Advertisement
E-Paper

তৃণমূল কর্মীকে রডের ঘা

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৈঠক করে যাওয়ার পরেই এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠল গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া শহরের উপকণ্ঠে পোয়াবাগান এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলের ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:৩৮
জখম: বুথ সভাপতি বুদ্ধদেব ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

জখম: বুথ সভাপতি বুদ্ধদেব ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৈঠক করে যাওয়ার পরেই এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠল গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া শহরের উপকণ্ঠে পোয়াবাগান এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলের ঘটনা। ওই অভিযোগে রাতেই পুলিশ দুই বিজেপি কর্মীকে আটক করে। আর এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই এলাকার দুই পঞ্চায়েত স্তরের বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন। সব মিলিয়ে এই ঘটনাপ্রবাহে সরগরম বাঁকুড়া।

বস্তুত, মনোনয়ন পর্বে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠে এলেও অন্য নজির গড়েছিল বাঁকুড়া ১ ব্লক। এখানে শাসক বা বিরোধী কোনও শিবির থেকেই এত দিন একটিও অভিযোগ ওঠেনি। যার ব্যতিক্রম ঘটে গেল বৃহস্পতিবার।

ওই দিন দুপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বাঁকুড়া ১ ব্লকের পোয়াবাগানে দলীয় প্রার্থী ও কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। আর বিকেলেই বাঁকুড়া ১ ব্লকের জগদল্লা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝরিয়া বুথের তৃণমূল সভাপতি বুদ্ধদেব ঘোষকে মদের ভাঙা বোতল ও রড নিয়ে মারধর করে খুনের চেষ্টার অভিযোগে নাম জড়াল বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। তিনি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বুদ্ধদেববাবু সাইকেল নিয়ে পোয়াবাগান-রাজগ্রাম রাস্তা ধরে বাজার করতে যাচ্ছিলেন। তৃণমূলের অভিযোগ, সেই সময় বিজেপির লোকজন রাস্তা আটকে তাঁর উপরে হামলা চালায়। মদের বোতল ভেঙে দুষ্কৃতীরা তাঁর মাথায় মারে ও পেটে ঢোকানোর চেষ্টা করে। রড দিয়েও বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চোট পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপরেই হামলাকারীরা চম্পট দেয়। পরে খবর পেয়ে তৃণমূলের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যান। রাতেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে বাঁকুড়া সদর থানায় ১২ জন বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ দায়ের করা হয়।

তৃণমূলের বাঁকুড়া ১ ব্লক সভাপতি ধবল মণ্ডলের অভিযোগ, “পরিকল্পিত ভাবে বিজেপি কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে। ওদের রাজ্য সভাপতি সকালে এলাকায় এসে সভা করে আমাদের উপরে হামলা চালানোর জন্য উস্কানি দিয়ে গিয়েছেন। সেই নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে।” তাঁর দাবি, বুদ্ধদেববাবু ঝরিয়া বুথের জনপ্রিয় তৃণমূল কর্মী। ওই এলাকায় ভোটে হার নিশ্চিত জেনেই উত্তেজনা ছড়াতে বিজেপি হামলা চালিয়েছে। জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “বিজেপি যে দুষ্টু লোকেদের আখড়া হয়ে উঠেছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। এর প্রতিবাদেই ওই এলাকার দু’জন বিজেপি প্রার্থী এ দিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘দোষ করলে সাজা পেতেই হবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতির উস্কানিতে যে ঘটনা ঘটল, তা মানুষ মেনে নেবেন না।”

এ দিকে তাঁদের দলের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করে পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করানোর অভিযোগ তুলেছেন দলের রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার। তিনি দাবি করেন, “মনোনয়ন পর্বে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ‘জয় শ্রীরাম’ জিগির তুলে বিরোধীদের মারধর করে নিজেদের অপকর্ম বিজেপির ঘাড়ে চাপানোর কৌশল নিয়েছিল। আর এখন নিজেরাই দলের কর্মীদের পিটিয়ে বিজেপির প্রার্থীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশি চাপ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাচ্ছে।”

তিনি জানান, জগদল্লা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের যে দুই বিজেপি প্রার্থী এ দিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন, তাঁদের নামেও অভিযোগে রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এ দিন সকাল থেকে পুলিশ ওই দুই প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে মনোনয়ন না তুললে গ্রেফতার করার হুমকি দিচ্ছে। সেই ভয়েই প্রার্থীরা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।’’

দলের রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগও মানতে চাননি সুভাষবাবু। এ দিন তিনি দলের কর্মীদের নিয়ে বাঁকুড়া সদর থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। থানা থেকে বেরিয়ে সুভাষবাবু দাবি করেন, “পুলিশ আমাদের যে দুই কর্মীকে আটক করেছে, তাঁদের থানাতেও নিয়ে আসেনি, আদালতেও পাঠায়নি। ওদের কোনও হদিসই পাচ্ছি না।”

তবে জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন তোলানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা।’’

Beating BJP Friends
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy