পুরুলিয়া জেলা পরিষদের কাজকর্মকে ঘিরে অসন্তোষ ছড়াচ্ছে শাসক দলের অন্দরে। এত দিন তা আড়ালে আবডালে থাকলেও ক্রমেই তা প্রকাশ্যে আসছে। খোদ জেলা সভাধিপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অসন্তোষ রয়েছে পরিষদের সদস্যদের একাংশের মধ্যে। আর সে-সব নিয়েই রবিবার জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে দেখা করলেন দলের বেশির ভাগ জেলা পরিষদ সদস্য।
৩৮ আসন বিশিষ্ট জেলা পরিষদে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা ৩১। তৃণমূল সূত্রের খবর, রবিবার বিকেলে দলের জেলা দফতরে জেলা পরিষদের ৩১ জনের মধ্যে ২০ জন সদস্যই তাঁদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে শান্তিরামবাবুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন পাঁচ জন কর্মাধ্যক্ষও। জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে সদস্যেরা জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের দিন স্থির করেছিলেন।
সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর বিরুদ্ধে জেলা পরিষদের সদস্যদের এক বড় অংশের ক্ষোভ অবশ্য নতুন নয়। গত ১১ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছিলেন। সেই সময়ও জেলা পরিষদের কয়েক জন সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দলনেত্রীর হাতে তুলে দেন এক কর্মাধ্যক্ষ। দল সূত্রের খবর, নেত্রী চিঠি কী বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়ায়, সংশ্লিষ্ট কর্মাধ্যক্ষ তাঁকে জানান, জেলা পরিষদ পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে একাধিক সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষের আপত্তি ও অভিযোগ রয়েছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছিল, সভাধিপতি নিজের ইচ্ছেয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কাজকর্মের বিষয়ে বেশ কিছু দফতরের কর্মাধ্যক্ষদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না। সব শুনে তৃণমূল নেত্রী সৃষ্টিধরবাবুকে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার নির্দেশ দিয়ে যান।
ওই ঘটনার প্রায় দেড় পরেও যে সভাধিপতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ কমেনি সদস্যদের একাংশের, তা স্পষ্ট রবিবারের বৈঠকে। সূত্রের খবর, বৈঠকে উপস্থিত জেলা পরিষদের সদস্যেরা শান্তিরামবাবুর কাছে অভিয়োগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী সভাধিপতিকে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে পরিষদের কাজকর্ম পরিচালনা করতে বললেও তিনি ‘এক তরফা’ ভাবেই কাজ চালাচ্ছেন। এক সদস্য বলেন, তাঁর এলাকায় জেলা পরিষদের কাজ হচ্ছে অথচ তাঁর কাছে কোনও খবর নেই। উন্নয়নের কাজের টেন্ডার নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগেও সরব হন একাধিক সদস্য। এক জন ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘নির্বাচিত সদস্যের গুরুত্ব থাকবে না, কর্মাধ্যক্ষেরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অন্ধকারে থাকছেন। এ ভাবে চলতে পারে না। আপনাকে (জেলা সভাপতি) হস্তক্ষেপ করতে হবে।’’ না হলে তাঁরা যে ফের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন, তা-ও জেলা সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছেন একাধিক পরিষদ সদস্য। বৈঠকের পরে কয়েক জন সদস্য বলেন, ‘‘জেলা সভাপতি কিছুদিন সময় চেয়েছেন। দেখি, অবস্থার পরিবর্তন হয় কিনা।’’
প্রকাশ্যে অবশ্য কোনও সদস্য কর্মাধ্যক্ষই বৈঠক নিয়ে বিশদে কিছু বলতে রাজি হননি। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বৈঠক আমাদের নিজস্ব কিছু বিষয় নিয়ে। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’’ শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুষেণচন্দ্র মাঝি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ পরিচালনা নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। সবই তাঁকে জানানো হয়েছে।’’ জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠক ডাকলেও তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বৈঠকে থাকতে পারিনি। তবে, শুনেছি জেলা পরিষদের কিছু সদস্যের সভাধিপতির কাজকর্মকে ঘিরে কিছু অসন্তোষ রয়েছে। কারও কোনও বক্তব্য থাকতেই পারে। এটি দলীয় বিষয়, মন্তব্য করব না।’’
সভাধিপতিকে ঘিরে অসন্তোষের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়েছেন শান্তিরামবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে জেলা পরিষদের কাজকর্মে আরও গতি আনা যায়, তা নিয়েই রবিবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’’ কী বলছেন সভাধিপতি নিজে? সৃষ্টিধর মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘এ রকম (তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষ বা ক্ষোভের) কোনও খবর আমার কাছে নেই। তবে কারও কিছু বক্তব্য থাকতেই পারে। জেলা পরিষদের প্রত্যেক সদস্য এবং কর্মাধ্যক্ষ আমার সহকর্মী। জেলা সভাপতি আমাকে যদি বলেন, কোথাও কাজে কোনও ভুল হচ্ছে বা এই কাজটা এ রকম করে করতে হবে, আমি সে-ভাবেই করব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটা কটা টিমওয়ার্ক। আমি সকলকে নিয়েই চলতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy