উড়ালপুলে যাত্রিবাহী বাস ও লোহার রড বোঝাই ট্রেলারের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক শিশুর। জখম হলেন ১৩ জন। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়কে, পুরুলিয়া শহরের মুখে। গুরুতর আহত হুড়ার হিজুলির বাসিন্দা তসমিনা খাতুনকে (৭) বোকারো নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহতদের বেশির ভাগই বাসের যাত্রী। ট্রেলারের চালকও জখম হয়েছেন।
স্থানীয়েরাই প্রথমে উদ্ধারে হাত লাগান। আহতদের সকলকেই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আট জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের মধ্যে ওই শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু বোকারোর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে শিশুটি মারা যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ পুরুলিয়া থেকে সোনাথলি যাচ্ছিল বাসটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, শহরের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে সবে বাসটি উড়ালপুলের মুখে উঠেছে, সে সময় উল্টোদিক থেকে লোহার রড বোঝাই একটি ট্রেলার আসছিল।
তার আগেই বৃষ্টি হওয়ায় উড়ালপুলের রাস্তা কিছুটা পিচ্ছিল ছিল। ট্রেলারটি উড়ালপুলের ঢালু দিক দিয়ে নামার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটির একপাশে ধাক্কা মারে। বাসটি কাত হয়ে উড়ালপুলের রেলিঙে আটকে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রেলারটি উড়ালপুলের উপর থেকে ছিটকে প্রায় ১৫ ফুট নীচে পড়ে যায়। ট্রেলারের চালকও কেবিনে বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জীতেশ দুবে বলেন, ‘‘একটু আগেই বৃষ্টি হচ্ছিল। আচমকা বাজ পড়ার মতো প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পাই। দেখি একটা ট্রেলার উড়ালপুল থেকে ছিটকে নীচে পড়ে গেল। রেলিঙে আটে যাওয়া বাসের ভিতর থেকে যাত্রীরা ভয়ে খুব চিৎকার করছিলেন। আমরা সবাই উদ্ধারে দৌড়ে যাই।’’ খবর পেয়ে কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ কর্মীরা।
বাসের যাত্রী চণ্ডীদাস কুম্ভকার বাঁ দিকে বসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ছিলাম বাসের পিছনের দিকে। বাসটা সবে উড়ালপুলে উঠতে শুরু করেছিল। আচমকা প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে। প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। দেখি বাসটা কেমন কাত হয়ে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখি একটা ট্রেলার উড়ালপুলের উপর থেকে নীচে আছড়ে পড়ল। আতঙ্কে বাসের যাত্রীরা সবাই চিৎকার করছিলেন। বাসটা নীচে পড়ে গেলে না জানি কী হত!’’
সন্ধ্যায় হাসপাতালে আহতদের দেখতে আসেন কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। তিনি বলেন, ‘‘বাসে থাকা যাত্রীদের অনেকেই কাশীপুর ও সোনাথলি এলাকার। তাই দেখতে এসেছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে ট্রেলারটির গতি বেশি থাকার ফলেই নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। উড়ালপুলের নীচেই রয়েছে রেল লাইন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, উড়ালপুলের আরেকটু উপরে দুর্ঘটনাটি ঘটলে তা আরও ভয়াবহ হতে পারত।