিরে ট্যুরিজম সার্কিট তৈরির তাঁর ইচ্ছের কথা বারবার জানিয়েছেন। ধাপে ধাপে সেই কাজ শুরু হয়েছে। একে একে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। গত কয়েক বছরে পুরুলিয়ার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়ে যাওয়াও ইঙ্গিত দিচ্ছে, পর্যটনের সুদিন ফিরছে।

সেই প্রেক্ষিতেই প্রশাসন রঘুনাথপুর মহকুমার ওই তিন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রকে আরও আকর্ষনীয় করতে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের পরিকল্পনা নিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম ধাপে রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড় ও সাঁতুড়ির বড়ন্তিতে এই প্রকল্প রূপায়িত করতে চাইছে তারা। পরের ধাপে পঞ্চকোটে রোপওয়ে চালুর ভাবনা রয়েছে তাদের। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছেন রঘুনাথপুর কেন্দ্রের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি।

কেমন হবে অ্যা়ডভেঞ্চার ট্যুরিজম?

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেকিং-এর জন্য জয়চণ্ডী বিখ্যাত। তাই এখানে সামঞ্জস্য রেখে কমান্ডো নেট, টায়ার ব্রিজ, বার্মা ব্রিজ, টায়ার ওয়াল, লগ ব্রিজ, ফ্রেন্ডশিপ ল্যাডার, স্যুইংগিং বিম, হ্যাংগিং টায়ার, মাল্টি লাইন ব্যালান্সের মতো ১৬ ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের ইভেন্ট রাখার ভাবনা রয়েছে।

বড়ন্তি লাগোয়া রামচন্দ্রপুর তথা মুরাডি জলাধারেও অ্যাডভেঞ্চার ওয়াটার স্পোর্টস তৈরিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানে বড় জেটি তৈরি করে যন্ত্রচালিত বিভিন্ন ধরনের নৌকা চালানোর ব্যবস্থা করারও ইচ্ছে রয়েছে। জলে অ্যাডভেঞ্চারের জন্য আট ধরনের বোট নামানোর ভাবনা রয়েছে। নৌকার আরোহীদের জীবন রক্ষার জন্য লাইফ জ্যাকেট রাখা থাকবে।

মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় জানান, পর্যটকদের অনেকেই নিখাদ সৌন্দর্য উপভোগ করা ছাড়াও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমেরও মজা নিতে চাইছেন। তাই প্রাথমিক ধাপে জয়চণ্ডী পাহাড় ও বড়ন্তির জলাধারে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম চালু করতে চাইছি আমরা। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে (পিপিপি মডেল) পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার পরে বেড়াতে আসা লোকজনের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে জয়চণ্ডী ও বড়ন্তিতে। পিপিপি মডেল বা সমবায়ের মাধ্যমে আমরা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে আগ্রহী।’’

পর্যটনের মরসুমের গোড়াতেই রাজ্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করে খসড়া তৈরি করে মহকুমা প্রশাসন। সেখান থেকে বাছাই করা প্রস্তাব ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জেলাশাসকের টেবিলে পৌঁছয়। সূত্রের খবর, জয়চণ্ডী ও বড়ন্তিতে এই অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম গড়তে প্রায় পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ লক্ষ টাকার প্রয়োজন।

পর্যটন দফতর থেকে অর্থ পেতে সমস্যা হলে এই অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম রূপায়ণে পিপিপি মডেলে করার বিকল্প রাস্তা ভেবে রেখেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম তৈরির জন্য অর্থের পরিমাণ খুব বেশি নয়। পিপিপি মডেলেও এই প্রকল্প রূপায়িত করা সম্ভব।” তবে এখনই পিপিপি মডেলে রঘুনাথপুরে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম প্রকল্প রূপায়ণের পথে তাঁরা যেতে চাইছেন না বলে জানাচ্ছেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। তিনি বলেন, ‘‘রঘুনাথপুরের দুই পর্যটনকেন্দ্র অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম তৈরির প্রকল্পে অর্থের পরিমাণ খুব বেশি নয়। রাজ্য পর্যটন দফতর থেকেই ওই অর্থ পাওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। অর্থ বরাদ্দ হলেই আমরা দ্রুত পরিকাঠামো তৈরি করে দেব। প্রকল্প চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংস্থাকে দিয়ে।”

Raghunathpur Tourist Spot Holiday Destination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy